রবিবার, ১৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার স্বপ্নের মিশন

মেজবাহ্-উল-হক

এবার স্বপ্নের মিশন
মাশরাফি বিন মর্তুজা হ্যান্ডশেক করার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন! মানে প্রতিপক্ষকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। কতটা স্বস্তির সেই দৃশ্য! কতটা মনমুগ্ধকর এক ছবি! আগে এই কাজটি অন্য দেশের অধিনায়করা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে করতেন! এখন চিত্র ঠিক তার উল্টো।

 

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচের শেষের দৃশ্যটি লক্ষ্য করেছেন?

মাশরাফি বিন মর্তুজা হ্যান্ডশেক করার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন! মানে প্রতিপক্ষকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। কতটা স্বস্তির সেই দৃশ্য! কতটা মনমুগ্ধকর এক ছবি! আগে এই কাজটি অন্য দেশের অধিনায়করা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে করতেন! এখন চিত্র ঠিক উল্টো।

বাংলাদেশ ভয়কে জয় করতে শিখে গেছে। কঠিন ম্যাচেও মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে পাঠাতে শিখেছে। আর এই শিক্ষা যে একদিনেই আয়ত্ব করা সম্ভব হয়েছে, তা নয়। দিনের পর দিন হারের যন্ত্রণা সহ্য করে, সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই এখন অভিজ্ঞ বাংলাদেশ দল।

২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিততে জিততেও মাত্র ২ রানে পরাজয় কতই না বেদনার ছিল। কিন্তু নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে শেষ বলে হারের কথা কি কেউ ভুলতে পারবেন! এমন অসংখ্য ম্যাচেই ‘তীরে এসে তরী ডুবেছে’ বাংলাদেশের। ছোট ছোট সেই কষ্ঠগুলোই যেন টাইগারদের একটু একটু করে পরিপক্ব করেছে।

আয়ারল্যান্ডে টাইগারদের পারফরম্যান্সে ছিল পুরাদস্তুর পেশাদারিত্বের ছাপ! ‘তক্তা মার্কা’ উইকেটেও প্রথম দুই ম্যাচে বোলাররা প্রতিপক্ষকে ছিটকে দিয়েছেন। আর শেষের দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছেন দায়িত্বশীলতা কাকে বলে? প্রতিটি ম্যাচে পরিস্থিতি বুঝে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন।

‘পঞ্চপান্ডব’ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে! মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ম্যাচে প্রধান ভূমিকা পালন না করলে বাংলাদেশের পক্ষে জয় তুলে নেওয়া অসম্ভব। গত কয়েক বছরে এমনটাই ছিল বাংলাদেশের চিত্র! কিন্তু এই প্রথম সেই ধারণা বদলে গেল। বদলে দিলেন দলের তরুণ ক্রিকেটাররা। ফাইনাল ম্যাচটির কথা চিন্তা করুন! এমনিতেই দলে সেরা তারকা সাকিব নেই। বাকি চার সিনিয়র ক্রিকেটারও ম্যাচের কেন্দ্রীয় চরিত্রে নেই। তরুণরাই বাজিমাত করে দিয়েছেন। সিনিয়ররা যেন ‘পার্শ্ব নায়ক’! সাকিবের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক কি ক্যারিশমাই না দেখালেন! ২৪ বলে ৫২ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। সৌম্য সরকারের কথা চিন্তা করে দেখুন! বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে যেন সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। তার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা নিয়েও সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই সৌম্য আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরি করে একটা ছোট্ট জবাব দিলেন। কিন্তু জাতীয় দল আর ঘরোয়া লিগে খেলা কি এক কথা? মোটেও নয়। তাই সৌম্য আয়ারল্যান্ডে তিন ম্যাচে তিন হাফ সেঞ্চুরি করে নিজেকে নতুন ভাবে তুলে ধরলেন।

ত্রিদেশীয় সিরিজটি দুটি কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল- এক. বিশ্বকাপের প্রস্তুতি, দুই. আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা! দুই লক্ষ্যই একসঙ্গে পূরণ হয়েছে। বাড়তি লাভ-তরুণরা আরও উজ্জীবিত হয়েছে। এখন ভারসাম্যপূর্ণ এক দল নিয়েই ইংল্যান্ডে স্বপ্নের বিশ্বকাপ মিশনে নামার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। একজন অভিজ্ঞ অধিনায়ক, বিশ্বমানের সিনিয়র খেলোয়াড় এবং টপবগে কিছু তরুণ-সব রসদই আছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। কন্ডিশনও চেনা ইংল্যান্ড। দর্শকের কাছ থেকে টাইগাররা সবচেয়ে বেশি সমর্থন যুক্তরাজ্যে (বাংলাদেশের পর)। সেরা ওপেনার, পিঞ্চ হিটার, পেসার, স্পিনার এবং ফিল্ডার - সব সাইড মিলেই দুর্দান্ত এক দল এখন বাংলাদেশ। যদিও রথি-মহারথীদের বিশ্বকাপ আলোচনায় নেই বাংলাদেশ! তাদের বিশ্লেষণ কেবলমাত্র ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা পাকিস্তানকে ঘিরে। আর আলোচনায় থাকার দরকারই বা কি মাশরাফিদের?   ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে কপিল দেবের ভারত কি ফেবারিটের তালিকায় ছিল? মোটেও না! ৯২-এ ইমরান খানের পাকিস্তানকে শিরোপা জয়ী তালিকায় কেউ রেখেছিল? কিংবা ৯৬-এ অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার কথাই ধরুন! উপমহাদেশের তিন দেশ যদি ‘আন্ডারডগ’ থেকেও বিশ্বকাপ জিততে পারে, তবে বাংলাদেশকে নিয়ে আশা করতে দোষ কোথায়! অবশ্য কেউ কেউ এই বিশ্বকাপে মাশরাফির বাংলাদেশকে তুলনা করা হচ্ছে কপিলের ভারত, ইমরানের পাকিস্তান কিংবা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে! ‘আন্ডারডগ’ থাকার পরও কিভাবে টপ ফেবারিটদের বিদায় করে বিশ্বকাপ জয় করা যায় সেই সূত্রটা উপমহাদেশের তিন দেশ দেখিয়েই দিয়েছে। এখন বাংলাদেশের সময় এসেছে সেই সূত্রে ফেলে অঙ্কটা ঠিকঠাক মতো কষে ফেলা! 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর