বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

যন্ত্রণা কেবল সাকিবের!

এই আসরে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। তিন ম্যাচেই জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। ভারতের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ জয় পেত যদি সাকিব আবারও সেরা পারফর্ম করতে পারতেন?

এজবাস্টনের প্রেসবক্সে দেখা হয়ে যায় পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সময়। তখন ব্যাটিং করছিলেন সাকিব আল হাসান। কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, দৃষ্টি তার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দিকে।

কেমন দেখছেন সাকিবকে?

এমন প্রশ্নে স্মিথ হেসে পাকিস্তানের সাবেক গতি তারকা বললেন, ‘অসাধারণ! কোনো সন্দেহ নেই এবারের আসরে সাকিবই সেরা তারকা! এমন একজন ক্রিকেটারের দল সেমিফাইনালে উঠতে না পারাটা হবে তার জন্য খুবই হতাশার। খুবই কষ্টের।’

পাশ থেকে ভারতীয় এক সাংবাদিক বললেন, ‘এই সাকিব যদি ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতেন, তাকে নিয়ে পুরো বিশ্ব মাথায় করে নাচতো। কি সুপার ক্রিকেটার রে বাবা! ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং -ক্রিকেটের তিন বিভাগেই সেরা!’

এই বিশ্বকাপে সাকিবের রান এখন ৫৪২, আর উইকেট ১১টি। গতকাল বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন এক মাইলফলকে পা রেখেছেন, যেখানে বিশ্বকাপের ইতিহাসে আগে কখনো কোনো ক্রিকেটার পৌঁছাতে পারেননি। ব্যাট হাতে পাঁচ শতাধিক রান এবং বল হাতে দশের অধিক উইকেট শিকার করা বিশ্বের প্রথম অলরাউন্ডার সাকিব।

এমন একজন অসাধারণ ক্রিকেটার থাকার পরও কিনা সেই দলটি এক ম্যাচ আগেই বিশ্বকাপের দৌঁড় থেকেই ছিটকে পড়লো! বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ মিশন নিয়ে যেমন অনেক আত্মতৃপ্তি আছে, তেমনি অনেক প্রশ্নও আছে!

এটা সত্য যে, এই আসরের ১০ দলের মধ্যে শক্তি সামর্থ্যে অনেক এগিয়ে ছিল তিন মোড়ল অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড। বাকি সাত দলের সঙ্গে তাদের ব্যবধান অনেকটা এমন যে, ১০০র মধ্যে ওদেরকে ৯০ মার্ক দিলে বাকিদের ৬০ করে পাওয়াও কঠিন। তাই আগে থেকেই তিন দলের জন্য সেমিফাইনালের তিনটি আসর যেন বরাদ্দই ছিল! বাকি একটি স্থানের  জন্য লড়াই করবে সাত দল, এবারের বিশ্বকাপের হিসাব অনেকটা এমনই ছিল। আর বাকিদের মধ্যে এখানে বেশ এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টাইগারদের শুরুটাও হয় অসাধারণ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট! নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তীরে এসে তরী ডুবে যায়! তারপর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বৃষ্টি বাধায় পয়েন্ট হারাতে হয়েছে।

সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শেষ আশা ছিল দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়! হয়তো সেটাও শেষ চারে খেলার জন্য যথেষ্ঠ নয়। তবে তখন আর কোনো আক্ষেপ থাকতো না। কিন্তু বাংলাদেশ যে জয়ের মঞ্চ তৈরি করেও হেরে গেল ভারতের বিরুদ্ধে। এক ম্যাচ আগেই লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে যেতে হলো!

এই আসরে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। তিন ম্যাচেই জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। ভারতের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ জয় পেত যদি সাকিব আবারও  সেরা পারফর্ম করতে পারতেন?

হ্যাঁ, দোষ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারেরই! বার্মিংহামে যেখানে আগের ম্যাচে ভারতীয় স্পিনাররা বেদম প্রহার খেয়েছে সেই মাঠে সেই একই উইকেটে খেলা হয়েছে। আগের ম্যাচে ভারতের সেরা স্পিনার চাহাল দিয়েছিলেন ৮৮ রান। সেখানে কাল ১০ ওভার বোলিং করে সাকিব দিয়েছেন মাত্র ৪১ রান। সঙ্গে একটি উইকেটও  নিয়েছেন। প্রতিপক্ষ দলের স্কোর যখন ৩১৪ হয় তখন ওভার প্রতি ৪ করে দেওয়াটা একজন বোলারের জন্য বড় গর্বের বিষয়ই।

ব্যাট হাতে সাকিব খেলেছেন ৬৬ রান! কেন তিনি এ ম্যাচেও সেঞ্চুরি করতে পারলেন না! সাকিব সেঞ্চুরি করলে তো ম্যাচটা জিতেই যেত বাংলাদেশ? তাই দোষ সাকিবেরই!

হয়তো দল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় নিজের ওপর এমন আক্ষেপ হচ্ছে সাকিবের! কিন্তু  অন্যদের মধ্যে কি এমন আক্ষেপ হচ্ছে না? বিশ্বকাপে কেন পুরো দলকে একা সাকিবের টানতে হবে?

তামিম ইকবাল- বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। এ বিষয়ে কারও কোনো সংশয় নেই। কিন্তু সেই তামিম কি করলেন বিশ্বকাপে! সাত ম্যাচে একবারও নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না? একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বটে। কিন্তু সেটাও ছিল দলের হয়ে বেমানান। রানের চেয়ে অনেক বেশি বল খেয়ে ফেলেছেন। প্রতিটি ম্যাচেই তামিম আউট হয়েছেন উইকেটে সেট হওয়ার পর। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে একজন ওপেনার হিসেবে যে আগ্রাসী ভাবটা থাকা দরকার সেটা সৌম্যর ছিল। তা ছাড়া দুই ম্যাচে সৌম্য দারুণ বোলিংও করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন দলের সেরা বোলার। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচেও প্রথম উইকেট নিয়েছেন। সৌম্য তার জায়গা থেকে শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে নিজে খুঁজে পাননি তামিম। এছাড়া সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক, মুস্তাফিজ, লিটন দাসরাও তাদের মতো করে চেষ্টা করেছেন। মুশফিক সেঞ্চুরি করেছেন ঠিকই দলের আসল ম্যাচে তিনি নিষ্প্রভ। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে মাশরাফিকে নিয়ে, পুরো টুর্নামেন্টই যে হতাশার কাটলো নড়াইল এক্সপ্রেসের।

সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে  ইংল্যান্ড এসে আগেই বিদায়ে কষ্ট হচ্ছে সবারই। তবে বেশি কষ্ট হচ্ছে সাকিবেরই। নিজে পুরো বিশ্বকে চমকে দিলেও বাদ হয়ে গেল তার দল। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়তো না পারছেন কাউকে কিছু বলতে, না পারছেন কিছু সহ্য করতে! সত্যিই এ যেন এক অদৃশ্য যন্ত্রণা!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর