মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

অন্যের দিকে তাকিয়ে কী লাভ!

‘সত্যি, ক্রিকেটই পারে সবাইকে এক করে দিতে। এই ম্যাচে যেমন পুরো এশিয়া এক হয়ে গিয়েছিল। এটা দেখতেও ভালো লাগে।’

শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত হেরে যাওয়ায় যেন আক্ষেপের আগুনে জ্বলছে গোটা এশিয়াবাসী! ভারতীয় সমর্থকদের কথা, কেন ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যাবে তাদের দল! শেষ দিকে ধীরগতির ব্যাটিং করার জন্য সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে মহেন্দ্র সিং ধোনির মুণ্ডু পাত! বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের আবেগী সমর্থকদের বিশ্বাস, শেষের দিকে ইচ্ছা করে হেরেছে ভারত!

বার্মিংহামে গতকাল সংবাদ সম্মেলেন মাশরাফির সামনে এমন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন ভারতীয় এক সাংবাদিক। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধোনিদের পরাজয়ে কতটা ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের? টাইগার ক্যাপ্টেনের সোজা সাপ্টা উত্তর, ‘অন্যের ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে কী লাভ? আমরা কেমন করছি সেটাই আসল! বরং এটাই অনেক ভালো যে আমরা যদি দুই ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালে যেতে পারি সেটা অনেক বেশি আনন্দের হবে। এটা আমাদের জন্য অনেক ভালো চ্যালেঞ্জ। এমন চ্যালেঞ্জ জিততে পারলে আনন্দও অনেক বেশি।’

ক্রিকেটকে এখন শান্তির দূত হিসেবে দেখা যেতেই পারে! কেন না কয়েক মাস আগেই যে ভারত-পাকিস্তান প্রায় যুদ্ধই বেঁধে গিয়েছিল, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে দুই দলের সমর্থকরা যেন এক হয়ে গিয়েছিল। ভারত জিতলে লাভ বাংলাদেশেরও ছিল, তাই যোগ দিয়েছিল টাইগার সমর্থকরাও। এ বিষয়টা বেশ ভালো লেগেছে মাশরাফির, ‘সত্যি, ক্রিকেটই পারে সবাইকে এক করে দিতে। এই ম্যাচে যেমন পুরো এশিয়া এক হয়ে গিয়েছিল। এটা দেখতেও ভালো লাগে।’

তবে একাত্মতার কথা ভুলে আজ আবার প্রতিশোধের ঝাঁঝ বার্মিংহামে। সেমিফাইনাল নিশ্চিত না হলেও ভারতের পয়েন্ট এখন ১১। নেট রানরেটও ভালো। তাই সেমির রাস্তাটা তাদের জন্য পরিষ্কারই আছে। কিন্তু আজ হারলেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে বাংলাদেশের। সব সমীকরণ মাথায় রেখেই খেলতে নামছেন মাশরাফিরা।

আজ খেলা হবে সেই উইকেটে যেখানে ‘ভারত-ইংল্যান্ড’ ম্যাচ হয়েছিল! এমন উইকেটে হয়তো কোহলিরা মানসিকভাবে খানিকটা এগিয়ে থাকবে। তবে ব্যবহৃত উইকেটেই তো ভালো খেলে বাংলাদেশ। কেননা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম যে জয় এসেছিল সেই ওভালে ঠিক আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরেছিল তারা। সাউদাম্পটনেও একই ঘটনা হয়েছে। একই পিচে আগের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে হেরেছিল আফগানিস্তান। তাহলে এবার ভারতের বিরুদ্ধে কেন জয় নয়!

তবে কোনো পরিসংখ্যান বা ইতিহাস দেখে মাশরাফি যেমন কষ্টও পান না, তেমনি আবেগতাড়িত হন না! নির্দিষ্ট দিনে কতটা ভালো খেলা যায় সেটাই প্রধান।

আজ আসল লড়াইটা ভারতের ব্যাটসম্যান ও টাইগার বোলারদের মধ্যে। রোহিত-কোহলিদের কিভাবে আটকাতে হয়, তার কৌশলটা  অবশ্য ইংল্যান্ডের কাছ থেকেই নিতে পারে বাংলাদেশ! এই উইকেটে স্পিনারদের ভূমিকাটা খুবই বেশি নেই। আগের ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররাই অনেক রান দিয়েছে। তাই আজ পেসারদের নিয়েই পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।’

মুস্তাফিজের স্লোয়ারের সঙ্গে মাশরাফি ও সাইফউদ্দিনের সুইং! রুবেল হোসেনের খেলার সম্ভাবনা খুবই কম। ভারতের বিরুদ্ধে মধুর স্মৃতি আছে মাশরাফির। ২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের ম্যাচে ৩১ রান এবং ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাশরাফি। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের নায়কও মাশরাফি। মাত্র ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। আর মুস্তাফিজ তো ভারতীয়দের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে ধোনির দলকে প্রথমবারের মতো সিরিজে হারিয়েছিল তা মুস্তাফিজের দুর্ভেদ্য বোলিংয়ের কল্যাণেই। এই দুই পেসারের সঙ্গে যোগ হয়েছেন ‘কিপ্টেমি’তে ওস্তাদ সাইফউদ্দিন।

তবে ভারতীয়দের ভয় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত এখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মাশরাফির মতে শুধু বাংলাদেশের নয়, এই বিশ্বকাপেরই সেরা পারফরমার সাকিব, ‘প্রতিটি ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছে সে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই সেরা সাকিব।’

আজকের ম্যাচে টস একটা বড় ফ্যাক্টর  হয়ে যেতে পারে! ব্যবহৃত উইকেট বলে দুই দলই চাইবে প্রথমে ব্যাটিং করতে। তিন শতাধিক রান তো করতেই হবে! তবে শুরুটা ভালো করা জরুরি। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল নিজের মতো করে খেলতে পারেননি। হয়তো আজই সেরা ফর্মে দেখা যেতে পারে ড্যাসিং ওপেনারকে। এছাড়া মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, লিটন, সৌম্যরা তো আছেনই। আর সাকিব তো একাই একশো! সব মিলে দারুণ প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামছে বাংলাদেশ।

তবে এই ম্যাচ ঘিরে বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রস্তুতিটা চোখে পড়ার মতো। বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগঠন ‘মাটি’ আজ একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। বার্মিংহাম সিটি সেন্টার থেকে এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড- মিছিল নিয়ে এই সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে তারা খেলা দেখতে আসবেন! কয়েক দিন থেকে এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারণাও চলছে। বিদেশের মাটিতে লাল-সবুজের দলকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছে এমন -মিছিল!

সর্বশেষ খবর