শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশ্বকাপ ১৯৯৬

৯৬-এ শ্রীলঙ্কার রূপকথা

মেজবাহ্-উল-হক

৯৬-এ শ্রীলঙ্কার রূপকথা

‘অংশগ্রহণই বড় কথা’-১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ‘প্রতিপাদ্য’ ছিল যেন অনেকটা এমনই! সেই দলটাই কিনা বদলে গেল হঠাৎ। হয়তো উপমহাদেশের অন্য দুই দল ভারত ও পাকিস্তানকে শিরোপা জিততে দেখে তারা ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। তারপর বিশ্বকে চমকে দিয়ে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের শিরোপাই জিতল শ্রীলঙ্কা। এই বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল শ্রীলঙ্কাও। এটি ছিল তাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা। তবে এই দলটিও ছিল ভারসাম্যপূর্ণ। নেতৃত্বে ছিলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গার মতো তারকা। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ওয়াকওয়াক ওভার পেয়ে সহজেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এরপর ঠিকই ইংল্যান্ড, ভারত ও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে রূপকথা রচনা করে দ্বীপ রাষ্ট্রটি।

 

ভয়ঙ্কর জয়সুরিয়া

৯৬-এর বিশ্বকাপে সনাৎ জয়সুরিয়া ছিলেন এক ভয়ঙ্কর ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তারই। ব্যাট হাতে ২২১ রান এবং বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে তিনি সিরিজ সেরা হয়েছিলেন। গ্রুপ পর্বে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৭৬ বলে ৭৯ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন। এমনকি সেমিতেও যে লঙ্কানরা ভারতকে দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়েছে সে ম্যাচেও নেপথ্য নায়ক জয়সুরিয়া। বল হাতে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার মাত্র ৪৪ বলে ৮২ রানের ইনিংসটি যেন এখনো ক্রিকেটামোদীদের চোখের সামনে ভাসছে।

 

 

 

 

 

 

এক নজরে

চ্যাম্পিয়ন : শ্রীলঙ্কা।

রানার্সআপ : অস্ট্রেলিয়া

অংশগ্রহণকারী দল : ১২টি

মোট ম্যাচ : ৩৭টি

ম্যান অব দ্য ফাইনাল : অরবিন্দ ডি সিলভা, শ্রীলঙ্কা।

ম্যান অব দ্য সিরিজ : সানাৎ জয়াসুরিয়া, শ্রীলঙ্কা।

দলীয় সর্বোচ্চ : শ্রীলঙ্কার ৩৯৮/৫, কেনিয়ার বিরুদ্ধে।

দলীয় সর্বনিম্ন : ৯৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কেনিয়ার বিরুদ্ধে।

ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ (মোট) : ৫২৩, শচীন টেন্ডুলকার, ভারত।

সর্বোচ্চ স্কোর : ১৮৮*, গ্যারি কারস্টেন, দক্ষিণ আফ্রিকা।

সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ : ১৮৬, গ্যারি কারস্টেন ও অ্যান্ড্রু হাডসন, দক্ষিণ আফ্রিকা।

সর্বাধিক উইকেট : ১৫টি, অনিল কুম্বলে, ভারত।

সেরা বোলিং: ৫/২১, পল স্ট্রং, জিম্বাবুয়ে। 

সর্বাধিক ডিসমিশাল : ১২টি, ইয়ান হেলি, অস্ট্রেলিয়া।

সর্বাধিক ক্যাচ : ৭টি, অনিল কুম্বলে, ভারত।

 

অস্ট্রেলিয়া-উইন্ডিজের ওয়াকওভার

১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে তামিল টাইগারদের সেন্ট্রাল ব্যাংক বোম্বিংয়ের কারণে শ্রীলঙ্কায় খেলতে যেতে অস্বীকৃতি জানায় অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু দুই দল রাজি হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট শ্রীলঙ্কায় না যাওয়ার কারণে বড় দুই ম্যাচে ওয়াকওভার পেয়ে সহজেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় শ্রীলঙ্কা।

 

সবচেয়ে বড় অঘটন

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে রীতিমতো তারকার ছড়াছড়ি। ব্রায়ান লারা, রিচি রিচার্ডসন, চন্দরপল, আর্থাটনের তারকা ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে কোর্টলি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যাম্ব্রোস, ইয়ান বিশবের মতো কিংবদন্তি বোলার। তারপরও এই দলটাই কিনা কেনিয়ার মতো পুঁচকে দলের কাছে হেরে যায় ৭৩ রানের বড় ব্যবধানে। অথচ একই আসরে এই কেনিয়ার বিরুদ্ধে ৩৯৮ রানের পাহাড় গড়েছিল। সেই কেনিয়াই কিনা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করে দেয় মাত্র ৯৭ রানে। ওই এটিই ছিল সর্বনিম্ন স্কোর।

 

কারস্টেন নট আউট ১৮৮

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে ১৮৮ রান করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যারি কারস্টেন। পুরো ৫০ ওভারই তিনি উইকেটে ছিলেন। খেলেছেন ১৫৯ বল। তার ইনিংসে ছিল ১৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কা। আসরে সেটিই ছিল ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস।

 

টেন্ডুলকারের ক্যারিশমা

৯৬-এর বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন টেন্ডুলকার। ৭ ম্যাচে ৮৭.১৬ গড়ে করেছিলেন ৫২৩ রান। ২টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ওই আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন টেন্ডুলকারই। কিন্তু দলকে শিরোপা জেতাতে পারেননি। ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের। ওই ম্যাচেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন শচীন। আর বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন ভারতের অনিল কুম্বলে। আসরে তিনি ১৫ উইকেট শিকার করেছেন।

 

ফাইনাল

পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে স্বপ্নের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ পর্বে দুই দলের দেখা হওয়ার কথা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার তামিল টাইগারদের হামলার কারণে শ্রীলঙ্কায় না যাওয়ায় স্বাগতিকরা ওয়াকওভার পেয়ে যায়। তাই প্রতিশোধটা ফাইনালেই নিতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু লাভ হয়নি। প্রথমে ব্যাট করে অসি অধিনায়ক মার্ক টেলরের ৭৪ রানের ইনিংসে ভর করে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান করে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লঙ্কানদের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ২৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার সাজঘরে ফিরে যান। এরপরই শুরু অরবিন্দ ডি সিলভার জাদুকরী ব্যাটিং। ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। ৬৫ রানের ইনিংস খেলে তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছিলেন গুরুসিনহা। ৩৭ বলে রানাতুঙ্গার ৪৭ রানের ইনিংসটিও ছিল দেখার মতো।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া ২৪১/৭ (৫০ ওভার) (টেলর ৭৪, পন্টিং ৪৫. ডি সিলভা ৩/৪২, মুরারিধরন ১/৩১

শ্রীলঙ্কা ২৪৫/৩ (৪৬.২ ওভার) (ডি সিলভা ১০৭*, গুরু সিনহা ৬৫, রানাতুলঙ্গা ৪৫*. ফ্লেমিং ১/৪৩, রেইফেল ১/৪৯

ফল        :               শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে জয়।

ম্যাচ সেরা           :               অরবিন্দ ডি সিলভা

 

চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা স্কোয়াড

১. অর্জুনা রানাতুঙ্গা (অধিনায়ক), ২. অরবিন্দ ডি সিলিভা (সহঅধিনায়ক), ৩. উপুর চন্দনা, ৪. মারভান আতাপাতু, ৫. কুমার ধর্মসেনা, ৬. আশাঙ্কা গুরুসিনহা, ৭. রমেশ কালুভিতরানা (উইকেটরক্ষক), ৮. সনাৎ জয়াসুরিয়া, ৯. রোশান মাহানামা, ১০. মুত্তিয়া মুরালিধরন, ১১. রবীন্দ্র পুষ্পকুমারা, ১২. হাসান তিলকারত্নে, ১৩. চামিন্দা ভাস, ১৪. প্রমধ্য উইক্রামাসিংহে, ১৫. চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে, ১৬. রাসেল আরনল্ড। 

 

ফরম্যাট

অংশগ্রহণকারী ১২ দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গ্রুপ পর্ব খেলে। প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা ৪ দল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। কোয়ার্টার ফাইনালের পর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল।

সর্বশেষ খবর