বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিপিএল মানে বিভ্রান্তির লিগ!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিপিএল মানে বিভ্রান্তির লিগ!
বিপিএলের ষষ্ঠ আসরকে বলা হয় সবচেয়ে আকর্ষণীয় আসর! কারণ এই আসরে বড় তারকারা এসেছিলেন। আর বড় বড় তারকাদের আনার পেছনে বড় অবদান তো বসুন্ধরা গ্রুপের। তাই বিপিএল গভর্নিং বডি কোথায় এমন অবদানের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোকে অভিবাদন জানাবে, তা না উল্টো তারা নিরুৎসাহিত করছে!

 

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আগমন ঘটেছিল কাঁচা টাকার ঘণ্টা বাজিয়ে! তাই শুরুতে বিপিএলকে অনেকে বলতেন ‘বাংলাদেশ পয়সা লিগ’! তারপর দেখা গেল উল্টো চিত্র। ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো ঠাট-বাট নিয়ে এলেও তারা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে পারছে না। তা নিয়ে কত কাহিনী! একটা সময় বিপিএল হয়ে গেল তাই ‘বকেয়া লিগ’!

এরপর বিপিএল রঙ্গমঞ্চে মঞ্চস্থ হলো নতুন নাটক! বিতর্কের খেলা।  নিয়ম বদলের খেলা। রাতের মধ্যে নিয়ম পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটেছে। তাই এবার বিপিএল হয়ে গেল ‘বিতর্ক লিগ’!

বিপিএল সব শেষ আসরটি তুলনামূলক পরিচ্ছন্নই ছিল। যদিও স্টিভেন স্মিথের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে খেলা নিয়ে অনেক নাটকীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে। অ্যালিস আল ইসলামকে হঠাৎ নতুন নিয়ম তৈরি করে খেলানো হয়েছে। আন্দ্রে রাসেলকে খেলাতেও দরকার হয়েছিল নতুন নিয়ম। সব কিছুর পরও বেশ ভালোভাবেই শেষ হয়েছিল। কিন্তু এবারের আসরের অনেক আগেই সাকিব আল হাসানের দল পরিবর্তন নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিভ্রান্তি। এবার বিপিএলে যেন নতুন মাত্রা যোগ হলো! নতুন করে সমস্যার তৈরি হলো। বিপিএল এখন বিভ্রান্তির লিগ!

দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দল রংপুর রাইডার্সের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় উত্তরাঞ্চলের দলটি। এবি ডি ভিলিয়ার্স, জেসন রয়ের মতো সুপারস্টার ক্রিকেটারদের এনে রংপুর যেমন নিজেদের শক্তিমত্ত্বা বাড়িয়েছে, তেমনি বিপিএলের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।

বিপিএলের ষষ্ঠ আসরকে বলা হয় সবচেয়ে আকর্ষণীয় আসর! কারণ এই আসরে বড় তারকারা এসেছিলেন। আর বড় বড় তারকাদের আনার পেছনে বড় অবদান তো বসুন্ধরা গ্রুপের। তাই বিপিএল গভর্নিং বডি কোথায় এমন অবদানের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোকে অভিবাদন জানাবে, তা না উল্টো তারা নিরুৎসাহিত করছে!

বাংলাদেশ ক্রিকেট আসলে কি চায়, বিপিএল আরও জাঁকজমক হোক, নাকি কেবল নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার হোক? এই প্রশ্নের উত্তর তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে!

সাম্প্রতিক বিপিএলের যত নিয়ম পরিবর্তন-পরিশোধন সব একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের চাহিদাপত্র অনুযায়ী। সেই দলটি যে ঢাকা ডায়নামাইটস তা এখন ওপেন-সিক্রেট!

এটাও তো কারও অজানা নয় যে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও  বিপিএলের গভর্নিং বডির সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাদেরই দল ঢাকা ডায়নামাইটস। আর সেই দল থেকে সাকিব আল হাসানকে রংপুর রাইডার্স নিয়েছে বলেই এতো নিয়ম সামনে আসছে।

‘অনিয়মের’ বিপিএলে গভর্নিং বডি যেন নিয়মের দোকান খুলে বসেছে এখন! কোথায় ছিল তাদের এই নিয়ম যখন নিজেরা এউইন মরগানকে দলভুক্ত করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। কিংবা তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম দল পরিবর্তন করার সময়ও হইচই হয়নি। তখন কি ঘুমাচ্ছিল বিপিএল গভর্নিং বডি কিংবা বিসিবি? 

এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিপিএলের অনেক নিয়মই তো হয়েছে ঢাকা বাড়তি সুবিধায় করে দেওয়ার জন্য। ঢাকা ডায়নামাইটস যখন যা করে সেটা অনিয়ম হলেও দ্রুতই ‘নিয়ম’ হয়ে যায়! সব শেষ আসরে হঠাৎ করে নিয়ম ভেঙে তারা অ্যালিস আল ইসলামকে রংপুরের বিরুদ্ধে খেলতে নামায়। এই অ্যালিসই সে ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিয়ে রাইডার্সকে হারিয়ে দেয়। পরে ডায়নামাইটসের অনিয়মকে নিয়মে রূপ দিতে সবার জন্য একই সুবিধা দেয় গভর্নিং বডি।

সত্যিকারার্থে এমন অপেশাদারভাবে কি কোনো টুর্নামেন্ট চলে? এমন অবস্থায় বসুন্ধরার মতো গ্রুপগুলো যদি বিপিএল থেকে সরে যায় ক্ষতিটা কার হবে? বিপিএল গভর্নিং বডি কিংবা বিসিবি  কি এমনটাই চাচ্ছে নাকি?

বলার অপেক্ষা রাখে না, এতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এদেশের ক্রিকেটের। আবারও ‘বকেয়া লিগ’ হয়ে যেতে পারে বিপিএল। পাশাপাশি জৌলুস হারাতে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই টুর্নামেন্টটি। তাই গভর্নিং বডি তাদের ‘দায়িত্বহীনতা’র কারণে কিংবা ‘ইচ্ছাকৃত’ যে সমস্যার তৈরি করেছে তার সুষ্ঠু সমাধান করা তাদেরই দায়িত্ব।

দেশে বিদেশে বিপিএল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে বিসিবিরই উচিত এই সমস্যার সঠিক পথ খুঁজে বের করা। ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা না করে কেবল নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য কাজ করলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নিয়ম অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে বিপিএলের বিভ্রান্তির লিগ নামটাই স্থায়ী রূপ পেয়ে যাবে! সেটা দেশের ক্রিকেটের জন্য মোটেও ভালো কিছু বয়ে আনবে না!

সর্বশেষ খবর