শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওভালে এক দুঃখগাথা

সুখ আর দুঃখ নাকি পাশাপাশি থাকে! যে ওভালে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে উড়ন্ত শুরু করল বাংলাদেশ, সেই একই মাঠে পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২ উইকেটের হারে বিষাদে নীল!

ইস্! মুশফিকুর রহিম কেন যে রান আউট মিস করেছেন! কেন যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজে রান আউট হয়েছেন! তামিম ইকবালের স্টাইকরেট ভালো না! মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটিং যাচ্ছেতাই! মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ওয়ানডের মেজাজে ছিলেন না! নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে এমন অনেক বিষয়ই সামনে চলে আসছে। আসাটাই তো স্বাভাবিক। ম্যাচে যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জয়ের সুযোগ ছিল। বার বার মনে পড়ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটির কথা। বিশেষ করে ম্যাচের শেষ দৃশ্যটি স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠছিল।

অ্যাডিলেডে সেদিন এসেছিল নাটকীয় এক জয়। ১৫ রানে হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের। দুই ম্যাচের পার্থক্যটা দেখুন! অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে সেই ম্যাচে শেষ মুহূর্তে রুবেল এসে এক মায়াবী স্পেলে ৩ বলে ২ উইকেট নিয়ে বাজিমাত করে দেন! কিন্তু এ ম্যাচে মুস্তাফিজ কিংবা সাইফউদ্দিনের মধ্যে কেউ একজন ‘অ্যাডিলেডের রুবেল’ হতে পারেননি। ওভালের হারের ম্যাচ থেকে আরও বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে চলে এসেছে- ব্যাটিং স্বর্গেও কেন তামিম ইকবাল এতটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেন। হয়তো তাকে বলেই দেওয়া হয়েছিল সাবধানে দেখেশুনে ব্যাট চালাবেন। তা ছাড়া সৌম্য সরকার তখন ঝড়োগতিতেই রান তুলছিলেন। তাই বলে কি তামিমের মতো এক ড্যাসিং ওপেনার এই টি-২০ যুগেও ইংল্যান্ডের এই ৩৮ বল খেলে মাত্র ২৪ রান করবেন! কোচ স্টিভ রোডসের কি একবার মনে হয়নি লিটন দাসের কথা! এই কন্ডিশনেই সবশেষ দুই ম্যাচে ৭৬ ও ৭৩ রানের দুটি ইনিংস খেলেও দলে সুযোগ পাচ্ছেন না কম্বিনেশনের জন্য এই ওপেনার। তাই বিলাসিতা করার সুযোগ নেই তামিমের। মুশফিককে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। বড় আবেগি এক ক্রিকেটার। মাঠে বেশি আবেগপ্রবণ থাকেন বলে তার ভুলভ্রান্তিও বেশি হচ্ছে ইদানীং। যখন বুঝতেই পারলেন, সাকিবের সঙ্গে তার জুটিটা জমে উঠেছে। নিউজিল্যান্ডের পেসারদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়েছে। ঠিক দুই বছর আগে একই অবস্থা করেছিলেন সাকিব-মাহমুদুল্লাহ জুটি কার্ডিফে। কাল একই সুযোগ এসেছিল সাকিব-মুশফিক জুটির সামনেও। কিন্তু হলো না মুশফিকের বোকামির জন্য।

সাকিবকে সঙ্গ না দেওয়ার জন্য মোহাম্মদ মিথুনও কম দায়ী নন! মোসাদ্দেক নেমে কি করলেন? ২২ বলে খেললেন ১১ রান। ভুলে গেলে চলবে না যে, দলে তিনি সুযোগ পেয়েছেন সাব্বির রহমানের জায়গায়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের কন্ডিশনে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করার পর কেন সাব্বির এই ম্যাচে সে সুযোগ পেলেন না, সেটা একটা রহস্য!  মাহমুদুল্লাহর কাছে এমন ব্যাটিং মানা যায় না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ৪১ বল থেকে করলেন মাত্র ২০ রান। তবে এমন হতাশার মধ্যে স্বস্তি হচ্ছে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচে দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। সাইফউদ্দিনের ব্যাটিংও ছিল চোখে পড়ার মতো। সবাই আর একটুখানি সতর্ক হয়ে খেলতে পারলে ২৪৪ রানের স্কোর লাইনটা হতে পারত ২৭০ থেকে ৩০০। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ২০-৩০ রানের কমের কারণেই ম্যাচটা হাত থেকে ফসকে গেল। সব কিছুর পরও এমন এক কা-ের জন্য মুশফিককে ভিলেন হিসেবে দেখা ঠিক না! কারণ ক্রিকেটে এমন ভুল হতেই পারে। তার এক ভুলের জন্য যদি বাংলাদেশ হেরেও গিয়ে থাকে, এই মুশফিকই কিন্তু অনেক জয়ের রূপকার। হয়তো সামনেও অনেক ম্যাচই আমরা মুশফিকময় দেখতে পারব। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি যেমন একটি রান আউট মিস করেছেন তেমনি দুর্দান্ত দুটি ক্যাচও কিন্তু নিয়েছেন। ভাগ্য সহায় থাকলে সেগুলোও হতে পারত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কিন্তু হয়নি।

কে জানে হয়তো ওভালের দুঃখগাথা কার্ডিফে এসে সুখকাব্য তৈরি করতে পারে। আজ যে সোফিয়া গার্ডেনে বাংলাদেশ খেলতে নামছে সেখানে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আশরাফুলের এক বীরত্ব গাথায়। বছরদুয়েক আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স এই কার্ডিফেই নিউজিল্যান্ডকে হতাশ করে দিয়ে বাংলাদেশ সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর দুরন্ত সেঞ্চুরিতে সেমিফাইনালে উঠেছিল।

ওয়েলস তো বাংলাদেশের জন্য এক রোমাঞ্চের দেশ। অনেকে ভাবছেন প্রতিপক্ষ ভয়ঙ্কর ‘ইংল্যান্ড’। তাতে কি? বাংলাদেশ যে এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাজ্যে পা রেখেছে। সব দলকেই হারানোর সামর্থ্য থাকতে হবে। সেটা মাশরাফিদের আছেও! তাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ে শুরু যেমন বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে নিয়ে গেছে, তেমনি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কষ্টের হারটা দারুণভাবে শিক্ষা দিয়েছে, এবার নতুন উদ্যমে শুরু করতে। আর সেটা হোক আজ থেকেই। এই স্বপ্নিল কার্ডিফই হয়ে যাক ল্যান্ডমার্ক!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর