রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

অপেক্ষার প্রহর বাড়ল কিংসের

রাশেদুর রহমান, সিলেট থেকে

অপেক্ষার প্রহর বাড়ল কিংসের

শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংসের অপরাজয়ের রেকর্ডটা ভেঙে গেল। সিলেটে পেশাদার লিগে শেখ রাসেলের কাছে হেরে মাঠ ছাড়ছেন দলের ফুটবলাররা -রোহেত রাজীব

১৯টিতেই জিতেছিল তারা। ড্র করেছিল একটি। বসুন্ধরা পরাজিত হয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারত গতকাল। তবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী ৪-১ গোলে সাইফ স্পোর্টিংকে হারিয়ে কিংসদের অপেক্ষার প্রহর বাড়িয়ে দিল

বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেল ম্যাচ শুরু হতে কিছুটা সময় তখনো বাকি। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠ পড়ে আছে নিশ্চুপ। সন্ধ্যার অন্ধকার সবুজের রূপ যেন আরও ফুটিয়ে তুলল। তবে নীরব নেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। ভুভুজেলার শব্দ, বসুন্ধরা কিংসের নামে জয়ধ্বনি, এ যেন জয়োৎসবের পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা। ম্যাচ শুরুর বাঁশি থেকেই শুরু। ম্যাচজুড়ে মুহূর্মুহূ করতালি আর উচ্চ শব্দের চিৎকারে বসুন্ধরা কিংসকে উৎসাহ দিয়ে চলছিল সমর্থকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল না কিংসরা। শেখ রাসেলের কাছে ১-০ গোলে হেরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাদের। নীলফামারির হোম গ্রাউন্ডে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচেই এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অপেক্ষা। বসুন্ধরা মৌসুমে প্রথমবারের মতো পরাজিত হলো। এর আগে ২০ ম্যাচের ১৯টিতেই জিতেছিল তারা। ড্র করেছিল একটি। বসুন্ধরা পরাজিত হয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারত গতকাল। তবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী ৪-১ গোলে সাইফ স্পোর্টিংকে হারিয়ে কিংসদের অপেক্ষার প্রহর বাড়িয়ে দিল। বসুন্ধরা কিংস অভিষেক মৌসুমেই ইতিহাস গড়ে লিগ জয়ের উৎসব করার সব প্রস্তুতি আগেই শেষ করেছিল। শেখ রাসেলের বিপক্ষে জয় তাদের উপহার দেবে এক অভাবনীয় গৌরব। যে গৌরব এ দেশের ফুটবল ইতিহাসে আগে আর কখনোই কোনো ক্লাব অর্জন করতে পারেনি। আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল, শেখ রাসেলের মতো ক্লাবের আগমন ঘটেছিল বেশ ঘটা করে। কিন্তু ঢাক-ঢোল বাজিয়ে এলেই যে যুদ্ধ জয় করা যায় না, তার প্রমাণ দিয়েছিল দেশের ফুটবল। লিগ শিরোপা জয় করতে সবারই সময় লেগেছিল। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অভিষেকের পর সবচেয়ে কম সময়ে লিগ জিতেছিল আবাহনী। ১৯৭২ সালে অভিষেক। লিগ জয় ১৯৭৪ সালে। বসুন্ধরা কিংসের সামনে নতুন মাইলফলক স্থাপন করার সুযোগ। ম্যাচ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে হোটেল ছেড়ে মাঠে আসেন ড্যানিয়েল কলিনড্রেসরা। হালকা অনুশীলনে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করে নেন নিজেদের। নির্ধারিত সময়ে বেজে উঠল বিউগল। মাঠে নেমে এলেন দুই দলের ফুটবলাররা। গ্যালারিতে লাল জার্সিধারী বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ল ড্যানিয়েল কলিনড্রেসদের দেখে। ম্যাচের শুরুতে শেখ রাসেলের আক্রমণের পাল্লাই ছিল ভারি। বসুন্ধরা কিংস আক্রমণে যেতে কিছুটা সময় নিল। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা যাচাই করে নেওয়ার পর ড্যানিয়েল কলিনড্রেসরা সাঁড়াশি আক্রমণে যান। একের পর এক আক্রমণে তছনছ করে দেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন। মার্কোস ভিনিসাস ম্যাচের ১৭ মিনিটে ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের মাইনাসে বল পেয়ে দুর্দান্ত এক শট নিয়েছিলেন। গোলবারের সামান্য ওপর দিয়ে বল চলে গেলেও শেখ রাসেলের ডিফেন্স লাইনে কাঁপন ধরে যায়। এরপরও সুযোগ পেয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন মার্কোস। কলিনড্রেসও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে শেখ রাসেলের আক্রমণেও অনেক ধার ছিল। বাম প্রান্ত দিয়ে বারবারই বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্স লাইন ভেঙে ঢুকে পড়ছিলেন খালেকুজ্জামান। ডান প্রান্ত দিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণে যাচ্ছিলেন আজিজভ-ভেলেরি জুটি।

প্রথমার্ধটা শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্রতেই শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই নতুন উদ্যমে খেলতে নামে। এবারেও বেশ কয়েকটা সুযোগ হারান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্কোস ভিনিসাস। দ্বিতীয়ার্ধে সুযোগ হারান কিরগিজ ফুটবলার বখতিয়ারও। বসুন্ধরা কিংস সুযোগ হারালেও দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের প্রথম কাউন্টার আক্রমণেই গোল পায় শেখ রাসেল। ডি বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে ইউক্রেনিয়ান ফরোয়ার্ড ভেলেরির ক্রসে ডি বক্সের ভিতরে বল পান উজবেক ফরোয়ার্ড আলিশের আজিজভ। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে গোল করেন তিনি। ৫২ মিনিটের এ গোলটা বসুন্ধরা শিবিরে শোকের ছায়া নিয়ে আসে। এরপরও বসুন্ধরা কিংসের সামনে কিছু সুযোগ এসেছিল। ম্যাচের শেষ দিকে ৮৯ মিনিটে মতিন মিয়ার ক্রসে বল পেয়ে কলিনড্রেস গোল করতে ব্যর্থ হন। এরপর বখতিয়াররাও সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর