বুধবার, ২৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বোলারদের অগ্নিপরীক্ষার দিন

বোলারদের অগ্নিপরীক্ষার দিন

বিরাট কোহলিকে আউট করে ভিন্ন ধরনের উৎসবে মেতে উঠলেন সাইফুদ্দিন ও মিরাজ

কার্ডিফে গতকালের সকালটা অন্যান্য দিনের চেয়ে খানিকটা বেশিই নিস্তব্ধ ছিল! মধ্যরাত পর্যন্ত ‘স্পাইস গার্ল’-এ মাতোয়ারা শহরবাসী যেন ঘুমাচ্ছিলেন! আবহাওয়াও ছিল পুরোপুরি রহস্যময়। হঠাৎ কালো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। আবার তপ্ত রোদ। আবার হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।

সোফিয়া গার্ডেনে নির্ধারিত সময়েই টস হয়। টসে জিতে টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা বোলিং ব্রিগেটকে পরখ করে নিয়ে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধেই তো আসল পরীক্ষা।

তিন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি মর্তুজা ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সফল হলেও বাকিদের অবস্থা যাচ্ছেতাই! তবে শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। প্রথম ১০ ওভারে ভারতের স্কোর ছিল মাত্র ৩৪/১। ১০২ রানে ৪ উইকেট কোহলিদের বিপদেই ফেলেছিলেন পেসাররা। কিন্তু তারপর মহেন্দ্র সিং ধোনি ও লোকেশ রাহুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩৫৯ রানের পাহাড় গড়ে ভারত।

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের ত্রিফলা- রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারত শিরোপার অন্যতম দাবিদার হলেও কোহলির দলকে নিয়ে একটা আপ্তবাক্য আছে, যেদিন ত্রিফলা ১০০ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায় সেদিন ভারতের স্কোর তিনশ ছুঁতে পারে না! ধোনি ও রাহুল মিলে কাল তা ভুল প্রমাণ করলেন। ধোনি মাত্র ৭৮ বলে খেলেন ১১৩ রানের ইনিংস, রাহুল ৯৯ বলে করেন ১০৮ রান।

রেকর্ডের ভেন্যু সোফিয়া গার্ডেনে কাল ৮৩ রানের ত্রিফলাকে বিদায় করে দেন বাংলাদেশের পেসাররা। ধাওয়ানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজ। নিজের প্রথম ওভাওে রোহিতের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন রুবেল হোসেন। আর কোহলিকে শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

সৌভাগ্যই বটে সাইফউদ্দিনের! আগের দিন বলেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে খেলা নাকি তার স্বপ্ন। তাই বেশ রোমাঞ্চিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। আর গতকাল কিনা পেয়ে গেলেন ভারতীয় ক্যাপ্টেনের উইকেটটি। কোহলি আউট হয়েছেন ৪৬ বলে ৪৭ রান করে। 

সোফিয়া গার্ডেনের প্রেসবক্সে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজকে নিয়ে বেশ আলোচনাই হচ্ছিল ভারতীয় সাংবাদিকদের মধ্যে। ‘ও নিশ্চয়ই আর ২০১৫-র মতো ভয়ঙ্কর নয়!’ এই মুস্তাফিজকে তো ভারতীয়দেরই মনে রাখার কথা! ফিজের দুর্দান্ত কাটারেই তো ধোনির ভারত বাংলাদেশে এসে সিরিজ হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে। তারপর আইপিএলে সাইরাইজার্স হায়দরাবাদকে আইপিএলের শিরোপা জিতিয়ে দিয়ে ভারতীয়দের মনে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছেন। যদিও এরপর ইনজুরির কারণে নিজের সেরা ছন্দে নেই মুস্তাফিজ। তবে কাল প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৯ রান। ম্যাচের শুরুতেই বিদায় করে দিয়েছেন ধাওয়ানকে। ৯ বলে ১ রানের বেশি করতে পারেননি ভারতীয় ওপেনার।

রুবেল বোলিং করতে আসেন ইনিংসের ১৪তম ওভারে। মাশরাফি ও মুস্তাফিজের সৌজন্যে দারুণ এক প্লাটফর্ম পেয়েছেন। দুই পেসার প্রথম ১০ ওভারে ভারতকে মাত্র ৩৪ রানে আটকে রেখেছিলেন। রুবেল এসে নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন রোহিতকে। ৪২ বল  থেকে মাত্র ১৯ রান করেছেন ভারতীয় ওপেনার। শেষের অবশ্য ছন্দটা আর ধরে রাখতে পারেননি রুবেল।

মাশরাফি কোনো উইকেট পাননি। তবে ইনিংসের শুরুতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো নাজেহাল করে ছেড়েছেন। প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়েছিলেন। তার ষষ্ঠ ওভারটি ছিল খানিক ব্যয়বহুল। ওই ওভারে অতিরিক্ত বাউন্ড দিয়ে ওয়াইড-চার হয়ে যায়। সব মিলে ৯ রান আসে। এমন রান বন্যার দিনেও ম্যাশের ৬ ওভার থেকে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকাতে পেরেছে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।

কালকের ম্যাচটি রাহুলের জন্য ছিল এক অগ্নিপরীক্ষা। ধাওয়ান ও রোহিত ফর্মে থাকায় ওপেনিংয়ে তার জায়গা নেই, একাদশে থাকবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল।  কেন না প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি দুই অঙ্কের কোটাও ছুঁতে পারেননি। তবে কাল দারুণ এক সেঞ্চুরি করে ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের চারে জায়গা পাকা করে নিলেন।

ধোনির সঙ্গে তার ৫ম উইকেট জুটিতে আসে ১৬৪ রান। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ঝড়টা গেছে স্পিনারদের ওপর দিয়ে। সাকিব, মিরাজ, মোসাদ্দেক কেউ-ই সুবিধা করতে পারেননি।  বোলারদের অগ্নিপরীক্ষায় পেসাররা সফল, তবে স্পিনাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। এটাই হয়তো কোচ স্টিভ রোডসের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে! আর তামিমের অনুপস্থিতিতে রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ২৬৪ রানেই অলআউট বাংলাদেশ। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন লিটন (৭৩) ও মুশফিকুর রহিম (৯০)।  ভারত জিতে যায় ৯৫ রানে।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ইনিংস : ৩৫৯/৭ (৫০ ওভার), রাহুল ১০৮, ধোনি ১১৩, কোহলি ৪৭, রুবেল ২/৬২, সাকিব ২/৫৮।

বাংলাদেশ ইনিংস : ২৬৪/১০ (৪৯.৩ ওভার) মুশফিক ৯০, লিটন ৭৩, মেহেদি ২৭, কুলদিপ ৩/৪৭, চাহাল ৩/৫৫, বুমরাহ ২/২৫।

ফল : ভারত ৯৫ রানে জয়ী

সর্বশেষ খবর