শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দ্য ফিজ-ই লর্ডসের লর্ড

দ্য ফিজ-ই লর্ডসের লর্ড

মুস্তাফিজের আরও একটি উইকেট শিকার। তাকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন সতীর্থরা। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে পাঁচটি করে উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন ‘দ্য ফিজ’ -এএফপি

‘শাবাশ বাংলাদেশ, শাবাশ টাইগার্স! তোমাদের সাফল্যে আমরা ধন্য!’-  লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে হন্তদন্ত হয়ে গতকাল লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রবেশ করছিলেন ইবরাহিম মিয়া। বাড়ি সিলেটে। প্রবাসী এই বাঙালি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান নিয়ে থাকেন ইস্ট লন্ডনে। গতকাল তাদের তিনজনের হাতে ছিল তিনটি প্ল্যাকার্ড। স্ত্রীর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা-মাশরাফি তুমি গ্রেট! ছেলের পছন্দ সাকিব আল হাসান! তাই প্ল্যাকার্ডে লেখা- ‘সাকিব, লাভ ইউ!’

গতকালের ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপে নিছক এক আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। কারণ, এ ম্যাচে পাকিস্তানের কিঞ্চিৎ পরিমাণ সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের সেটুকুও ছিল না। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই কিনা ম্যাচটির হাইপ ছিল তুঙ্গে। দর্শকের সে কি উচ্ছ্বাস! সে কি উত্তেজনা! উন্মাদনা দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। খেলার শুরুর আগেই ৩০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন লর্ডসের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। সাংবাদিকদের মধ্যেও এই ‘মরা ম্যাচ’ নিয়ে সে কি উচ্ছ্বাস! প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সাংবাদিকরা তো ছিলেনই। সেই সঙ্গে ভারত, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিপোর্টারদের দেখতে পাওয়ার বিষয়টি বিরল ঘটনার মতোই!

বিদেশি মিডিয়ার আগ্রহের প্রধান কারণ সাকিব আল হাসান! এবারের বিশ্বকাপের সেরা তারকা। ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দিকে দৃষ্টি রাখতেই চলে এসেছিলেন তারা। পাশাপাশি আরেকটি কারণও ছিল হয়তো, তা হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ ম্যাচ কিনা! এ ছাড়া বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই তো বাতাসে ভাসে প্রতিশোধের গন্ধ! যে কারণে দুই দেশের যে কোনো ম্যাচই এখন ফাইনালের মতো!

উত্তেজনার ম্যাচে আলো নিজের দিকে করে নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বাংলাদেশি ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে ‘হোম অব ক্রিকেট’ লর্ডসে ৫ উইকেট নিয়ে অনার্স বোর্ডে যেন সোনার হরফে লিখে ফেললেন নিজের নাম।

লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখানো যায় সেঞ্চুরি করলে এবং ৫ উইকেট নিতে পারলে। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে সেঞ্চুরি করে প্রথম সে কাজটি করেছেন

বাংলাদেশের ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। একই ম্যাচে শাহাদত হোসেন রাজীব ৫ উইকেট নিয়েও নাম লিখিয়েছেন। আর কাল রঙিন জার্সিতে এমন কীর্তি গড়লেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে ৫ উইকেট নিতে গিয়ে কিছু বেশি মূল্য দিতে হয়েছে কাটার মাস্টারকে। ১০ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৭৫ রান। আরেক পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও নিয়েছেন ৩ উইকেট। মুস্তাফিজের চেয়েও যেন বেশি উদার ছিলেন তিনি। ৯ ওভারেই দিয়েছেন ৭৭ রান।

গতকাল দুর্দান্ত ফিল্ডিংও করেছেন মুস্তাফিজ। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান সাদাব খানকে আউট করতে যেভাবে উইকেটে লুটিয়ে পড়ে এক হাতে ক্যাচ নিয়েছেন তা ছিল দেখার মতো।

তবে রান দেওয়ায় বেশ কিপটে ছিলেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে একটি উইকেটও তুলে নিয়েছেন। সাকিব ১০ ওভারে দিয়েছেন ৫৭ রান। এ ছাড়া আর কোনো বোলারই ওভারপ্রতি ছয়ের কম রানে আটকে রাখতে পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের।

নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করে পাকিস্তান। সর্বোচ্চ ১০০ রান করেছেন ইমাম উল হক। কাঁটায় কাঁটায় ১০০ বলই খেলেছেন। তবে ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন পাকিস্তানের আরেক ব্যাটসম্যান বাবর আজম। সাইফউদ্দিনের বলে লেগবিফোর হওয়ার আগে তিনি ৯৮ বলে খেলেছেন ৯৬ রানের ইনিংস। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা যেভাবে লড়াই করছিলেন দেখে মনে হচ্ছিল যেন ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ!

তবে কতটা গুরুত্বের ম্যাচ তা তো সাকিবের কথাতেই পরিষ্কার হয়ে যায়! টসের আগে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলেন, ‘বিশ্বকাপের লড়াইয়ে এখন আর আমরা নেই। তবে ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লর্ডসে খেলা এমনই স্পেশাল কিছু। হোম অব ক্রিকেট বলে কথা। এর আগে তো এই ভেন্যুতে কখনো ওয়ানডে খেলা হয়নি। তাই আমি রোমাঞ্চিত।’

এটি আসলে মুস্তাফিজের ম্যাচ। কাটার মাস্টার আগের ম্যাচেও ভারতের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। গতকাল আবারও একই কীর্তি গড়লেন। এ বিশ্বকাপে আট ম্যাচে মুস্তাফিজের উইকেটসংখ্যা ২০। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার তিনি। তার চেয়ে বেশি আছে কেবল অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের ২৪টি। কাটার মাস্টার যেভাবে প্রতিটি ম্যাচে উইকেট তুলে নিচ্ছিলেন, বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলতে পারলে তিনি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে পারতেন। তবে আশা-হতাশা নিয়েই তো জীবন। মুস্তাফিজের সবচেয়ে বড় ভালো লাগার জায়গা হচ্ছে, তিনি ‘হোম অব ক্রিকেট’-এ ৫ উইকেট নিয়েছেন। শেষ ম্যাচে দ্য ফিজ যে হয়ে গেলেন লর্ডসের লর্ড!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর