শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার কি পারবেন মাশরাফিরা

ফাইনাল আজ

মেজবাহ্-উল-হক

এবার কি পারবেন মাশরাফিরা

মুশফিকুর রহিমকে জড়িয়ে ধরে সাকিব আল হাসানের কান্নার সেই ‘বিষাদময়’ দৃশ্য কি মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটামোদীরা! ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২ রানের হার যেন এখনো কাঁটার মতো বিঁধছে।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে গত বছর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও শিরোপার খুব কাছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ‘ঘাতক’ দিনেশ কার্তিকের শেষ বলের ছক্কায় সেবারও স্বপ্ন ভঙ্গ। এছাড়াও এশিয়া কাপের আরও দুই আসরে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। আরও দুবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু একবারও জয়লাভ করা হয়নি। ফাইনাল যেন বাংলাদেশের কাছে অধরা।

তবে এবার ‘লাকি সেভেন’! বাংলাদেশ দল সপ্তমবারের মতো ফাইনাল খেলতে নামছে আজ। ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। ষষ্ঠবারে হয়নি, ‘লাকি সেভেন’-এ ভাগ্য কি ফিরে তাকাবে মাশরাফিদের দিকে?

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে তিন ম্যাচেই দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে জয় তুলে নিয়েছে। তার মধ্যে আবার দুটি জয় এই ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধেই। আজ আরেকবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারলেই বাজিমাত।

তবে বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ পারফর্ম করলেও বেশকিছু দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় জয় পেয়েছে ঠিকই কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এমনকি ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়া আয়ারল্যান্ডেরও একাধিক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন। কেবল বাংলাদেশেরই কেউ এখন পর্যন্ত শতকের দেখা পাননি।

সবশেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ২৯২ রানের টার্গেটেও অনায়াসে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিন ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। কিন্তু সেঞ্চুরি নেই কারও। তাই খুব বড় জুটিও গড়ে ওঠেনি। এই বিষয়টিই ভাবাচ্ছে দলকে!

দুশ্চিন্তা রয়েছে টাইগারদের বোলিং ও ফিল্ডিং নিয়েও। শেষ ম্যাচে এই দুই বিভাগেই টাইগারদের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। আয়ারল্যান্ডের  হয়ে ১৩০ রানের ইনিংস খেলা ওপেনার পল স্টারলিংয়ের ক্যাচই দুই দুবার মিস হয়েছে। নতুন জীবন পেয়েছেন আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডও।

সব কিছুর পরও সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে এই সিরিজে বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারই কম বেশি ধারাবাহিক। তিন ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। টানা দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি আছে সৌম্য সরকারের। তৃতীয় ম্যাচে তাকে বিশ্রামে রেখে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল লিটন দাসকে। দিনাজপুরের এই ব্যাটসম্যান সুযোগ পেয়েই খেলেছেন ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। এক সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি করা যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে ফেলায় সুযোগটা নষ্ট করেছেন।

মুশফিকের রহিমও আছেন ফর্মে। যদিও শেষ ম্যাচে তিনি দৃষ্টিকটূভাবে আউট হয়েছেন। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। তবে আগের ম্যাচে তিনিও একটি দারুণ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।

দুশ্চিন্তা রয়েছে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে পীঠের পেশিতে টান পড়েছিল তার। যে কারণে হাফ সেঞ্চুরির পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন। তবে বিসিবি জানিয়েছে, সাকিবকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তার ইনজুরি গুরুতর নয়। গতকাল বিশ্রামে রাখা হয়েছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। তবে আজ ফাইনালে খেলছেন কিনা তা জানা যায়নি।

ত্রিদেশীয় সিরিজে সবচেয়ে ধারাবাহিক সাকিব। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। তাই আজকের ফাইনালে সাকিব না খেললে তা বাংলাদেশ দলের জন্য একটা বড় ধাক্কা!

যেকোনো ক্রীড়া ইভেন্টে জয় পাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। কিন্তু শেষ ম্যাচে টাইগারদের শরীরী ভাষা মোটেও ইতিবাচক ছিল না। তা না হলে কীভাবে টানা তিন ওভারে তিন তিনটি ক্যাচ মিস হবে! ক্রিকেট এমন এক খেলা যেখানে বলা হয়ে থাকে ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’। তাই ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও সতর্ক থাকতে হবে মাশরাফিদের।

ফাইনাল ম্যাচ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য এখন একটা ‘মেন্টাল ব্লক’। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিততে পারলে টাইগাররা অনেকটা ফ্রি হয়ে যাবে। ‘মেন্টাল ব্লক’ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়ে বিশ্বকাপ মিশনে মনোনিবেশ করতে পারবেন মাশরাফিরা।

সর্বশেষ খবর