মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রত্যেক ম্যাচই ফাইনাল!

মেজবাহ্-উল-হক, লন্ডন থেকে

প্রত্যেক ম্যাচই ফাইনাল!

বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সাফল্যের পেছনে রহস্য কী? উত্তরে, অনেকের কাছে অনেক কিছু মনে হতে পারে! কেউ বলতে পারেন, কঠোর অনুশীলন! কারও মনে হচ্ছে, সিনিয়রদের ধারাবাহিকতা। কেউ বা ভাবতে পারেন মাশরাফি বিন মর্তুজার জাদুকরী নেতৃত্ব!

সবই ঠিক আছে! কিন্তু প্রধান কারণ হচ্ছে- প্রত্যেক ম্যাচকেই ফাইনাল হিসেবে চিন্তা করা! দলীয়ভাবে ক্রিকেটাররা যেমন চিন্তা করেন এটাই তাদের ফাইনাল, হারলেই সব শেষ! তেমনি ব্যক্তিগতভাবেও ক্রিকেটাররা এমন চিন্তাই করেন, ফাইনাল ম্যাচে তাকে পারফর্ম করতেই হবে!

‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ খেলার চিন্তাটাই অন্য দলের চেয়ে টাইগারদের অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে টুর্নামেন্ট নিয়ে ভাবনা মাথায় রাখেননি মাশরাফিরা। তাদের ধ্যান-জ্ঞান ছিল কেবল প্রতিপক্ষ দল।

দুরন্ত এক জয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা অসাধারণ হয়েছে। এখন ক্রিকেটারদের চিন্তায় কেবল নিউজিল্যান্ড! এভাবেই টুর্নামেন্টে এগিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ দল।

নিউজিল্যান্ড মানেই মধুর এক প্রতিপক্ষ। যাদের বিরুদ্ধে আছে মধুর কিছু স্মৃতি। ঘরের মাঠে কিউইদের দু-দুবার হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে। আবার কষ্টের স্মৃতিও কম নয়। সব শেষ নিউজিল্যান্ড সফর গিয়ে তাদের সামনে যেন দাঁড়াতেই পারেনি মাশরাফিরা।

তবে বিশ্বকাপের এই ম্যাচটি সামনে রেখে ক্রিকেটাররা কখনোই কষ্টের কথা মনে রাখতে চাইবেন না! খেলা যেহেতু ইংল্যান্ডের মাটিতে, তাই সুখ স্মৃতি রোমন্থন করাই বুদ্ধিমানের কাজ!

মনে আছে, ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেই ম্যাচটির কথা! ওয়েলসের কার্ডিফে সেই ঐতিহাসিক জয়টি কী চোখের সামনে ভাসছে না!

২৬৬ রানের বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৩৩ রানেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে চলে যান। কে ভেবেছিল সেই ম্যাচে লুকিয়ে ছিল এত রোমাঞ্চ! পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান। দুই তারকাই সেঞ্চুরি তুলে নেন। বাংলাদেশও দারুণ এক জয়ে প্রথমবারের মতো উঠে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে।

বারবার যে একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হবে এমন নয়! কারণ প্রস্তুতি ম্যাচে টপ ফেবারিট ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সেই ভারতের কাছে কিন্তু বাংলাদেশ আবার উড়ে গিয়েছিল। তবে এটা তো ঠিক যে, প্রস্তুতি ম্যাচ ও মূল লড়াই এক বিষয় নয়!

প্রস্তুতি ম্যাচে পরাজয় যে বাংলাদেশের জন্য ‘লাকি চ্যান্স’ তা তো বারবারই প্রমাণিত হচ্ছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে সিডনির এক ক্লাব দলের সঙ্গে কয়েক বার হেরেছিল টাইগাররা। তারপর মূল আসরে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছিল। বড় উদাহরণ তো নিকটেই আছে। আয়ারল্যান্ডের ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে গো-হারা হয়েও ত্রিদেশীয় সিরিজে বাজিমাত।

সে যাই হোক, প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দারুণ জয়ে বাংলাদেশ এখন মানসিকভাবে বেশ চাঙ্গা। গতকাল পুরো বিশ্রামে ছিলেন ক্রিকেটাররা। আজ তারা অনুশীলন করবেন। তবে মাশরাফিদের অনুশীলন শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় (স্থানীয় সময় বিকাল ৬টা)।

বাংলাদেশের পরিকল্পনা একই রকম থাকবে। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত টাইগাররা। তবে ক্যাপ্টেন মনে করে ম্যাচ জিততে হলে কেবল নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিলেই হয় না, ভাগ্যের সহায়তাও চাই কিছুটা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ের পর এমন দাবি মাশরাফির, ‘আমি ভাগ্যে একটু বিশ্বাসী। আসলে পরিকল্পনা সবাই করে। পরিকল্পনা করলেই যে কাজে আসবে তা নয়, এ জন্য ভাগ্যও লাগে। পুরো ম্যাচে যে কয়েকটা বল টার্ন করেছে, তার থেকে বেশি টার্ন করেছে ফাফ ডু পেসিসের উইকেটের বেলায়। এটাকে ভাগ্য ছাড়া আর কী বলা যায়! এ ধরনের টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য ভালো খেললেই হবে না, ভাগ্যকে পাশে লাগবে।’

নিউজিল্যান্ড দলে দ্রুত গতির বোলার আছে, পাওয়ার হিটার ব্যাসম্যান আছে, ফিল্ডাররাও দুর্দান্ত। কিন্তু বাংলাদেশ দলের আছে অদম্য মানসিকতা। এই দলে সিনিয়রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখন তরুণরাও পারফর্ম করছেন। আর প্রতিপক্ষকে ভয় ধরানোর জন্য আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তো আছেনই! সাকিবকে নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত ক্যাপ্টেন মাশরাফি, ‘সাকিব আমাদের সেরা খেলোয়াড়, বিশ্বেও সেরা। শুধু এটুকুই বলব না। সে এমন খেলোয়াড়, যাকে সবাই ভিন্ন চোখে দেখে।’

আজ অথবা আগামীকাল এখানে ঈদুল ফেতর। দেশে ঈদ নিয়ে যতটা উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা থাকে বিদেশের মাটিতে তার ছিঁটে ফোটাও নেই। তবে এবার বিদেশের মাটিতেই অউদযাপন করতে চান মাশরাফিরা। আর সেটা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দি¦তীয় জয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকাল নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে সেটাই তো হবে সবচেয়ে বড় ‘ঈদ উৎসব’।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর