বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

জিম লেকারের মাঠে দাপট পেসারদের

ইংলিশ স্পিনার জিম লেকারের টেস্টে ১৯ উইকেট নেওয়ার বিরল রেকর্ডটিও এখানেই। ১৯৫৬ সালে সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তো একাই ১০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

জিম লেকারের মাঠে দাপট পেসারদের

ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কেইন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে দিলেন চাহাল। তাকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। সঙ্গে ছিলেন রোহিত শর্মা এবং মাহেন্দ্র সিং ধোনি -এএফপি

ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের ঠিক উপরের তলাতেই ধারাভাষ্য কক্ষ! গতকাল খেলার মাঝে হঠাৎ ধারাভাষ্য কক্ষ লক্ষ্য করে পাশের গ্যালারিতে গর্জন ওঠে ‘শচীন, শচীন’! কোহলিদের সেমিফাইনাল ম্যাচ, টেন্ডলকার থাকবেনই! তাই ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’কে না দেখেও সমস্বরে ডাকতে থাকেন ভাতরীয় সমর্থকরা। অনেকটা বাধ্য হয়েই বাইরে এসে রাজনৈতিক নেতাদের ভঙ্গিতে হাত নেড়ে দর্শকদের শান্ত করেন ব্যাটিং জিনিয়াস।
বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনি ড্রেসিংরুমে আসা-যাওয়ার সময়ও ভক্তদের এমন মধুর জ্বালাতনের শিকার হয়েছেন। তবে টেন্ডুলকারের মতো কোহলি-ধোনি দর্শকের আহ্বানে পাত্তা দেননি। দেওয়ার কথাও নয়। তাদের মনোযোগ নিবিষ্ট ছিল তো কেবল ম্যাচেই।
সেমিফাইনাল ম্যাচ বলে কথা! হারলেই বিদায়। তখন আবার এ দর্শকরাই তো দুয়ো ধ্বনি দেওয়া শুরু করবে। তবে কাল ম্যাচের শুরুতেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা বেশ আগ্রাসী ছিলেন।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম দিকে ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে পড়েন কিউই ব্যাটসম্যানরা। আর ম্যাচের শেষের দিকে ম্যাচে হানা দেয় বৃষ্টি। ৪৬.১ ওভারের পর বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধই হয়ে যায়। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২১১। ওভারপ্রতি গড় ছিল মাত্র ৪.৫৭। গতকাল খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। তবে যেখান থেকে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই আজ আবার শুরু হবে ম্যাচটি।
কাল ৬৭ রানে অপরাজিত ছিলেন কিউই তারকা ব্যাটসম্যান রস টেলর। আরেক তারকা ব্যাটসম্যান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৯৫ বলে ৬৭ রান করে আউট হয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ভারতীয় বোলারদের সামনে সুবিধা করতে পারেননি।
নিউজিল্যান্ডের দিনের শুরুটা বাজেভাবে হয় মার্টিন গাপটিলের আউটের মধ্য দিয়ে। ১ রানের বেশি করতে পারেননি কিউই ওপেনার। এবারের বিশ্বকাপে মোটেও ভালো করতে পারেননি তিনি। অথচ গাপটিলের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে কার্ডিফে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলেছিলেন অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস। কিন্তু সকালের সূর্য দেখে যে এ যুক্তরাজ্যে দিনের পূর্বাভাস মোটেও পাওয়া যায় না তা যেন খুব ভালো করেই টের পেলেন গাপটিল। প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরির পর আর রানই পেলেন না। পরের ৮ ইনিংসের মধ্যে ৫টিতেই দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের এ হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান।
গতকাল গাপটিলের আউটের পরই যেন বিপদের গন্ধ পায় কিউইরা। যদিও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন আস্থার প্রতীক হয়ে বাইশগজে বেশ কিছুটা সময় লড়াই করেছেন। কিন্তু নিজের মনের মতো করে কাল ব্যাটিং করতে পারলেন না ব্লাক ক্যাপস দলপতি! ৩৬ রানের মাথায় এক রান আউটের হাত থেকেও বেঁচে গেলেও বড় করতে পারেননি নিজের ইনিংসটা। অথচ এ মাঠে আগের ম্যাচেই খেলেছিলেন ১৪৮ রানের ইনিংস।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সব সময়ই বাড়তি সুবিধা থাকে স্পিনারদের জন্য। এখানে বল বেশ টার্ন করে। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্নের সেই ‘শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি’র ঘটনা এখানেই। ১৯৯৩ সালের ৪ জুন অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম দিনের প্রথম যে বলে মাইক গেটিংকে আউট করেছিলেন।
ইংলিশ স্পিনার জিম লেকারের টেস্টে ১৯ উইকেট নেওয়ার বিরল রেকর্ডটিও এখানেই। ১৯৫৬ সালে সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তো একাই ১০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যা ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর এক কীর্তি। এখন পর্যন্ত লেকারের ১৯ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ভাঙতে পারেননি কেউই।
সে কথা মাথায় রেখেই গতকাল রবীন্দ্র জাদেজাকে একাদশে রেখেছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। দারুণ বোলিংও করেছেন তিনি। ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে একটি উইকেটও নিয়েছেন। জাদেজা যে ডেলিভারিতে কিউই ওপেনার নিকলসকে বোল্ড করেছেন সেটি নিঃসন্দেহে এ ম্যাচের সেরা ডেলিভারি ছিল!
তবে ম্যাচের আসল নায়ক তো ভারতীয় দুই পেসার। আকাশ মেঘলা থাকায় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বাজিমাত করে দিয়েছেন ভারতের দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও ভুবনেশ্বর কুমার। ৮ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন ভুবনেশ্বর এবং ৮.১ ওভারে ৩০ রানে বুমরাও ১ উইকেট শিকার করেছেন। জিম লেকারের রেকর্ডের মাঠে দাপট দেখালেন পেসাররা।
ফুটবলের শহর এ ম্যানচেস্টারে ক্রিকেট নিয়ে ততটা আগ্রহ নেই! এখানে গ্যালারি ভরে কেবল অ্যাসেজ সিরিজের ম্যাচে। আভিজাজ্যের প্রতীক মনে করেন দর্শকরা নাকি খেলা দেখতে আসেন। রঙিন পোশাকের ক্রিকেট এখাকার মানুষকে আকর্ষণ করে না বললেই চলে। কিন্তু গতকাল অন্য দৃশ্য দেখল ম্যানচেস্টার!
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড যেন রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। সেমিফাইনাল মহারণ দেখতে এসেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। গ্যালারির অধিকাংশ দর্শকই ছিল ভারতের। বুমরাহ, ভুবনেশ্বর, জাদেজাদের জাদুকরী বোলিং দেখে তারা মহাখুশি!

সর্বশেষ খবর