বুধবার, ৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

যেমন বোলিং তেমন ব্যাটিং

মেজবাহ্-উল-হক

যেমন বোলিং তেমন ব্যাটিং

আয়ারল্যান্ডের উইকেটে সাধারণত সবুজ ঘাস থাকে। কিন্তু সামনের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের ব্যাটিং স্বর্গে। তাই প্রস্তুতির কথা চিন্তা করে আইরিশরাও ত্রিদেশীয় সিরিজের উইকেট বানিয়েছে ব্যাটিং প্যারাডাইস। আর প্রথম ম্যাচে তাদের বিরুদ্ধেই কিনা উদ্বোধনী জুটির বিশ্বরেকর্ডে (৩৬৫ রানের জুটি) ৩৮১ রানের স্কোর করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ক্যারিবীয়দেরই কাল মাত্র ২৬১ রানে আটকে দিয়ে বোলিং দাপট দেখালেন মাশরাফিরা। তারপর তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটের সহজ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে শুরুটা দারুণ হলো বাংলাদেশের।

টাইগারদের বোলিং যেমন চমৎকার হয়েছে, ব্যাটিংও ছিল দুর্দান্ত!

তামিম-সৌম্যর ১৪৪ রানের নান্দনিক জুটি। ওপেনারের মাঝে অসাধারণ বোঝাপড়া। সৌম্য যখন বাইশগজে দ্রুত রান তুলছিলেন তখন তামিম যেন নিজেকে সংযত রাখেন। টার্গেট খুব বড় ছিল না। মাত্র ২৬২। তবে সৌম্য শুরু থেকে মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন ঠিক তার স¦ভাবজাত ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শন করে। ৪৭ বলে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন।

দুই ওপেনার মিলে ১৮.৪ বলে দলীয়ভাবে ১০০ রান করেন। হাফসেঞ্চুরির পর সৌম্য আরও বেশি মারমুখী হতে চেয়েছিলেন। তাই বলে ভুল শট খেলছিলেন এমন নয়। বল দেখেশুনে স্কোর করছিলেন। কিন্তু ক্যারিবীয় স্পিনার রোস্টন চেজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই আউট হয়ে যান।

অবশ্য এমন আউটে সৌম্যর কোনো দোষ নেই। ছক্কা প্রায় হয়েই গিয়েছিল! ফিল্ডার ড্যারেন ব্রাভো দুই দফায় অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাচটি লুফে নেন।

কাল রান খুব বেশি ছিল না। তাই রানের জন্য তামিমের খুব একটা তাড়াও ছিল না। তা ছাড়া সৌম্য মারমুখী ব্যাটিং করছেন দেখে বেশ রক্ষণাত্মক হয়ে যান ড্যাসিং ওপেনার। হাফসেঞ্চুরি করে স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিং করেন। ফিফটি করতে তিনি খেলেছেন ৭৮ বল। শুধু  তাই নয়, এই ৭৮ বলের মধ্যে আবার              ৪৮ বলই ছিল ডট।

কাল যেন একটুখানি বেশি সতর্কই ছিলেন তামিম। ইচ্ছা ছিল খেলা শেষ করে ড্রেসিংরুমে ফিরবেন! পাশাপাশি সেঞ্চুরির বিষয়টিও মাথায় ছিল হয়তো। সেদিকে বেশ ভালোভাবে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু ২০ রান দূরে থাকতেই সাজঘরে ফিরতে হলো তাকে।

তবে সাকিব আল হাসান কোনো রকম ভুল করেননি। সৌম্যর আউটের পর বাইশগজে গিয়ে ঠিক সৌম্যর গতিতেই যেন রান তুলতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। তামিমের আউটের পর অবশ্য সাকিবকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। মি. ডিপেন্ডেবলও খেলেছেন ২৫ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৪৫ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

