সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফুটবলে বসুন্ধরার জয় জয়কার

রাশেদুর রহমান

ফুটবলে বসুন্ধরার জয় জয়কার

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগেই আলোড়ন তুলেছিল বসুন্ধরা কিংস। এখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পেশাদার লিগে নাম লেখানোর পর বিপুল আয়োজনে মেতে ওঠে ক্লাবটা। সেরাদের নিয়ে দল গঠন করতে শুরু করে। স্থানীয় ফুটবলাররাও বিপুল আকর্ষণে একে একে যোগ দিতে থাকেন এই ক্লাবে। বিশ্বকাপ খেলা তারকা ফুটবলার কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস আসেন। কিরগিজস্থানের বখতিয়ার, ব্রাজিলের মার্কোসরা এসে মতিন মিয়া, সবুজ, নাসির, ফয়সাল, ইমন, জনি, সুফিলদের শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি যোগ্য গুরুর সান্নিধ্য তাদের একেকজনকে ফুটবলের উঠোনে রতœ করে তোলে। স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন এখানে আসার আগেই সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেছিলেন। সম্ভাবনার প্রতিটা দুয়ার ছিল তার কাছে আপন হাতের রেখার মতোই পরিচিত। এরপর গত এক বছরের কর্মকাে  নিজেকে দিনে দিনে কেবল প্রমাণ করেই গেছেন তিনি। বসুন্ধরা কিংসকে উপহার দিয়েছেন দুটি ট্রফি।

কিংসদের এই সফলতার পেছনে ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতা। কোচ অস্কার ব্রুজোন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বলেছেন, ‘আমরা সফল হয়েছি, কারণ আমাদের চারপাশে অসাধারণ কিছু মানুষ ছিল। বসুন্ধরা গ্রুপ ছিল।’ কেবল বসুন্ধরা কিংস নিয়েই সফল নয় বসুন্ধরা গ্রুপ, পাশাপাশি তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রিমিয়ার লিগে খেলা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রও সফল। মৌসুম ভরেই ছিল বসুন্ধরার জয়-জয়কার। এবারের মৌসুমে লিগে বসুন্ধরার ঘরে এসেছে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি (কিংস), ফেয়ার প্লে ট্রফি (শেখ রাসেল), সেরা কোচ (কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন), সেরা খেলোয়াড় (কিংসের কলিনড্রেস), সর্বোচ্চ গোলদাতা (শেখ রাসেলের রাফায়েল উদোভিন) এবং সেরা গোলরক্ষক (শেখ রাসেলের আশরাফুল ইসলাম রানা)। কেবল উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কারটা বসুন্ধরার বাইরে নিয়ে গেছেন আরামবাগের রবিউল।

বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের ঘুমিয়ে থাকা ফুটবলকে জাগিয়ে দিয়েছে গত প্রায় এক বছরে। স্প্যানিশ, ইংলিশ, জার্মান আর ইতালিয়ান লিগের পর এখানকার ফুটবলভক্তরা স্থানীয় ফুটবল লিগ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি ছিল না। ইউরোপ আর ল্যাটিন ফুটবল নিয়ে মেতে থাকা এই জেনারেশনকে বেশ বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। অস্কার ব্রুজোন স্প্যানিশ ফুটবলটা ভালোভাবেই শিখিয়েছেন তার শিষ্যদের। এখন টিকি-টাকার ফুটবল দেখা যায় মতিন মিয়া-জনি-হেমন্ত-নাসিরদের পায়ে। কলিনড্রেস-মার্কোসরা তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। যেমন লিগের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ছন্দময় ফুটবল খেলে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। কেবল ক্লাব ফুটবলের মধ্যেই সীমিত নেই বসুন্ধরা গ্রুপের কার্যক্রম। জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখার জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে ছুটে চলেছে তারা। গত বছর বসুন্ধরা কিংস অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে ক্যাম্প করেছিল।

 কোচ অস্কার ব্রুজোনের মতে, দেশের নানান অঞ্চলে ফুটবল ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে, ফুটবল নিয়ে মানুষের যে ভুল ধারণা ছিল, তা ভেঙে যাবে। এখন তো বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচে দর্শক সমাগম থাকে। লম্বা লাইন দিয়ে দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করে। সেদিন হয়ত খুব দূরে নয়, বাংলাদেশের লিগ ফুটবল দেখতেও টিকেটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে দর্শকরা!

বসুন্ধরা গ্রুপ এখানেই থামতে চায় না। কিংস কোচ যেমনটা বলেছেন। আরও দুর্দান্তভাবে আগামী মৌসুমটা শুরু করবেন তারা। এশিয়ান লেভেলে খেলার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে তুলবেন।

কোচ অস্কার ব্রুজোন জানিয়েছেন, ছয়/সাত সপ্তাহের জন্য ছুটিতে যাচ্ছে সবাই। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হবে অনুশীলন। নতুন মৌসুমের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুতিটা সারতে চান তিনি।

সর্বশেষ খবর