বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বার্সার ট্র্যাজেডি রেডদের রূপকথা

রাশেদুর রহমান

বার্সার ট্র্যাজেডি রেডদের রূপকথা

শাকিরি, ওরিগি, উইনালডাম, স্যাডিও মানেরা একেকজন যেন বুনো ষাঁড়। তেড়ে-ফুঁড়ে আপন পথ খুঁজে নেওয়াই তাদের কাজ। তুর্কি রেফারি কুনিত শাকির ম্যাচটা শুরু করতেই বার্সেলোনাকে দর্শক বানিয়ে দিল অলরেডরা। ন্যু ক্যাম্পে গত সপ্তাহে ৩-০  গোলে হারের বিষয়টা বেমালুম ভুলে গেল! ভুলে গেল, দলে নেই সেরা তারকা মোহাম্মদ সালাহ আর রবার্তো ফিরমিনো। মনের গভীরে কেবল একটাই আকাক্সক্ষা ছিল, জয় চাই, জয়। তাও এক-দুই গোলে নয়। চার  গোলে। এনফিল্ডের দর্শকদের মাঝে প্রাণের জোয়ার বইয়ে দিল দলটা। ৪-০ গোলের প্রায় অসম্ভব একটা ম্যাচ জিতে নিল লিভারপুল। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিশ্চিত করল নবম ফাইনাল। বার্সেলোনা গত বছরের মতোই যেন অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিল। গত মৌসুমে ইতালিয়ান ক্লাব রোমার বিপক্ষে  কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৪-১ গোলে জিতে  মেসিরা ধরেই নিয়েছিলেন সেমিফাইনালে পৌঁছে  গেছেন। কিন্তু তাদের ভুল প্রমাণ করে দ্বিতীয় লেগে ৩-০ গোলের জয়ে সেমিফাইনাল খেলেছিল রোমা। একই ভুল আবারও করল কাতালানরা। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এনফিল্ডে খেলতে নামার আগে ৩-০  গোলে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। ফাইনাল খেলার ব্যাপারে যেন নিশ্চিন্ত ছিলেন মেসিরা। এ কারণেই সম্ভবত খাপছাড়া খেলা নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল বার্সা। ম্যাচ শেষে সুয়ারেজ তো তাই বললেন। ??‘আমরা  মোটেও একটা দল হিসেবে খেলতে পারিনি। টানা দ্বিতীয় মৌসুমে একই ধরনের লজ্জাজনক হার  কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ দোষটা নিজেদের ঘাড়েই নিয়ে নিচ্ছেন উরুগুয়ের এই তারকা ফুটবলার। মূলত ডিফেন্সের দোষেই পরাজয়ের মুখে পড়তে হলো বার্সেলোনাকে। অন্যদিকে সালাহ আর ফিরমিনোকে ছাড়া খেলতে নেমে লিভারপুল অলআউট ফুটবল উপহার দিয়েছে। অলরেডদের পরিকল্পনা ছিল, তোমরা বলটা নিয়ে খেল, কিন্তু  গোল করব আমরা। বার্সেলোনা বল দখলের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু গোল করার ক্ষেত্রে লিভারপুলের কাছে দুধের বালক ছিলেন মেসিরা। তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি কাতালানরা! অন টার্গেটে ৫টা শট নিয়েও গোল করতে পারেননি মেসি-সুয়ারেজরা। অন্যদিকে ৭টা শটের মধ্যে চারটাকেই  গোলে পরিণত করেছেন লিভারপুল তারকারা। ডিভোক ওরিগি ৭ম মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে ৫৪ ও ৫৬ মিনিটে দুটি গোল করেন ডাচ তারকা জর্জিনিও উইনালডাম। ৭৯ মিনিটে আরও একটি গোল করে দলের ফাইনাল নিশ্চিত করেন ওরিগি। এমন এক জয়ের পর অবিশ্বাস ভরা দৃষ্টিতে শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে রইলেন লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপ। তিনি বললেন, ‘মাঠে এমন দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার  দেওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য। এমন একটা দলের কোচ হতে পেরে আমি গর্বিত। তারা যা করেছে এটা বিশেষ কিছু। আমি সারা জীবন এটা মনে রাখব।’ লিভারপুল অবশ্য এমন অবিশ্বাস্য কিছু আগেও করেছে। ২০০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে এসি মিলানের কাছে ৩-০  গোলে পিছিয়ে পরেও দ্বিতীয় লেগে ছয় মিনিটের ঝড়ে ম্যাচটা ড্র করেছিল। পরে টাইব্রেকারে জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে। ফাইনালে সালাহ আর ফিরমিনো দলে ফিরলে লিভারপুলের শক্তিমত্তা যখন কয়েক গুণ  বেড়ে যাবে তখন তাদের রুখবে কে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর