সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

লর্ডসে চাঁদের হাট

লর্ডসে চাঁদের হাট

রানআউট মার্টিন গাপটিল। সুপার ওভারের খেলা শেষ। জয় নিশ্চিত করে উল্লাসে মেতে উঠল ইংলিশরা। বহু বছরের কাক্সিক্ষত বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসটা তো এমন বুনোই হবে! -এএফপি

পাকিস্তানের কিংবদন্তি তারকা ওয়াকার ইউনুসও এমন ম্যাচ নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাইলেন না। তিনি  কেবল বললেন, অনেক কিছুই হতে পারে! পাক তারকা কথা বলার সময় যেন কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করলেন।

তখনো ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল শুরু হয়নি। সবেমাত্র টস হয়েছে। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত  নেওয়া নিউজিল্যান্ডের ঠিক হয়েছে কিনা তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এমনিতেই মেঘলা আকাশ। রাতে বৃষ্টিও হয়েছে। পেস বোলিংয়ের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ। তার ওপর লর্ডসের উইকেটে একটু একটু সবুজ ঘাস।

 প্রেসবক্সে ওঠার সময় লিফটে দেখা হয়ে যায় ভারতীয় তিন গ্রেটের সঙ্গে! সুনীল গাভাস্কার, ভিভিএস লক্ষণ ও হরভজন সিং। লোক সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে বলে লিফটে উঠেও নেমে গেলেন কুমার সাঙ্গাকারা। কারণ একটু আগেই ওভার লোড হওয়ার কারণে প্রায় ৮ মিনিট অন্য আরেকটি লিফটে বন্দী ছিলেন লঙ্কান কিংবদন্তি। তাই আর সাহস করে উঠলেন না।

লিফটের জটে আটকে গেছেন সাবেক ইংলিশ তারকা  কেভিন পিটারসেনও। নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় সেলফি শিকারিদের খপ্পরে পড়ে যান। বিরক্ত হলেও হাসি হাসি মুখ করে পোজ দিতে হচ্ছে একেক ভক্তকে। তারকাদের এই এক যন্ত্রণা তাদের বিরক্তি ভাবতে নেই।

পাকিস্তানি এক সাংবাদিক গাভাস্কারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মনে আছে ১৯৭৮ সালের লাহোরের সেই ৯৭ রানের ইনিংসটির কথা। টেস্টে আপনার ৩৪টি সেঞ্চুরি থাকলেও আমার কাছে ওই ইনিংসটি কেন যেন বেশি ভালো লাগে। কী চাপের মধ্যেই না খেলতে হয়েছিল।

গাভাস্কার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, বুড়ো হয়ে গেছি  তো। তাই হয়তো মনে নেই সে কথা।

আবার জিজ্ঞেস করলেন, সেবার তো করাচিতে আপনার একটা সেঞ্চুরিও ছিল। সেটা কি মনে আছে।

এবার গাভাস্কার হাসতে হাসতে মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন, হ্যাঁ, কিছুটা।

গাভাস্কারের কথা শুনে হেসে উঠলেন লক্ষণ। বললেন, ‘আমারও কিন্তু লাহোরেই সেঞ্চুরি আছে। তবে এই লর্ডসে কোনো সেঞ্চুরি নেই!’ পাশ থেকে হরভজন সিং বললেন এটা কি খুবই জরুরি?

লিফট থেমে যাওয়ার পরও চলছিল তিন তারকার গল্প।

গতকালের ফাইনাল নিয়ে সবারই আশঙ্কা, ম্যাচটি  শেষ পর্যন্ত এক পেশে হবে কিনা! এ পর্যন্ত যে কয়টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছে তার মধ্যে ১৯৭৯, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে কোনো প্রতিদ্বন্দি¦তাই হয়নি। অনায়াসে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। ফাইনালকে ঠিক ফাইনালের মতো মনে হয়নি। গতকালও তো প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ২৪১ রানে আটকে গেছে নিউজিল্যান্ড। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের টার্গেট ছিল মাত্র ২৪২। তবে কিউইদের ভরসা তাদের বোলিং লাইনআপ নিয়ে। কেন না সেমিফাইনালে তারা শক্তিশালী ভারতকে মাত্র ২৪০ রানের টার্গেট দিয়েও দারুণ জয় তুলে নিয়েছিল। তবে ইংল্যান্ড দলের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই ভয়ঙ্কর। তাই একপেশে হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ও নাসের হোসেন তেমনটা মনে করেন না। টিভি ধারাভাষ্যে তারা বললেন, কিছু বলা কঠিন।

পাকিস্তানের কিংবদন্তি তারকা ওয়াকার ইউনুসও এমন ম্যাচ নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাইলেন না। তিনি  কেবল বললেন, অনেক কিছুই হতে পারে! পাক তারকা কথা বলার সময় যেন কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করলেন।

ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত সবশেষ ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে এই লর্ডসেই পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বিশ্বকাপ জয়ী সেই অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের  বোলিং অনেক ভালো। কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে রান কিছু কম হয়ে গেছে। আশা করছি লড়াই হবে।’

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের পর মাঠে প্রবেশ করেন শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা। তারা এক পাশ  থেকে যখন আরেক পাশে যাচ্ছিল দর্শকরা চিৎকার করে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন। তবে দর্শকরা সবচেয়ে  বেশি আনন্দ পেয়েছেন মাঠের মাঝে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের দুই সাবেক অধিনায়কের খুনসুঁটি দেখে! টিভিতে কথা বলার সময়, মজা করে একে অপরের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু  করে দেন। প্রথমে মনে হচ্ছিল সিরিয়াস! পরে তারা অবশ্য হাসতে হাসতেই একে অপরের সঙ্গে  কোলাকুলি! গ্যালারিতে দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করে দুই তারকা এমন রসিকতা! গতকাল ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে  যেন চাঁদের হাট বসেছিল।

স্মরণীয় এ ফাইনালে সুপার ওভারে নাটকীয়তায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্ব শাসনের রাজদণ্ড পেল ইংল্যান্ড।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর