মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগুনে ম্যাচে স্মৃতি রোমন্থন

আগুনে ম্যাচে স্মৃতি রোমন্থন

ভারতীয় দলের সফলতার পিছনে বড় ভূমিকা রবি শাস্ত্রী ও ধোনির। গতকাল অনুশীলনে তারা হয়তো সেমিফাইনাল জয়ের পরিকল্পনা নিয়েই আলাপ করছেন-এএফপি

ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ মাঠে নামার আগে হয়তো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়বেন দুই দলের দুই অধিনায়ক ভারতের বিরাট কোহলি ও নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন! ১১ বছর আগের  সেই মধুর স্মৃতি! ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী শহর কুয়ালালামপুরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম  সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড। সে ম্যাচেও দুই দেশের যুব দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন এই কোহলি ও উইলিয়ামসন। কাকতালীয়ভাবে এবার আসল বিশ্বকাপে সেই দুজন এবং তাদের দল মুখোমুখি! আজকের এই আগুনে ম্যাচে স্মৃতি রোমন্থন করবে দুই ক্যাপ্টেন!

গতকাল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পুরনো কথা মনে করে দিতেই যেন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন বিরাট কোহলি, ‘খেলতে নামার আগে ওই স্মৃতি আমি মনে করে দেব কেনকেও (উইলিয়ামসন)। সত্যিই, ১১ বছর আগের সেই স্মৃতি খুবই চমৎকার মনে আছে আমার। তখন জুনিয়র দলের হয়ে আমার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। আর আজ সিনিয়র দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। তখনকার অনেক ক্রিকেটারই এখন খেলছে।’

কেন উইলিয়ামসন বলেন, ‘আসলে এভাবে তো ভাবিনি! অনেক দিন আগের কথা আবার মনে পড়ে  গেল। ভালো লাগছে। তবে একটুখানি আলাদা জায়গা। দুই দলের জন্যই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ।’ কোহলি তখন ছিলেন রীতিমতো এক অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। যুব বিশ্বকাপের সেই সেমিফাইনালে ব্যাট হাতে ৪৩ রান এবং ৭ ওভার বোলিং করে ২৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন।   সেই ম্যাচে ভারত তো জিতেছিলই এবং সে আসরে বিশ্বকাপের শিরোপাও ঘরে তুলেছিল কোহলির ভারত। এবারও কি ভারত তবে একই পথে হাঁটছে, ‘ঠিক তা না। তবে পুরনো সেই সময়টা মনে হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।’

মজার বিষয় হচ্ছে, ওই ম্যাচে কিউই দলপতি উইলিয়ামসনের উইকেট শিকার করেছিলেন  কোহলিই। গতকাল প্রেস কনফারেন্সে সে কথা মনে করে দিতেই হাস্যরোল পড়ে যায়! কেন না আজকের ক্রিকেটবিশ্ব কোহলিকে কেবলমাত্র একজন সুপার পাওয়ার ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। হাসতে হাসতে কোহলি বললেন, ‘সত্যিই কী আমি কেনের উইকেট নিয়েছিলাম? আমি জানি, এমন ঘটনা আবার ঘটবে কিনা!’ কোহলি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বার বার নিজে হেসেছেন এবং হাসিয়েছেন সাংবাদিকদেরও।

ম্যানচেস্টারে সেমিফাইনাল খেলতে পেরে যেন বেশ খুশি কোহলি। কারণ তাদের খেলার কথা ছিল বার্মিংহামে। শেষ ম্যাচে লিডসে ভারত যে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল একই দিনে আরেক ম্যাচে এই ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়া খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। অসি হেরেছে বলেই তাদের যেতে হয়েছে বার্মিংহামে। পাশাপাশি ভারতের জার্নিও কমে  গেছে। কেননা লিডস থেকে এখানে মাত্র ১ ঘণ্টার পথ। বার্মিংহাম বেশ দূর। কোহলি বলেন, ‘এখানে খেলতে পারায় ক্রিকেটাররা খুবই খুশি। ম্যানচেস্টার দারুণ এক শহর। বেশি পথ জার্নি করতে হয়নি বলে ক্রিকেটাররাও ফুরফুরে মেজাজে আছেন। সবাই বেশ আত্মবিশ্বাসী সেমিফাইনাল নিয়ে। এই ম্যাচটি নিয়ে সবাই রোমাঞ্চিত।’

পরিষ্কারভাবে এগিয়ে থেকেই আজ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে ভারত। তবে এই ভাবনাটা যাতে ক্রিকেটারদের উদাসীন করে না তোলে সেদিকে দৃষ্টি আছে কোহলির। ভারতীয় ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমি মনে করি এই ম্যাচে তারাই জিতবে যারা অনেক বেশি সাহসের সঙ্গে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে পারবে এবং হিসাব কষে খেলবে। নকআউট পর্বে প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল। একটু ভুল হলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ড খুবই ভালো ক্রিকেট খেলছে। গত আসরেও তারা ফাইনালে  খেলেছে।’

ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে বেশ চাপের মধ্যেই আছে ব্লাক ক্যাপসরা। সে কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন, ‘যে কোনো ম্যাচে চাপ থাকবেই। তবে আমরা খেলতে যাচ্ছি এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যাদের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ। ম্যাচটি আমাদের জন্য অনেক কঠিন হবে। কিন্তু এখন ওসব ভেবে লাভ নেই। আমাদের সামনে তাকাতে হবে।’

তবে আজ উল্টো ভারতকেই চাপে রাখতে চান উইলিয়ামসন। ফল নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চান না।  কেবল নিজেদের উজাড় করে দিয়ে খেলতে চান, ‘ম্যাচে যেকোনো কিছুই হতে পারে। তবে আমার টার্গেট থাকবে যত বেশি সুযোগ তৈরি করা যায়। প্রতিপক্ষকে যত চাপে রাখা যাবে ততই ভালো।’

দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ম্যাচ এবং বিশ্বকাপের ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। তা খুব ভালো করেই জানেন কোহলি, ‘ভারতীয় দলের হয়ে যে কোনো পর্যায়ে খেলাই অনেক চাপের। যেকোনো মাঠেই আমাদের দর্শকে ভর্তি থাকে গ্যালারি। তবে অন্য সিরিজের চেয়ে বিশ্বকাপে খেলার গুরুত্ব অনেক বেশি থাকে। তা ছাড়া এটি তো বিশ্বকাপের ম্যাচ। বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হবে।’

পুরো টুর্নামেন্টে ভারত একমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া আর কোনো ম্যাচে হারেনি। তাই ফেবারিট হিসেবে খেলতে নামলেও নকআউট ম্যাচে কখন কি হয় বলা তো যায় না! কারণ এটি আরেকটি নতুন ম্যাচ, নতুন করেই সব কিছু করতে হবে! সম্ভাবনার দুয়ার খোলা আছে দুদলের সামনেই!

এখন দেখা যাক, যুব বিশ্বকাপের সেই স্মৃতি রোমন্থন করে কেন উইলিয়ামসন আজ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠবেন, নাকি বিরাট  কোহলি আবারও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারতকে  পৌঁছে দেবেন ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে!

 

 

সর্বশেষ খবর