শিরোনাম
রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ট্রফি কিংসের হাতে

রাশেদুর রহমান

ট্রফি কিংসের হাতে

ছবি: রোহেত রাজীব

রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকান ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস ইংরেজিটা খুব ভালো বলতে পারেন না। আধো আধো বুলিতে তার কথা বুঝা বড় দায়। তবে বিজয়ীর বেশে তিনিই হয়ে ওঠলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। মিডিয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জানালেন, বসুন্ধরা কিংসের সফলতার রহস্য। জানালেন মৌসুমজুড়ে কী কঠোর পরিশ্রমটাই না করেছেন তারা। কেবল কলিনড্রেসই নন, কিরগিজস্তানের বখতিয়ার, ব্রাজিলের মার্কোসসহ স্থানীয় ফুটবলার, সবার মুখেই খই ফুটল। ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেছেন চ্যাম্পিয়নের ট্রফি পেয়ে আমরা গর্বিত। একটা চ্যাম্পিয়ন দলের যেমনটা হওয়া উচিত, ঠিক তেমনি হয়েছে।

নীলফামারীতে মোহামেডানের সঙ্গে ড্র করেই অভিষেক মৌসুমে শিরোপা নিশ্চিত করেছিল বসুন্ধরা কিংস। তারও আগে মৌসুমের প্রথম লড়াই ফেডারেশন কাপ ফাইনালে আবাহনীর কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল কিংস। তারপর স্বাধীনতা কাপে সেই আবাহনীকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। লিগে তো দুই দুবার আবাহনীকে হারিয়েছে তারা। পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিয়েছে প্রতিটা দলকেই। এমন একটা মৌসুম কেবল স্বপ্নেই ভাবা সম্ভব। স্বপ্নের সেই মৌসুমটাই সত্য প্রমাণ করল বসুন্ধরা কিংস। ছাড়িয়ে গেল অতীতের সব মাইলফলক।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংক্ষিপ্ত শিরোপা অনুষ্ঠান হলো। সেরা খেলোয়াড় কলিনড্রেস, কোচ অস্কার ব্রুজোন আর চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের হাতে তুলে দেওয়া হলো প্রাপ্য ট্রফিটা। সেই ট্রফি নিয়ে আনুষ্ঠানিক উদযাপন শেষে ছড়িয়ে পড়ল কিংসরা। একে অপরকে বুকে-বুক মিলিয়ে অভিনন্দিত করল। উচ্ছ্বাসের সব বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল নীলফামারীতেই। তারপরও ট্রফি পাওয়ার অপেক্ষায় নিজেদেরকে কিছুটা লুকিয়ে রেখেছিল। গতকাল ভেঙে দিল সব বাঁধ। বসুন্ধরা কিংস একাই উৎসব করেনি গতকাল। দলটার হাজারও সমর্থক এসেছিল ম্যাচের আগে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানান দিয়েছিল নিজেদের উপস্থিতি। তুলে ধরেছিল ফুটবলের এক নতুন দিগন্ত। এমন প্রাণের জোয়ার কতদিন ফুটবলে দেখেনি বাংলাদেশের মানুষ।

বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী এমপি যখন কিংসের হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দিচ্ছিলেন সে কি আনন্দ। অনেক দিন পর ট্রফি বিতরণে জমজমাট এক পরিবেশ দেখা গেল।

দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে ফুটবল। বসুন্ধরা কিংসের জাদুকরী ফুটবল দেখতে ছুটে আসছে সমর্থকের দল। বাংলাদেশের ঘুমিয়ে পড়া ফুটবলটাকে জাগিয়ে তুলেছে তারা। কোচ অস্কার ব্রুজোনের শিক্ষায় ফুটবলটাকে ভালোভাবেই রপ্ত করেছে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। এই দলে ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের মতো তারকা আছেন। আছেন মতিন মিয়ার মতো কুশলী স্ট্রাইকার। তবে কোচ একক কোনো ফুটবলারকে কৃতিত্ব দিতে রাজি নন। গতকাল শিরোপা হাতে তোলার একটু আগে বললেন, ‘আপনি কলিনড্রেস আর মার্কোসের কথা বললেন। তাহলে জনি, নাসির, মতিন ওদের কথা কে বলবে? এ দলে অনেকেই বিশ^মানের ফুটবলার। আর আমাদের সফলতার পিছনে সবারই ভূমিকা আছে।’

কলিনড্রেস জানালেন, কী কঠোর পরিশ্রম করেছেন মৌসুমজুড়ে। ‘আমরা মৌসুমজুড়ে প্রতিটা ম্যাচই জিততে চেয়েছি। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদেরকে। মানিয়ে নিয়েছি সব প্রতিকূলতা। কলিনড্রেসদের চোখ যে এবার এশিয়ান লেভেলে। এএফসি কাপেও নিজেদের জৌলুস দেখিয়ে আসতে চায় দলটা।

সকালের সূর্য যদি দিনের বার্তাবাহক হয় তবে বসুন্ধরা কিংস দারুণ একটা বার্তা দিল ফুটবলকে। এবার থেকে আর যেনতেন ফুটবল নিয়ে লিগে খেলা যাবে না। ২৪ ম্যাচের লিগে ২০টা জয়। ৩টা ড্র এবং একটা পরাজয়। ৬৫ পয়েন্ট। এমন কিছু এক সময় ঢাকার ফুটবলে দেখা যেত আবাহনী কিংবা মোহামেডানের কাছ থেকে। তখন ফুটবলে আবেগ ছিল, উচ্ছ্বাস ছিল ও উৎসব ছিল। সেই পুরনো উৎসবটাকেই বহুগুণে রাঙিয়ে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ছুটে চলা বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হলে এখন আর গতানুগতিক কোনো দল নিয়ে খেললে হবে না। প্রতিপক্ষ দলটাকেও এবার পেশাদার হতে হবে। অস্কার ব্রুজোন কিন্তু তা-ই বলেছেন। ‘পেশাদার ফুটবল খেলার জন্য নিজেদেরকে আরও অনেক ইকুইপমেন্টে সাজাতে হবে।’ ব্রুজোনের বক্তব্যটা প্রতিপক্ষের জন্য উপদেশ। পাশাপাশি হুমকিও হয়ত। বসুন্ধরা কিংস যে সামনের মৌসুমে আরও দুরন্ত রূপে ফুটবলের উঠোনে হাজির হবে, হয়ত তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর