বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোচিং করিয়ে কিংবদন্তি!

কোচিং করিয়ে কিংবদন্তি!

মাঠে এগারো জন সেরা ক্রিকেটার থাকলেই হয় না! জয়ের জন্য দরকার সেরা পারফর্মার। খেলোয়াড়দের মেধা-মননের কথা চিন্তা করে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে তাদের কাছ থেকে সেরা পারফর্ম বের করে এনে দলের জয় নিশ্চিত করাই তো কোচের প্রধান কাজ। আর এই কোচিংয়ের কাজটি সুচারুভাবে করেই কেউ কেউ জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন এবং হচ্ছেন! কিংবদন্তিতুল্য কোচদের নিয়েই এই আলোচনা। লিখেছেন মেজবাহ্-উল-হক

 

ট্রেভর বেলিস

অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি ট্রেভর বেলিসের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য নয়। তবে কোচ হিসেবে বাজিমাত করে দিয়েছেন বেলিস। তার কোচিংয়েই এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে ইংল্যান্ড। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে তিনি শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে তুলেছিলেন। আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ২০১২ ও ২০১৪ সালে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। সিডনি সিক্সার্সকে বিগ-ব্যাশের শিরোপা জিতিয়ে দিয়েছেন ২০১১-১২ মৌসুমে। একই বছর সিডনি তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-২০তেও চ্যাম্পিয়ন করেছেন। বেলিস আলোচনায় আসেন ২০০৭ সালে টম মুডির জায়গায় লঙ্কান কোচের নিয়োগ পেয়ে। এরপর একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দিয়েছেন বেলিসের হাতের মুঠোয়। এই মুহূর্তে বেলিসকে বিশ্বের সেরা কোচ বললেও অত্যুক্তি হবে না!

 

ডানকান ফ্লেচার

জিম্বাবুয়ের সুপারস্টার ক্রিকেটার ডানকান ফ্লেচার। তার নেতৃত্বেই ১৯৮২ সালে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় জিম্বাবুয়ে। ফ্লেচার কোচিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন ১৯৯৯ সালে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়ে যান। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ইংলিশ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার সময়ই ইংল্যান্ড দলে জাদুকরী এক পরিবর্তন আসে। দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষার পর ২০০৫ সালে মর্যাদার লড়াই অ্যাশেজ সিরিজ জেতে ইংল্যান্ড। অ্যাশেজে পরাজয় যেন ইংলিশদের নিয়তি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফ্লেচারের নেতৃত্বেই আলোর পথ দেখে ইংলিশরা। দারুণ এই অবদানের জন্য ২০০৫ সালে ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকে সম্মান সূচক ‘অর্ডার অব ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার’ লাভ করেন ফ্লেচার। ২০০৭ সালে কমনওলেথ ব্যাংক সিরিজও জিতিয়েছেন তিনি। ২০১১ সালে ভারতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেন।

 

মাইক হেসন

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের কথা চিন্তা করে তালিকা করলে উপরের দিকেই থাকবে কোচ মাইক হেসনের নাম। তিনি নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের দায়িত্ব পালনের আগে ঘরোয়া লিগেও দারুণ সফল ছিলেন। কোচিং করিয়েছেন আর্জেন্টিনা, কেনিয়ার ঘরোয়া লিগেও। হেসন আলোচনায় আসেন ২০১২ সালে, যখন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তারকা কোচ জন রাইটের জায়গায় তাকে নিয়োগ দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর দ্রুতই নিজের সক্ষমতার প্রমাণও দেন তিনি। হেসনের অধীনেই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। ২০১৭-১৮ মৌসুমে তিন ফরম্যাট মিলে টানা ১৩ ম্যাচ জেতার অনন্য রেকর্ড গড়ে কিউইরা। তার অধীনে নিউজিল্যান্ড ৫৩ টেস্ট খেলে হেরেছে মাত্র ১৯টিতে। জয় ২১ এবং ড্র ১৩ ম্যাচে। ১১২টি ওয়ানডের মধ্যে জয় ৬৫। হেসনই নিউজিল্যান্ড দলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

 

বব উলমার

বব উলমারের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এই ইংলিশ তারকা ক্রিকেটার খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব উরউইকশায়ারের কোচের দায়িত্ব নেন। খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই কোচিংয়ে দ্রুতই সুনাম অর্জন করেন। উরউইকশায়ার ১৯৯৩ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির শিরোপা এনে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পেয়ে যান। তার অধীনে প্রোটিয়ারা ১৫টি টেস্ট সিরিজ খেলে ১০টি-তেই বিজয়ী হয়। এই অসামান্য অর্জন বব উলমারের ক্যারিয়ারকে আরও আলোকিত করে তোলে। ২০০৪ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাদের নতুন কোচ হিসেবে তাকে বেছে নেন। পাক ক্রিকেটের দায়িত্ব নিয়েই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জেতে। এই অর্জনের জন্য পাকিস্তান সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ বিশ্বকাপ চলাকালীন হোটেলে তার ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়!

ড্যারেন লেহম্যান

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড্যারেন লেহম্যানের কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুটাই হয়েছে ঝড়ের মধ্যদিয়ে। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়া ভালো করতে না পারায় কোচ মিকি আর্থারকে বিদায় করে দিয়ে তারা লেহম্যানকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে পাস মার্কও পাননি। কারণ ইংলিশদের মাটিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩-০ ব্যবধানে হেরে যায়। অবশ্যই ওই সিরিজের পরই বাউন্স-ব্যাক করেন লেহম্যান। টেস্ট সিরিজে ইংলিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারলেও ওয়ানডে সিরিজ জেতে অস্ট্রেলিয়া। এরপর ২০১৫ সালে তো তার অধীনে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে অসিরা। ওই আসরে লেহম্যানের পরিকল্পনা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। এই অসি তারকা ক্রিকেটার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ২০০৮ সালে। আইপিএলের দল ডেকান চার্জার্সে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত। এরপর বিগ-ব্যাশের দল কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন এক মৌসুমে। এছাড়া কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়েও কোচিং করিয়েছেন লেহম্যান।

টম মুডি

সাম্প্রতিক সময়ের কোচদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করলেও প্রথম কয়েকজনের মধ্যেই থাকবে টম মুডির নাম। তার নেতৃত্বে যে কোনো দল বিশ্বকাপ জিতেছে এমন নয়। তবে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অথচ এই বিশ্বকাপে সুপার পাওয়ার দল নিয়েও প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়েছিল ভারত। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দারুণ সফল মুডি। তার অধীনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল রংপুর রাইডার্স এক মৌসুম আগেই জিতেছে শিরোপা। এখনো উত্তরাঞ্চলের দলটির কোচের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এছাড়া আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। এছাড়া পাকিস্তানের টি-২০ ক্রিকেট লিগের দল মুলতান সুলতানসেরও প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মুডি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত অলরাউন্ডার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ২১ হাজারের উপরে রান এবং সাড়ে তিনশর উপরে উইকেট আছে। সেঞ্চুরি আছে ৬৪টি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর