রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

তরুণরা কেন ভীত!

সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে ইনজুরির ‘অজুুহাত’ দেখিয়ে সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেকের না খেলা নিয়ে

সাউদাম্পটনের ‘রোজ বোল’ স্টেডিয়ামে তখন ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে চাপের মুখে রেখেছে আফগানিস্তানের বোলাররা। প্রেসবক্সে ভারতীয় সাংবাদিকরা খানিকটা উদাসীন! ম্যাচের চেয়ে অন্য প্রসঙ্গই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছিল আলোচনায়। কথা হচ্ছিল এবারের বিশ্বকাপে আধিপত্য বিস্তার করা দল ও ক্রিকেটারদের নিয়ে!

আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশ ও সাকিব আল হাসান! ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশীষ বিশ্বাস বলছিলেন, ‘কী দুর্দান্ত ফর্মে সাকিব আল হাসান। ভাবাই যায় না! বাংলাদেশও কী চমৎকার খেলছে।’

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এখন গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই নায়ক! ৫ ম্যাচে ৪২৫ রান। বল হাতে ৫ উইকেট। অবিশ্বাস্য, অসাধারণ পারফরম্যান্স সাকিবের! শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৩৮১ রান করার পরও ছিল অস্বস্তিতে। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ যখন ঝড়ো গতিতে রান তুলছিল তখন যেন অসি ফিল্ডারদের মুখচ্ছবি ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। হারলেও এটাই তো বাংলাদেশের বড় অর্জন। পঞ্চপাণ্ডব তথা মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহদের মতো পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন বলেই এবারের আসরে বাংলাদেশ শুরু থেকেই সবার নজর কাড়ছে!

চমৎকার পারফর্ম করছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নিজের প্রথম ম্যাচেই ৯৪ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলেছেন লিটন দাস। দারুণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মোসাদ্দেকও। সাফউদ্দীনের ধারাবাহিকতাও চমৎকার। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট।

বাংলাদেশ হারুক বা জিতুক, তরুণদের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলার উপায় নেই। বরং সিনিয়রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা ভালো খেলছেন বলেই তো দল হিসেবে বাংলাদেশ এখন আলোচনায়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এই তরুণদের মানসিকতা নিয়ে!

বড় দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে কেন ভয় পান তরুণরা? টনটনে দারুণ পারফর্ম করার পর ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ বলেছেন, ‘ঘাবড়ে গিয়েছিলাম!’ লিটন বলেছেন, ‘প্রথম দিকে নার্ভাস ছিলাম!’ আর সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে ইনজুরির ‘অজুুহাত’ দেখিয়ে সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেকের না খেলা নিয়ে! তাদের ইনজুরি কতটা গুরুতর ছিল তা ফিজিও ভালো বলতে পারবেন!

আধুনিক ক্রিকেটে শতভাগ ফিটনেস নিয়ে কে খেলেন? সবাইকে কিছু না কিছু ইনজুরি নিয়েই খেলতে হয়! তার বড় প্রমাণ তো মাশরাফি। ইনজেকশন নিয়ে খেলতে গিয়ে সাকিবের হাতে তো ইনফেকশনই হয়ে গিয়েছিল। ঠিকমতো থ্রো করতে পারেন না তারপরও এই বিশ্বকাপে খেলছেন মাহমুদুল্লাহ। ইনজুরি আছে মুশফিকেরও। মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দীনের ইনজুরি কি এতই বেশি ছিল! তবে এখানে ইনজুরি বড় বিষয় নয়, কে না খেলতেই পারেন। তবে আগে থেকেই তাদের না খেলতে চাওয়ার মানসিকতা আহত করেছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের! প্রশ্ন উঠেছে কেন আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা ভয় পান?

বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠুক না উঠুক সেটা কোনো বিষয় নয়! সত্য হচ্ছে, টাইগারদের দেশে এখন ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপছে! বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে কারও মুখে হাসি থাকছে না! বিষয়টা তরুণ ক্রিকেটারদের অনুধাবন করা জরুরি! ক্রিকেটাররা তো আর ‘সুপারম্যান’ নয়! প্রতিদিন সবাই পারফর্ম করবে এবার আশা করাও ঠিক না। উত্থান-পতন থাকবেই। তবে এটা মনে রাখতে হবে ক্রিকেটে এখন আর কাউকে ভয় পাওয়ার সুযোগ নেই। সাবধানতা, সচেতনতা থাকবে কিন্তু কাউকে সমীহ করার সময় নেই! ভয় পেয়ে কারও কাছে মাথা নত করার কিছু নেই। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর মতো এদেশের তরুণরাও লড়াই করবে বীরের মতো। তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা তো সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে ‘দুর্মর’ কবিতার চারটি চরণ-

‘সাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়!

জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর