মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই ম-তেই বাজিমাত

মেজবাহ্-উল-হক

দুই ম-তেই বাজিমাত

ম-তে মাশরাফি, ম-তে মুস্তাফিজ। এই ম-তেই কাল বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং স্বর্গ ম্যালাহাইড স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৭ রানে আটকে, ৫ উইকেটের দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে টানা দুই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন মাশরাফিরা। সেই সঙ্গে কাগজে-কলমে আয়ারল্যান্ডের যে সামাস্য সুযোগ ছিল, তাও শেষ হয়ে গেল। ১৭ জুন ফাইনালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

প্রথম ম্যাচেও বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি ক্যারিবীয়রা। তারা হেরেছিল ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ৩০ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচেও লড়াই জমিয়ে তুলতে পারেনি উইন্ডিজ।

গতকাল দলীয় সেঞ্চুরির আগেই ৪ ব্যাটসম্যানকে হারায় ক্যারিবীয়। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন দুই ব্যাটসম্যান শাই হোপ ও জেসন হোল্ডার। তাদের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০০ রান আসে। এরপর দুজনকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওপেনার অ্যামব্রিসকে আউট করে ক্যারিবীয়দের ইনিংসে প্রথম ধাক্কাটাও দিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচে তিন উইকেট শিকার করলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। তবে রান একটু বেশি দিয়েছেন এই যা।

দুর্দান্ত বোলিং করেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। আগের ম্যাচে সবচেয়ে বাজে বোলিং ফিগার ছিল তার। ১০ ওভারে দিয়েছিলেন ৮৪ রান। সেই কাটার মাস্টারই গতকাল ধসিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ৪৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। মুস্তাফিজের ফর্মে ফেরায় যেন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। কারণ বিশ্বকাপে কাটার মাস্টারকে ঘিরেই যে টাইগারদের বোলিং শাণিত হওয়ার কথা। তাই মুস্তাফিজের ছন্দে ফেরাটা অনেক বড় স্বস্তির!

এ ম্যাচেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন ক্যারিবীয় ওপেনার শাই হোপ। খেলেছেন ৮৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬২। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যানকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। সেরা দুই পেসারই ক্যারিবীয়দের ইনিংসে ধস নামিয়ে দিয়েছেন।

দুর্দান্ত বোলিং করেছেন স্পিনাররাও। এ ম্যাচেও ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান। উইকেট মাত্র একটি পেলেও ১০ ওভারে মাত্র ২৭ রান দিয়েছেন। ক্যারিবীয়দের ভুগিয়েছেন আরেক স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজও। তিনিও ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৪১। একটি উইকেটও শিকার করেছেন।

তবে অভিষেকটা ভালো হয়নি পেসার আবু জায়েদ রাহীর। ৯ ওভারে ৫৬ রান দিয়েছেন। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা ধরে রাখতে ত্রিদেশীয় সিরিজে যে দুর্দান্ত ফর্ম দেখানোর বিকল্প নেই, তা খুব ভালো করেই জানেন তিনি। তবে প্রথম সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না ঘরোয়া লিগের দুর্দান্ত বোলিং করা এই পেসার।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হচ্ছে ব্যাটিং লাইন আপ। সেখানে ঠিকই দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। আগের ম্যাচে বাইশগজে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাননি মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক। তবে এ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি। খেলেছেন ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস।

সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে, সৌম্য সরকারের রানে ফেরা। টানা দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করলেন এই ড্যাসিং ওপেনার। আগের ম্যাচে করেছিলেন ৭৩ আর এ ম্যাচে খেলেন ৫৪ রানের আরেকটি অনবদ্য ইনিংস।  দুই আগ্রাসী জয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে বাংলাদেশের। ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালের আগে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরও একটি ম্যাচ আছে। দুই ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হওয়ায় যদিও ম্যাচটির গুরুত্ব কমে গেছে। কিন্তু টাইগার ক্যাপ্টেন বললেন ভিন্ন কথা, ‘আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। তার ফলও পাচ্ছি। সামনে দুটি ম্যাচ আছে, দুটিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

 

 

ম্যাচ সেরা মুস্তাফিজ

প্রথম ম্যাচে সবচেয়ে বাজে বোলিং করেছিলেন তিনি। ১০ ওভারে ৮৪ রান দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে এ ম্যাচে ৪৩ রানে তুলে নেন ৪ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনিই। প্রথম উইকেট মাশরাফি, দ্বিতীয় উইকেট মিরাজের। তারপর টানা দুই উইকেট নেন কাটার মাস্টার। ক্যারিবীয়দের শেষ দুই ব্যাটসম্যানও তার শিকার।

 

 

 

মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি

 আগের ম্যাচে করেছিলেন অপরাজিত ৩২ রান। মন খুলে ব্যাট করার সুযোগ পাননি মুশফিকুর রহিম। তবে এ ম্যাচে একটু বেশি সময় সুযোগ পেয়েছেন। আর তা কাজেও লাগিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। খেলেছেন ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস। দল জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়ে অযথাই বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন।

 

 

 

 

সৌম্যর টানা দ্বিতীয়

ফিল্ডিংয়ের সময় স্লিপে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিয়েছেন। তার কারণেই প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ক্যারিবীয় ওপেনার অ্যামব্রিস দ্রুত ফিরেছেন সাজঘরে। তারপর ব্যাটিংয়ে করলেন হাফ সেঞ্চুরি। ২টি ছক্কা ও ৪টি বাউন্ডারিতে খেলেছেন ৫৪ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি ছিল সৌম্যর।

 

 

স্কোর কার্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস

ব্যাটসম্যান         রান        বল         ৪/৬      

শাই হোপ ক মুশফিক ব মাশরাফি             ৮৭         ১০৮      ৬/১

অ্যামব্রিস ক সৌম্য ব মাশরাফি ২৩         ১৯          ৪/০

ব্রাভো এলবিডব্লিউ ব মেহেদী      ৬            ১৩          ১/০

চেজ ক মাহমুদুল্লাহ ব মুস্তাফিজ                ১৯          ২৯         ২/০

কার্টার এলবিডব্লিউ ব মুস্তাফিজ ৩            ১৪          ০/০

হোল্ডার ক মুশফিক ব মাশরাফি                ৬২         ৭৬         ৩/১

ফ্যাবিয়ান এলবিডব্লিউ ব সাকিব                ৭             ৯             ১/০

নার্স ক সাব্বির ব মুস্তাফিজ          ১৪          ১২          ১/০

রেইফার এলবিডব্লিউ ব মুস্তাফিজ             ৭             ১২          ০/০

রোচ নটআউট  ৩            ৪             ০/০

শেলডন নটআউট           ৮            ৪             ০/১

অতিরিক্ত  ৮ (ও ৩, বাই ১, লে/বা ৪)

 মোট     ২৪৭ /৯ (৫০ ওভার)

উইকেট পতন: ৩৭/১ (অ্যামব্রিস, ৫.৫), ৫৬/২ (ব্রাভো, ১০.৩), ৮৯/৩ (চেজ, ১৯.১), ৯৯/৪ (কার্টার, ২৩.১), ১৯৯/৫ (হোপ, ৪১.৬), ২০৭/৬ (হোল্ডার, ৪৩.৬), ২১১/৭ (ফ্যাবিয়ান, ৪৪.৪), ২৩৪/৮ (নার্স, ৪৮.২), ২৩৬/৯ (রেইফার, ৪৮.৫)।

বোলিং: আবু জায়েদ ৯-০-৫৬-০-৬.২২; মাশরাফি ১০-০-৬০-৩-৬.০০; মেহেদী ১০-০-৪১-১-৪.১০; মুস্তাফিজ ৯-১-৪৩-৪-৪.৭৮; সাকিব ১০-১-২৭-১-২.৭০; সৌম্য ২-০-১৫-০-৭.৫০।

বাংলাদেশ ইনিংস :

তামিম ব. নার্স   ২১          ২৩         ৪/০

সৌম্য ক. অ্যামব্রিস ব.নার্স          ৫৪         ৬৭         ৪/২

সাকিব ক. চেজ ব. নার্স  ২৯         ৩৫         ৩/০

মুশফিক ক. ব্রাভো ব. রোচ           ৬৩        ৭৩         ৫/১

মিথুন ব. হোল্ডার              ৪৩         ৫৩         ২/২

মাহমুদুল্লাহ নট আউট    ৩০         ৩৪         ১/১

সাব্বির নট আউট            ০             ০             ০/০

অতি :                    ৮  (লে.বা. ২, নো ১, ও ৫)

মোট      ২৪৮/৫ (৪৭.২ ওভার)

উইকেট পতন : ১-৫৪ (তামিম ৮.৪ ওভার), ২-১০৬ (সাকিব. ২০.৩ ওভার), ৩-১০৭ (সৌম্য, ২০.৫ ওভার), ৪-১৯০ (মিথুন, ৩৬.৩  ওভার), ৫-২৪০ (মুশফিক, ৪৬.১ ওভার)

বোলিং :

রোচ : ৬-০৪৬-১

কটরেল : ৯.২-০-৩৮-০

নার্স : ১০-০-৫৩-৩

 চেজ : ৬-০-২৪-০

অ্যালেন : ৩-০-১১-০

 হোল্ডার : ৮-১-৪৩-১

 রেইফার : ৫-০৩১-০

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর