শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইংলিশদের কাছে নেই অ্যান্টিবায়োটিক!

অ্যাশেজ সিরিজ

মেজবাহ্-উল-হক

ইংলিশদের কাছে নেই অ্যান্টিবায়োটিক!

স্টিভ স্মিথ

ঢাকা শহরে ‘ডেঙ্গু জ্বর’ মহামারী আকার ধারণ করলেও নেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক! ইংল্যান্ডও এক অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত, যার কোনো প্রতিষেধক নেই আপাতত! রোগের নাম ‘স্টিভ স্মিথ’!

ঢাকার মেয়র যেমন শুরুতে পাত্তাই দেয়নি ডেঙ্গুকে, ইংলিশদের অবস্থাও ঠিক তাই! ১৫ মাস পর সাদা পোশাকে খেলতে নেমে কি এমন করতে পারবে স্টিভ! এতো আর ডন ব্রাডম্যান নন, কিংবা স্টিভ ওয়াহ্ও নন! যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দুর্বার ব্যাটিং করবেন। ইংলিশদের ধারণা ছিল, হয়তো একাদশে জায়গা স্থায়ী করা নিয়েই মহা টেনশনে থাকতে হবে স্টিভকে। তাই নির্বাসিত ব্যাটসম্যানকে পাত্তাই দেয়নি। কিন্তু সেই স্টিভ কিনা একাই ধসিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে।

দুই ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি করা বড় ঘটনা তো বটেই। তাকে ব্যাটিং করতে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে।

প্রথম ইনিংসে তার ১৪৪ রানের স্কোরের দিকে তাকান! যেখানে গোটা দলের বাকি ১০ ব্যাটসম্যান ও অতিরিক্ত মিলে এসেছে মাত্র ১৪০ রান। কী প্রতিকূলতার মধ্যেই না ব্যাটিং করতে হয়েছে। পাশাপাশি তার বড় শত্রু ছিল এজবাস্টনের গ্যালারি। ইংলিশরা যেন ‘দুয়ো’ ধ্বনিতে স্টিভকে নাজেহাল করতেই গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিল। ‘দুয়ো’ ধ্বনি দিয়েছেও। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরির পর স্টিভের উদযাপনকে কেউ-ই ভালোভাবে নেয়নি!

কিন্তু সেই স্টিভ দ্বিতীয় ইনিংসেও আরেকটি ১৪২ রানের স্কোর করে সব কিছু ঠা-া করে দিলেন। ইংলিশদের দর্শকদের মুগ্ধ তো করলেনই, গোটা ক্রিকেট বিশ্ব এখন স্টিভ ম্যানিয়ায় ভুগছে!

নির্বাসন থেকে ফিরে এসেছে এ কোন স্টিভ স্মিথ?

যাকে আউট করার মতো কোনো বোলার ইংলিশদের দলে নেই!  এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং মাইকেল ভন। সাবেক এই ইংলিশ দলপতির কাছে নির্বাসন থেকে ফেরা স্মিথের ব্যাটিংকে কম্পিউটারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কোনো ভুল নেই। শত ভাগ নিখুঁত। বার্মিংহামে তো ইংলিশরা হেরেছেই, লর্ডসেও তাকে কে আটকাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না ভন।

এক বছর নিষিদ্ধ ছিলেন!  অনেকেই ভেবেছিল এই সময়টা হতাশাতেই কাটবে স্মিথের! তিনি যে হতাশ ছিলেন না এমন নয়! দুর্দান্ত ফর্মের সময় এক ভুলে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। যে কারও এমন পরিস্থিতিতে মাথা খারাপ হওয়ারই কথা।

কিন্তু স্মিথ নিজেকে অন্যভাবে প্রস্তুত করেছেন। নির্বাসনে থাকার সময়ে যেন প্রতিটি দিন, প্রতিটি ঘণ্টা, এমনকি প্রতি মুহূর্ত হিসেব করে পথ চলেছেন। দলের সঙ্গে থাকলে তিনি কতক্ষণ ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তার চেয়েও বেশি সময় একা একা অনুশীলন করেছেন। আর তার দুঃসময়ে সর্বাঙ্গীন সঙ্গী ছিলেন সহধর্মিণী। স্ত্রী বোলিং মেশিনে বল দিয়েছেন আর স্মিথ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন অনুশীলন করেছেন।

শচীন টেন্ডুলকার সবচেয়ে বেশি অনুশীলন করার জন্য অসি কিংবদন্তি ইয়ান চ্যাপেল একবার টিপ্পনি কেটে বলেছিলেন, এত বেশি অনুশীলন করার মধ্যে বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা আছে নাকি? কিন্তু শচীন তার যথার্থতা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবার ইয়ানের স্বদেশিও শচীনকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

ইংলিশরা তো রীতিমতো দিশেহারা হয়ে গেছে। ‘স্টিভ রোগ’ তাদের মননে-মগজে গেঁথে গেছে! এই রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার তা ইংলিশদের হাতে নেই। যে জেমস অ্যান্ডারসনকে নিয়ে তারা অ্যাশেজ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল, সেই তারকা পেসার প্রথম ম্যাচে মাত্র ৪ ওভার বোলিং করার পরই ইনজুরিতে। চতুর্থ টেস্টের আগে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আপাতত জোফরা আর্চারের দিকে তাকিয়ে!

ক্যারিবীয় এই পেসারকে বিশ্বকাপ দলেও প্রথমে রাখা হয়নি। তারপর কত নাটকের পর বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পান আর্চার। কিন্তু অবাক কা- হচ্ছে, সেই আর্চারই প্রথমবারের মতো ইংলিশদের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে যান। অ্যাশেজেও আর্চারকে ছাড়াই পরিকল্পনা ছিল ইংলিশদের। কিন্তু কি আর করা! এখন আর সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এখন দেখা যাক, বিশ্বকাপের মতো মর্যাদার অ্যাশেজেও আর্চার ত্রাতা হয়ে উঠতে পারেন কিনা! ‘স্মিথ রোগ’ এর ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসেবে কাজ করতে পারে কিনা! 

সর্বশেষ খবর