ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ঠিক গেটেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ট্রাম স্টেশন। ম্যানচেস্টার সিটি সেন্টার থেকে যদি নতুন স্টেডিয়ামে আসতে চায়, তার জন্য এর চেয়ে সহজ রাস্তা আর হতে পারে না। কেবল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড নামটা লেখা দেখে ছবির মতো স্টেশনটিতে নামলেই আর চিন্তা। ঠিক চোখের সামনেই পড়বে আধুনিক সৌন্দর্যমি ত এক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
ম্যানচেস্টার পিকাডেলি (সিটি সেন্টার) স্টেশন থেকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ট্রামে। কেউ চাইলে ট্যাক্সি কিংবা প্রাইভেট গাড়িতেও যেতে পারেন। তবে অনেকে ভুল বুঝতে পারেন! কেন না ওল্ড ট্র্যাফোর্ড নামটা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চেয়েও ফুটবল স্টেডিয়ামের জন্য বেশি পরিচিত। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হোম ভেন্যু।
হ্যাঁ, সেটা মনে করলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়! কারণ, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে মিনিট তিনেক হাঁটলেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ফুটবল স্টেডিয়াম। ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে সামনের রাস্তাটা শেষ হয়ে গেছে ফুটবল গ্রাউন্ডে গিয়েই। তবে সেখানে গিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড নামটা আপনাকে আলাদা করে মনে করতে হবে না!প্রায় ১০তলা উঁচু ভবনের সমান উপরে বিশাল করে লেখা ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড’! রাতে যখন বর্ণিল আলোয় স্টেডিয়াম উদ্ভাসিত হয় তখন নাকি বহু দূর থেকে ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড’ নামটি দেখা যায়।
আর ম্যানচেস্টার নামটা আসলে ম্যানচেস্টার সিটির কথা তো আসবেই। সেই সঙ্গে আসবে সিটির হোম ভেন্যু ইতিহাদের প্রসঙ্গও। ওল্ড ট্র্যাফোর্ড থেকে ইতিহাদের দূরত্ব ৫ মাইল। ট্যাক্সিতে ১৩ মিনিটের পথ। ম্যানচেস্টার শহরের দুই পাশে দুই স্টেডিয়াম। এই দুই বিশ্ববিখ্যাত ক্লাবকে ঘিরেই আজকের আধুনিক ম্যানচেস্টারের বিশ্ব জোড়া পরিচিত।
ম্যানচেস্টারের কথা বলতে গেলে সবার আগে চলে আসে এখানকার মানুষদের সুমিষ্ট ব্যবহার, অত্যাধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট ও বার, কারুকার্য সম্বলিত রাস্তা, স্থাপত্য নির্দশন, বিখ্যাত বিখ্যাত সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংগীত, কমেডি ইত্যাদি।
আলাদা করে বলতে হবে মিউজিয়াম ও গ্যালারির কথা। আর ইউনেস্কো তো এই শহরকে ‘সাহিত্যের শহর’ বলে ঘোষণা দিয়েছে বেশ আগেই। চার্লস ডিকেন্স তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘হার্ড টাইমস’ লিখেছেন এই ম্যানচেস্টারে বসেই।
সব কিছু ছাপিয়ে আজকের আধুনিক ম্যানচেস্টার হচ্ছে ফুটবলের শহর। ক্রিকেটেরও জনপ্রিয় এক ভেন্যু।
তবে জনপ্রিয়তায় ফুটবল ও ক্রিকেটের পার্থক্য আকাশ পাতাল! এখানে ফুটবল হচ্ছে দিনের আলোয় টগবগে সূর্য, আর ক্রিকেট হচ্ছে অদৃশ্য চাঁদ!
আপাতত একথা বলাই যায় যে, ম্যানচেস্টারে এখন পূর্ণিমা চলছে। চিরন্তন সত্যের মতো দিনের প্রখরতা আছে, থাকবেই! কিন্তু এখানকার মানুষ এখন যেন পূর্ণিমা চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আইসিসি বিশ্বকাপের আলোয় আলোড়িত হচ্ছে ক্রিকেট।
একদিন আগেই ওল্ড ট্র্যার্ফোডে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। হয়তো অনেকের ধারণা ছিল, এটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ মাত্র। কারণ এবারের আসরে সবচেয়ে হতাশার কাব্য লেখা দলটির নাম তো দক্ষিণ আফ্রিকাই। তাদের খেলায় আর কি এমন আকর্ষণ থাকবে? আর অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিল এটি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই। সেমিফাইনাল তো তাদের আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
হিসেবের খাতায় ‘বাতিল’ ম্যাচটিই এখানে রীতিমতো উত্তাপ ছড়িয়ে দিল। অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝিয়ে দিল বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও তারা কিন্তু তাদের ক্রিকেট মেধা হারিয়ে ফেলেনি। প্রোটিয়াদের ৩২৫ রানের জবাবে ৩১৫ রানে শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
কী চমৎকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের দ্রুত গতির সেঞ্চুরিটি। নার্ভাস নাইনটিনের শিকার হয়ে ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে না পারলেও ফন ডার ডাসেনের ইনিংসটি দর্শককে দারুণ বিনোদিত করেছে। বিশাল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মাঠে তার বিশাল বিশাল ছক্কা চারটি ছিল দেখার মতো। অন্যদিকে অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নের এই আসরে তৃতীয় সেঞ্চুরিটিও ছিল দুর্দান্ত।
এছাড়া উত্তাপের পারদের ঠাসা এই ম্যাচে দর্শনীয় দিক ছিল পাখির মতো উড়ে গিয়ে ক্রিস মরিচের ক্যাচ। ওয়ার্নারকে আউট করে সে কী উদযাপন। তবে ইনিংসের শুরুতে অসি অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চকে আউট করার পর দীর্ঘক্ষণ ভিক্টরি ল্যাপের আদলে দৌড়ে ইমরান তাহিরের সেলিব্রেশন ছিল বিশেষ কিছু। উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা মিলে এই ম্যাচটি কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ ছিল না।
অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় তারা গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে দ্বিতীয় সেমিতে বার্মিংহামে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে। আর এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ভারত ৯ জুলাই নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে।
মজার বিষয় হচ্ছে, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও শেষ ম্যাচটি জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা যে তাদের দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! তাই ম্যাচ শেষে ট্রামে দেখা যায়, প্রোটিয়া ভক্তদের উদ্যাম নৃত্য ও ধেরে গলায় কোরাস! ‘ওলে ওলে-এ-এ, ওলে!