ডাবলিনে টাইগারদের বোলিং ছিল দেখার মতো। অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একাই নিয়েছেন তিন উইকেট। গতকাল দারুণ বোলিং করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ৩৮ রান। ক্যারিবীয়দের প্রথম উইকেটের পতন হয়েছে তার বলেই। তবে সুবিধা করতে পারেননি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ১০ ওভারে দিয়েছেন ৮৪ রান। তবে দুটি উইকেটও নিয়েছেন।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডিজ দলপতি জেসন হোল্ডার। প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন শাই হোপ। একটি রেকর্ডও হয়েছে ক্যারিবীয় তারকার। স্পর্শ করেছেন ২০০০ রানের মাইলফলক। এ জন্য ৫১টি ওয়ানডে খেলতে হয়েছে হোপকে। তারপরও প্রত্যাশা অনুযায়ী স্কোর বড় করতে পারেনি ওপেস্ট ইন্ডিজ। তাই হারতেও হয়েছে বড় ব্যবধানে। তবে হারলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার কিন্তু হোপই পেয়েছেন।

দুর্দান্ত মাশরাফি : দ্বিতীয় স্পেলে মাশরাফি ছিলেন ভয়ঙ্কর। তুলে নেন ৩ উইকেট। নবম ওভারে হাফসেঞ্চুরি করা রোস্টন চেজকে পাঠিয়ে দেন ড্রেসিংরুমে। নিজের কোটার শেষ ওভারে তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান শাই হোম ও অধিনায়ক হোল্ডারকে। ম্যাশের বোলিং ফিগার ১০-০৪৯-৩।

মাহমুদুল্লাহর দর্শনীয় ক্যাচ : ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম জুটিটা কাল আগের ম্যাচের বিশ্ব রেকর্ডের কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল। অবশেষ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিশমেটিক ক্যাচে জুটি ভাঙে।

 

উইন্ডিজের উইকেট পতন

 

► ১ম উইকেট

শাই হোপ ও সুনীল অ্যাম্ব্রিসের জুটিটা বেশ জমে উঠেছিল। বেশ ভয়ই পেয়েছিলেন মাশরাফিরা। ৮৯ রানের মাথায় মিরাজ এসে ক্যারিবীয়দের ওপেনিং জুটি ভাঙেন। ব্যক্তিগত ৩৮ রানেই আউট হয়ে যান অ্যাম্ব্রিস।

► ২য় উইকেট

মিরাজের উইকেট নেওয়া দেখে যেন সাকিবও দারুণ অনুপ্রাণিত হলেন। পরের ওভারেই ড্যারেন ব্রাভোকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করলেন। ১ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে যেন খানিকটা বিপদেই পড়ে যায় উইন্ডিজ। 

► ৩য় উইকেট

হাফ সেঞ্চুরির পর হাত খুলে খেলার চেষ্টা করছিলেন রোস্টন চেজ। শুরুটা মাশরাফির বলেই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! উল্টো ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত ৫১ রানে বিদায় নেন।

► ৪র্থ উইকেট

মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার শাই হোপ। এক্সট্রা কাভারে মোহাম্মদ মিথুনের হাতে ধরা পড়েন ক্যারিবীয় ওপেনার। অবশ্য তার আগেই সিরিজে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি আদায় করে নিয়েছেন। ১০৯ রান করেন হোপ।

► ৫ম উইকেট

এবার মাশরাফির শিকার উইন্ডিজ দলপতি হোল্ডার। ক্যারিবীয় তারকাকে উইকেটে থীতুই হতে দেননি মাশরাফি। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঝড়ো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু মাশরাফির বুদ্ধিমত্তার বোলিংয়ে ৪ রানেই ফিরতে হয় হোল্ডারকে।

► ৬ষ্ঠ উইকেট

ক্যারিবীয়দের ইনিংসে ষষ্ঠবারের মতো আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছার আগেই ডোরিচকে বিদায় করে দেন। ক্যারিবীয়দের জার্সিতে গতকালই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে এই জ্যামাইকানের। কিন্তু শুরুটা মোটেও ভালো হলো না।

► ৭ম উইকেট

চার্টারকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ১১ রানের বেশি করতে পারেননি। লং অনে ড্রাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেন সাকিব।

► ৮ম উইকেট

মাত্র ১ রানে কেমার রোচকে ফিরিয়ে দেন সাইফউদ্দিন।

► ৯ম উইকেট

অ্যাশলি নার্সকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ।

সর্বশেষ খবর