শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

অ্যানফিল্ডে এক দুপুর

মেজবাহ্-উল-হক, লিভারপুল থেকে ফিরে

অ্যানফিল্ডে এক দুপুর

লিভারপুল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কোলাহল মুক্ত এক সবুজে ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত ‘অ্যানফিল্ড’ স্টেডিয়াম। এটিই বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব লিভারপুল এফসির হোম গ্রাউন্ড।

লিভারপুল সিটি সেন্টার থেকে ১০৭ নম্বর সিটি বাসে উঠলেই ২০ মিনিট লাগে অ্যানফিল্ডে পৌঁছাতে। প্রাইভেট কার কিংবা ট্যাক্সিতে গেলে মিনিট দশেকের মধ্যেই যাওয়া যায়। সারা দিন পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। এবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অ্যানফিল্ডে দর্শনার্থী সংখ্যা যেন হু হু করে বেড়ে গেছে।

যারা আগে কখনো অ্যানফিল্ডে যায়নি সিটি সেন্টার থেকে যাওয়ার পথে তাদের মনে বিভ্রম লাগতেই পারে! বিশ্বসেরা ক্লাবটি কি গ্রামের মধ্যে? হ্যাঁ, অ্যানফিল্ড স্টেডিয়াম সত্যিকার অর্থে এক গ্রামেই।  যেখানে উঁচু অট্টালিকা নেই। পরিবেশও জাঁকজমক নয়। কিন্তু স্টেডিয়ামে পৌঁছার পর মনে জাগবে অপার বিস্ময়!

এক গ্রামের ভিতর এমন চমৎকার স্টেডিয়াম! বিশালতা দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়।

অ্যানফিল্ডের ঠিক পাশেই স্ট্যানলি পার্ক। বিশাল এই পার্কেও বিশাল বিশাল খেলার মাঠ। সারা দিনই চলছে  খেলা। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ মেতেছে ফুটবলে।

এই স্ট্যানলি পার্কের শেষ মাথায় লিভারপুল ফুটবল ক্লাব। ঠিক উল্টো পাশেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আরেক জনপ্রিয় ক্লাব এভারটন। লিভারপুল শহরে দুই বড় ক্লাবের মধ্যে দূরত্ব মাত্র কয়েকশ গজ।

ম্যানচেস্টারে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা যেন একবারের জন্য হলেও ঢুঁ মারতে যান অ্যানফিল্ডে। হ্যাঁ, কারণ লিভারপুল ও ম্যানচেস্টারের দূরত্ব মাত্র ৫৫ কিলোমিটার। কিন্তু দ্রুতগতির ট্রেনে সময় লাগে মাত্র ২৫-৩০ মিনিট। হাতে কয়েক ঘণ্টা সময় থাকলে চলে যাওয়া যায় সহজেই।

সে যাই হোক, ম্যানচেস্টার পিকাডিলী স্টেশন থেকে ট্রেনে রওনা দিয়ে পাক্কা এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাই অ্যানফিল্ডে! স্টেডিয়ামের মেইন গেটের দেখা যায়, উইলিয়াম হ্যাজার্ডের সঙ্গে! বিখ্যাত কেউ নন। লিভারপুলের অন্ধ ভক্ত এই হ্যাজার্ড। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করলেন! তারপর পুরো স্টেডিয়াম ঘুরে দেখালেন। 

স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকেই বিশাল এক শপ। সেখানে লিভারপুল এফসির হাজারও রকমের সুভ্যেনির। উঁচু এই শপের ক্লাসের ওয়ালে টানানো আছে মোহাম্মদ সালাহর বিশাল সাইজের এক ছবি। সেদিকে দেখিয়ে দিয়ে হ্যাজার্ড বললেন, লিভারপুলের প্রভু! তারপর হাসতে হাসতে বললেন, সালাহকে এখানকার মানুষ যেন ঠিক প্রভুর মতোই শ্রদ্ধা করে, এক সময় এমন কদর ছিল স্টিভেন জেরার্ডেরও।

তারপর হাতের ইশারায় দেখালেন বিশাল আকারের লোগোটি। হ্যাজার্ড বললেন, আমি আপনাকে লক্ষ্য করতে বলছি লোগোর বাক্যটির দিকে। যেখানে লেখা আছে- ‘তুমি কখনোই একা হাঁটবে না!’ হ্যাঁ, এটাই লিভারপুলের স্লোগান। এরপর হ্যাজার্ড বললেন, ‘সত্যিকারার্থে এই দলে সবাই তারকা। এখানে মোহাম্মদ সালাহ একা নন। দলের সবাই এক একজন মোহাম্মদ সালাহ্!’

আসলেই তো লিভারপুল দলটি একক কোনো ফুটবলারের ওপর নির্ভরশীল নয়। অথচ অনেকেই মনে করেছিলেন এই লিভারপুল কেবলমাত্র মোহাম্মদ সালাহ নির্ভর এক দল। কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সেই সালাহকে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রেখেই টটেনহ্যামকে হারিয়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছে। লিভারপুল এই মুহূর্তে দাবি করতেই পারে তারা বিশ্বের সেরা দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এরপর আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মেসির বার্সেলোনার বিরুদ্ধে নূ-ক্যাম্পে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল। সেই দলটাই দ্বিতীয় লেগে অ্যানফিল্ডে ক্যারিশমা দেখিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। তারপর শিরোপা জিতে সৃষ্টি করেছে নতুন ইতিহাস।

লিভারপুলের যাত্রা শুরু হয় ১৮৯২ সালে ৩ জুন। ইউরোপের জনপ্রিয় এই ক্লাবটি ছয়বার ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা জিতেছে। এছাড়া তিনবার উয়েফা কাপ ও সুপার জিতেছে। তাদের ঘরে লিগের শিরোপা আছে ১৮টি। সাতবার এফএ কাপের শিরোপাও জিতেছে তারা। এছাড়া আরও অসংখ্য অনেক শিরোপা এখন শোভা পাচ্ছে অ্যানফিল্ডের ফুটবল জাদুঘরে। পুরো স্টেডিয়াম ঘুরে দেখতে দেখতে যেন কেটে গেল কয়েক ঘণ্টা। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকাল। যাওয়ার সময় হ্যাজার্ড বললেন, আমি আসলে কাজে যাচ্ছিলাম! যখন আপনি বললেন, এত দূর থেকে অ্যানফিল্ড দেখতে এসেছেন। স্টেডিয়াম নিয়ে স্টোরি করবেন। তখন আমার কাছে মনে হলো কাজের চেয়ে আপনাকে স্টেডিয়াম ঘুরে দেখানো বড় কর্তব্য!

সত্যিই, লিভারপুলের ভক্তরা অন্যরকম!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর