শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কিংবদন্তিদের ক্লাব ম্যানইউ

মেজবাহ্-উল-হক, ম্যানচেস্টার থেকে ফিরে

কিংবদন্তিদের ক্লাব ম্যানইউ

ক্লাবের প্রধান ফটকের সামনেই বিশাল ফাঁকা জায়গা। যাতে সমর্থকরা নির্বিঘ্নে উৎসব করতে পারেন। এই ফাঁকা জায়গার ঠিক মধ্যেই স্ট্যাচু ‘দি ইউনাইটেড ট্রাইনিটি’! সেখানে তিন কিংবদন্তি ফুটবলারের ভাস্কর্য। সর্ব ডানে জর্জ বেস্ট। দ্বিতীয়টি ড্যানিস লো। শেষে ববি চার্লসটন। তিন তারকার দুর্দান্ত দাপুটে পারফরম্যান্সের কারণেই ১৯৬৮ সালে প্রথমবারের মতো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জিতেছিল ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা। ম্যানইউয়ের হয়ে তিন তারকাই জিতেছেন ব্যালন ডি’অর- লো ১৯৬৪, চার্লসটন ১৯৬৬ এবং বেস্ট ১৯৬৮ সালে। তাদের স্মৃতি চির  অম্লান করে রাখতেই ‘দি ইউনাইটেড ট্রাইনিটি’ তৈরি করা হয়।

ইউনাইটেড ট্রাইনিটির ঠিক পেছনেই ওয়ালেই অন্য গ্রেটদের বড় বড় ছবি। প্রথমের ছবিটিই স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। বিভিন্ন সময়ের ক্লাবের হয়ে যারা দুরন্ত পারফর্ম করেছেন তাদের ছবিগুলোই আছে এখানে। এ সময়ের সেরা তারকা পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও আছেন। কিংবদন্তি রায়ান গিগসও আছেন। বাদ যাননি ওয়েইন রুনিও। ছবিগুলো এতটাই জীবন্ত যে মনে হয় যেকোনো সময় ফ্রেম থেকে তারকারা বেরিয়ে আসবে!

সারা দিন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। তবে সন্ধ্যায় আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা। ক্লাবের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হলে বিকাল ৫টার মধ্যেই যেতে হবে ক্লাবে। এ সময় সমর্থকদের জন্য খোলা থাকে। তবে অবশ্যই ২৭ পাউন্ড দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে।

অনেকের কাছে মনে হতে পারে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বুঝি ম্যানচেস্টার শহরের প্রাণকেন্দ্র! আসলে তা নয়। ম্যানচেস্টার মূল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড নামক ছোট্ট এক শহরে। স্টেডিয়ামের নামও করা হয়েছে শহরের নামে ‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ড’। তবে ম্যানচেস্টার সিটি সেন্টার থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ট্রামে উঠলে মাত্র ১০ মিনিটের পথ। ট্যাক্সিতে গেলে আরও কম সময় লাগে।

বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৮ সালে। শুরুতে নাম ছিল ‘নিউটন হিথ ফুটবল ক্লাব’। ১৯১০ সালে বদলে রাখা হয় ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড’ বা সংক্ষেপে ম্যানইউ। ডাক নাম ‘দ্য রেড ডেভিলস’!

ম্যানইউ রেকর্ড ২০বার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছে। এছাড়া ১২বার এফএ কাপ, ৫বার লিগ কাপস এবং রেকর্ড পরিমাণ ২১বার এফএ কমিউনিটি শিল্ড জিতেছে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও ঘরে তুলেছে ৩বার। এছাড়া ১বার করে জিতেছে উয়েফা ইউরোপা লিগ, উয়েফা কাপ উইনারস কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। ১৯৯৯ সালে ম্যানইউ প্রথমবারের মতো জয়লাভ করে ক্লাব বিশ্বকাপ। ইংলিশ ফুটবল ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রেবল জয়ের গৌরব অর্জন করে এই রেড ডেভিলসরাই।

কিংবদন্তি অ্যালেক্স ফার্গুসন এই ক্লাবটির হয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে ফার্গি ৩৮টি ট্রফি জিতেছেন। তার মধ্যে ১৩টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, ৫টি এফএ কাপ, ২টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেছেন ওয়েইন রুনি। ২৫০ গোল করে এই ইংলিশ ফুটবলার টপকে গেছেন স্যার ববি চার্লসটনের অনন্য রেকর্ডটি। তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন রায়ান গিগস। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬৭২টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১১৪টি গোলও করেছেন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনি ফুটবল ক্লাব। বার্ষিক আয় ৬৭৬.৩ মিলিয়ন ইউরো। ২০১৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ক্লাবের স্বীকৃতি পায় ম্যানইউ। সারা বিশ্বেই তাদের অসংখ্য ফুটবলভক্ত। বিশ্বের ২৪টি দেশে ২০০টিরও বেশি ফ্যান ক্লাব আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দুই স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের পর সবচেয়ে বেশি ফলোয়ার এই ক্লাবটির। শুধুমাত্র ফেসবুকেই তাদের ফলোয়ার সংখ্যা ৭১ মিলিয়ন। আয়ের দিক দিয়ে যেমন সেরা তেমনি ট্রফি জয়ের দিক দিয়েও সেরা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ১৪১ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ফুটবল ক্লাবটি অসংখ্য কিংবদন্তি তৈরি করেছে। ইংলিশ কিংবদন্তি ডেভিড বেকহ্যামের উত্থান এই ম্যানইউতেই। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিশ্বজোড়া এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকেই। এজন্য এ ক্লাবকে কিংবদন্তিদের ক্লাবও বলা হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর