রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাগবির শহরে ক্রিকেট উন্মাদনা

ভিক্টোরিয়া গার্ডেন ও বিউটি পার্কের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে টাফ নদী। একটি ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে দুই পার্কের  ভিক্টোরিয়ার ঠিক পাশেই সোফিয়া গার্ডেন। ওয়েলসের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু। বাংলাদেশের লাকি ভেন্যু বলে পরিচিত।

বিউটি পার্কের পাশে এবং টাফ নদীর পাড়ে অবস্থিত অপূর্ব সুন্দর মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম। নান্দনিক এই স্টেডিয়াম ঘিরেই কার্ডিফের রাগবি ও ফুটবল চলে। এই স্টেডিয়াম হচ্ছে ওয়েলস জাতীয় রাগবি ইউনিয়ন দলের হোম ভেন্যু। ১৯৯৯ সালে এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাগবি বিশ্বকাপ। ওয়েলস জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান ভেন্যুও এই মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম।

বিশ্ব রাগবি র‌্যাঙ্কিংয়ে ওয়েলস এখন দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ড চতুর্থ। তবে শক্তি সামর্থ্যরে দিক থেকে রাগবিতে ইংলিশদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ওয়েলস। মজার বিষয় হচ্ছে, রাগবিতে একে অপরের  চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ক্রিকেটে যুক্তরাজ্যের এই দুই দেশ এক হয়ে খেলে।

গ্রেট ব্রিটেন যে চারটি স্বাধীন দেশ (ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড) নিয়ে গঠিত ফুটবলে তাদের আলাদা আলাদা দল আছে। আবার ক্রিকেটে আলাদা স্কটল্যান্ড। আলাদা দল হিসেবে তারা বিশ্বকাপেও খেলেছে। ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকে আবার এক হয়ে যায় চার দেশ। 

ওয়েলসের যত আবেগ-উত্তেজনা সবই যেন রাগবি কেন্দ্রিক। যদিও এখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি দেশটি। তবে অন্যান্য টুর্নামেন্টে তারা দুর্বার। শক্তিশালী দেশ ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইতালি, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে খেলা ছয় জাতি চ্যাম্পিয়নশিপে এখন চ্যাম্পিয়ন ওয়েলসই। ইউরোপের এই দেশটির রাগবি ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৮৮১ সালে ওয়েলস রাগবি ইউনিয়ন গভার্নিং বডি গঠিত হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই তারা ইংল্যান্ডকে ৮-০ স্কোরের ব্যবধানে হারায়। ওয়েলসের সবচেয়ে বড় জয় জাপানের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে তারা এশিয়ার দেশটিকে ৯৮-০ ব্যবধানে হারিয়েছে।

ফুটবলেও উত্তেজনা কম নয়! ফিফা র‌্যাঙ্কিং এখন তাদের অবস্থান ১৯তম। ২০১৭ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগের ফাইনাল হয়েছিল এই মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামেই। ওই ফাইনালে ঘরের ছেলে গ্যারেথ বেলের রিয়াল মাদ্রিদ জয় পাওয়ায় ওয়েলস যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল।

তবে ফুটবল ঘিরে কালেভাদ্রে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে কার্ডিফ, কিন্তু রাগবির উন্মাদনা যেন আকাশ ছোঁয়া। মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে রাগবি ম্যাচ মানেই পুরো নগরীতে শুরু হয়ে যায় উৎসব।

ক্রিকেট জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে রাগবির ধারে কাছেও নেই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে এখানেই ছিল বাংলাদেশের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। একটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকটি ভারতের বিরুদ্ধে। তখন ওয়েলসের রাজধানী শহরকে দেখে মনেই হয়নি এই শহরে বিশ্বকাপের মতো বড় আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। সিটি সেন্টারে প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে বিশ্বকাপের ফেস্টুন লাগানো আছে। শহর জুড়েই যেন উৎসব উৎসব আমেজ!

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচ! স্বাগতিক দলের খেলা বলেই কিনা কার্ডিফে কালকের চিত্রটা ছিল অন্যরকম। শান্তিপূর্ণ নিশ্চুপ শহরটি গতকাল কোলাহলে মুখরিত হয়ে যায়। কার্ডিফবাসীর  ততটা আগ্রহ না থাকলেও ইংলিশ এবং বাঙালিরা মিলে মাতিয়ে রেখেছিল পুরো শহর।

ওয়েলসে রহস্যময় হচ্ছে এখানকার আবহাওয়া। একদিন আগেই ঝুমবৃষ্টি। বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলনই করতে পারেননি। অথচ সেই কার্ডিফেই গতকাল সকাল থেকে চনমনে রোদ। তবে টসের আগ পর্যন্ত খানিকটা মেঘ ছিল আকাশে। সেসঙ্গে ছিল ঠান্ডা বাতাস।

সকালে  টস জিতে টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ভাবলেন, উইকেট তো দুদিন ঢাকা ছিল তাই প্রথমে বোলিং করলে মন্দ হয় না। ময়েশ্চারকে কাজে লাগিয়ে যদি প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে কয়েকটি উইকেট নিতে পারলে  নির্ঘাত ইংল্যান্ড বিপদে পড়ে যাবে!

কিন্তু ভাগ্যে অতি বিশ্বাসী মাশরাফির সঙ্গে যেন প্রতারণা করল গতকাল ভাগ্যই! দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো ব্যাট হাতে নামার পরই ওঠে রোদ। তারপরও উইকেটে যে ময়েশ্চারটুকু ছিল তা থেকে বাংলাদেশের বোলাররা যাতে বাড়তি সুবিধা নিতে না পারেন সেজন্য দুই ইংলিশ ওপেনার খুব সাবধানতার সঙ্গে শুরু করলেন। ইনিংসের অষ্টম ওভার থেকে চলতে থাকে ঝড়। ওপেনার জেসন রয় একাই খেলেন ১৫৩ রানের ইনিংস। আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো আউট হওয়ার আগেই করেছেন ৫১ রানে। দুই ইংলিশ ওপেনারের দুরন্তপনা এবং বাংলাদেশের ফিল্ডিং মিসের দিনে সোফিয়া গার্ডেনে হলো রান বন্যা। জেসন ও বেয়ারস্টোর ব্যাটিং দেখে ভীষণ খুশি ইংলিশরা। যেন তখনই শুরু হয়ে যায় উৎসব। রাগবির শহরে গতকাল চলল ক্রিকেট উন্মাদনা! শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে যায় ইংলিশরা।

সর্বশেষ খবর