শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফের আলোচনায় আবাহনী-মোহামেডান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফের আলোচনায় আবাহনী-মোহামেডান

ফুটবলে বড্ড করুণদশা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা-মোহামেডানের। ২০০২ সাল, প্রায় দেড় যুগ আগে লিগ জিতেছিল তারা। পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তাদের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রথম তিন আসরে রানার্সআপ হলেও পরবর্তীতে নিচের দিকে নামতে থাকে মোহামেডান। গত বছর কোনো মতে রেলিগেশন থেকে রক্ষা পায় তারা। এবারও সেই শঙ্কায় দুলছে। মোহামেডানের মতো দল চ্যাম্পিয়নের বদলে রেলিগেশন ফাইট দেবে তা ভাবাই যায় না। এক সময়ে আবাহনী-মোহামেডানকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল বলা হলেও এখন তা বলাটা হাস্যকর। আবাহনী একের পর এক লিগ জিতলেও সাদাকালোর ঘর শূন্য। তা ছাড়া আবাহনীর কাছে হারটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।

রুগ্ন মোহামেডান হঠাৎ করে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকদিন পর তারা প্রশংসিত হচ্ছে। আর এই আলোচনা আবাহনীকে হারিয়ে। শক্তির বিচারে আবাহনীর সামনে দাঁড়ানোর কথা নয় মোহামেডানের। গত কয়েক বছর ধরে লিগে তার প্রমাণও মিলছে। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে শেষবারের মতো আবাহনীকে হারিয়েছিল মোহামেডান। এবারও প্রথম পর্বে সহজেই জিতে ছিল আবাহনী। কিন্তু মঙ্গলবার মাঠে যা ঘটল তা অবিশ্বাস্যই বলা যায়। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিভাগ লিগের প্রথম পর্বে মোহামেডান ৪-০ গোলে আবাহনীকে পরাজিত করেছিল। হাফিজ উদ্দিন, নওশের, ওয়াজেদ গাজী ও মইন মোহামেডানের পক্ষে গোলগুলো করেন। ওই সময়ে ৪Ñ০ গোলে জেতাটাও ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। লিগ ইতিহাসে এটিই দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের জয়।

২০০৬ সালে ফেডারেশন কাপে আবাহনী ৫-১ গোলে পরাজিত করেছিল মোহামেডানকে। ৪-০ গোলের রেকর্ডটি ভাঙতে পারেনি তারা। তবে এবার লিগে মোহামেডানের যে দুর্দশা তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন আবাহনী ৪-০ গোলের রেকর্ড ভেঙে ফেলতে পারে। প্রথম পর্বে ৩Ñ০ গোলে জিতলেও দ্বিতীয় পর্বে সর্বোচ্চ লিগ জেতা দলের একি হাল! যারা শিরোপা জয়ের জন্য ফাইট দিচ্ছে তারাই কিনা রেলিগেশন শঙ্কায় দুলতে থাকা দুর্বল মোহামেডানের কাছে গুনে গুনে চার গোল হজম করল। দুর্বলরা বড় দলকে হারাতেই পারে। এটা অঘটনই বলে বিবেচিত হয়। তাই বলে ব্যবধান ৪-০ এটা কি আবাহনীর সমর্থকরা মানতে পারে?

১৯৭৫ সালের ম্যাচটি যারা দেখেছেন নিশ্চয় তাদের দাপুটে মোহামেডানের সামনে আবাহনীর অসহায়ত্বেরই চেহারার কথা মনে আছে। সালাউদ্দিন, আশরাফ, অমলেশ, নান্নু, বাটু, চুন্নুদের মতো তারকা খেলোয়াড় নিয়ে গড়া আবাহনীকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলেছিল পিন্টু, মঞ্জু, হাফিজ, টিপু, নওশের, প্রতাপ ও গাজীরা। ৪ গোলের পর আরও দুবার আবাহনীর জালে বল পাঠিয়েছিল মোহামেডান। কিন্তু অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।

১৯৭৫ আর ২০১৯। আবাহনী ও মোহামেডানের ম্যাচের মধ্যে অদ্ভুত এক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেবারও মাসটা ছিল জুলাই। বৃষ্টিতে মাঠ ভেজাও ছিল। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে সেবার দুই দলে তারকার ছড়াছড়ি থাকলেও এবার মোহামেডানে সেমানের খেলোয়াড়ই ছিল না। অন্যদিকে আবাহনী দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ভরপুর দল। যাদের কাছে পাত্তা পাওয়ারই কথা নয় সেই আবাহনী কিনা হারল ৪-০ গোলে। ব্যবধানটা ৫-০ হতে পারত। মোহামেডানের যদি একটি শর্ট সাইড পোস্টে না লাগত। দুই দলের ম্যাচ একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছিল। কোনো সাড়া শব্দ নেই। অনেকদিন পর মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ নিয়ে আলোচনা। আর তা মোহামেডানের সাড়া জাগানো জয় নিয়ে।

এই হারে আবাহনীর শিরোপার আশা শেষ হয়ে গেলেও এটা নিশ্চিত আসছে মৌসুমেও তারা শক্তিশালী দল গড়বে। মোহামেডান কি করবে? সেই জোড়াতালি দল গড়েই কি মাঠে নামবে। শোনা যাচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের আকর্ষণ বাড়াতে সরকারের প্রভাবশালী মহল থেকে নির্দেশ এসেছে মোহামেডানকে সহযোগিতা করার। কারণ মোহামেডান চেনা রূপে ফেরা মানে ফুটবলে উত্তেজনা বাড়া। সরকারের প্রভাবশালী মহল এমনটাই চাচ্ছে। এখন মোহামেডানের কর্মকর্তাদের টনক নড়বে কিনা সেটা বলা মুশকিল।

সর্বশেষ খবর