শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইংলিশদের ক্রিকেট উন্মাদনা

ইংলিশদের ক্রিকেট উন্মাদনা

দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর অসাধারণ ফিল্ডিংও করেছেন বেন স্টোকস। দক্ষিণ আফ্রিকার ফেহলুকাইয়োর অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরার পর স্টোকসকে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস -এএফপি

ঢাকার মতো লন্ডনের ফুটপাথে যেখানে সেখানে চায়ের দোকান নেই। নেই যেখানে সেখানে কফি শপও। তা ছাড়া ইংলিশদের আড্ডা দেওয়ার মতো অফুরন্ত সময়ও হাতে নেই। তবে দিন শেষে বারগুলোতে ঠিকই আড্ডায় মেতে ওঠেন। আর ‘উইকেন্ড’ হলে তো কথাই নেই।

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, কিন্তু ইংলিশদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই। বারের আড্ডাগুলোতে খেলা নিয়ে যে টুকটাক আলোচনা হয় সেখানেও ফুটবলের হানা। কে জিতবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি? লিভারপুল নাকি টটেনহাম? চেলসি থাকলে খুবই ভালো হতো! এমন অনেক কথাই শোনা যায়! লন্ডনের টিম বলে চেলসিকে নিয়ে উন্মাদনাটা একটু বেশি। 

এছাড়া এখানে খেলা নিয়ে উত্তেজনা বোঝার আরেকটি বড় জায়গা হচ্ছে সংবাদপত্র। সেখানেও দখল করে নিয়েছে ফুটবল। গতকাল ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। উত্তেজনায় তুঙে থাকার কথা বিশ্বকাপ আলোচনায়। টিউবে ওভালে আসার পথে দুটি পত্রিকা হাতে নিলাম। একটি ‘দ্য সান’ আরেকটি ‘মেট্রো’। কালকের পত্রিকাতেও দেখলাম ব্যাক পেজে বড় করে কাভারেজ দেওয়া হয়েছে ফুটবল। আর্সেনালকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে চেলসি যে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতেছে সেই প্রতিবেদন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ‘মেট্রো’র ব্যাক পেজে বিশাল এক ছবি ছাপানো হয়েছে। সেখানে ইউরোপা লিগের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে চুমু দিচ্ছেন ইডেন হ্যাজার্ড।

কিন্তু কোথায় গেল ক্রিকেট উন্মাদনা?

ইংলিশরা কি তবে ক্রিকেট ভুলতে বসেছে! অথচ এবারের ইংল্যান্ড দলটা খুবই ভয়ঙ্কর। বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার তারা। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়েও এখন এক নম্বরে। এবারের আসরে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল ইংল্যান্ড। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই সেরা।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইংল্যান্ডের সেরা দল ছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে গ্রাহাম গুচের দলটি। ইয়ান বোথামের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটার ছিলেন ওই দলে। অসাধারণ ক্রিকেটও উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু ফাইনালে উঠে যে কি হয়ে গেল তাদের! পাকিস্তানের দেওয়া ২৫০ রানের টার্গেটেই পৌঁছাতে পারেনি। আসলে ওই ফাইনালে ওপেন করতে নেমে ইয়ান বোথাম রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান, আরেক ওপেনার অধিনায়ক গুচ ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি। এরপরই যেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে হেরে যায় ইংলিশরা। ক্রিকেট থেকে বড় চোটটা তখনই পেয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তারপর ক্রিকেটে উত্তেজনায় ভাটা পড়তে থাকে।

তবে এবারের ইংল্যান্ড দলকে বলা হচ্ছে গুচের দলের চেয়েও শক্তিশালী। আগের ওই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বিশ্বকাপে খেলতে নামছে ইংল্যান্ড। কিন্তু এই দল নিয়ে, বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা কোথায়?

রহস্য অন্য জায়গায়! ইংলিশরা কতটা ক্রিকেটপ্রেমী তা বাহ্যিকতা দেখে বোঝার উপায় নেই। তাদের ক্রিকেট প্রেম বোঝা গেল গতকাল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ওভাল স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের বাইরে দেখে ভিতর চিত্র আঁচ করাও যায়নি। লোকজন নেই বললেই চলে বাইরে। কিন্তু ভিতরে ঢুকে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই! গ্যালারিতে লোকে-লোকারণ্য। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ। সত্যিই এক অন্যরকম এক দৃশ্য।

ভদ্রতা কি, শৃঙ্খলা কি, তার পারফেক্ট উদাহরণ হতে পারে ইংলিশরা। স্টেডিয়ামে যখন প্রবেশ করছে, কোনো ধাক্কাধাক্কি নেই। এমনকি উচ্চ স্বরে কথাও বলছে না কেউ কারও সঙ্গে। নিজেকে আগে ঢুকতে হবে এমন নয় বরং অন্যকে আগে সুযোগ দেওয়ার জন্য যেন তারা উদগ্রীব। সত্যিই ইংলিশদের ক্রিকেট উন্মাদনা অন্যরকম।

স্কোর কার্ড

ইংল্যান্ড ইনিংস

৩১১/৮ (৫০ ওভার) স্টোকস ৮৯, মরগান ৫৭ এনগিডি ৩/৬৬।

দ. আফ্রিকা ইনিংস

 ২০৭/১০ (৩৯.৫ ওভার) ডাউসন ৫০, আর্চার ৩/২৭

সর্বশেষ খবর