মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছোট প্রতিপক্ষ বড় চ্যালেঞ্জ

অধিকাংশ সময় মানসিকভাবে বেশি চাপ নিয়ে ছোট দলগুলোর বিরুদ্ধে ভালো করতে পারে না বাংলাদেশ। সামর্থ্য থাকার পরও ‘মনের বাঘ’ পিছিয়ে দেয় লাল-সবুজদের। আফগানিস্তানের মতো ‘ছোট’ দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার আগে এই ‘মনস্তাত্বিক বাধা’ দূর করাই এখন কোচ ডমিঙ্গোর বড় চ্যালেঞ্জ!

মেজবাহ্-উল-হক

ছোট প্রতিপক্ষ বড় চ্যালেঞ্জ

সাদা পোশাকে আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে কয়টি ম্যাচ আছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পরিসংখ্যান দেখার কোনো প্রয়োজন নেই! যারা ক্রিকেটের একটুখানি খোঁজ খবর রাখেন তাদের খুব ভালো করেই জানা।

এ পর্যন্ত সব মিলে মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছে আফগানরা। একটি ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্ট। আরেকটি ‘আনকোরা’ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের জুনে এক সঙ্গেই আফগান ও স্কটিশরা টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে।

দুই টেস্টে সাফল্য ও ব্যর্থতার হার -ফিফটি ফিফটি! ভারতের বিরুদ্ধে আফগানরা গো-হারা হেরেছে। আবার স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে নিজেদের তৃতীয় টেস্ট খেলতে মাঠে নামবে তারা।

এমন একটি নবীন দলকে নিয়ে কি চিন্তিত টাইগাররা?

ভাবনার বিষয় আছে বটে! দল কিংবা প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তান ‘ছোট’ হলেও বাংলাদেশের জন্য কিন্তু বড় প্রতিপক্ষ! কেননা টাইগারদের সামনে পেলেই কেন যেন বেশি ভালো খেলে ফেলে দলটি।

তা ছাড়া আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ঘরের মাঠে টাইগারদের পরিকল্পনা থাকে স্পিন ঘিরে। আর এখানেই বেশ শক্তিশালী রশিদ খানের আফগানিস্তান। কিন্তু কথা হচ্ছে, স্পিনে রশিদ খানরা কি সাকিবদের চেয়েও শক্তিশালী?

ঘরের মাঠে বাংলাদেশ স্পিন দিয়ে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তি দলকেও নাস্তানাবুত বানিয়ে ছেড়েছে। সাকিব-মিরাজ-তাইজুল এই ত্রি-ফলায় ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বেশ উজ্জ্বল। সঙ্গে ছিল মুস্তাফিজুর রহমানের কাটার-ইর্য়কার-স্লোয়ার। এবারও বাংলাদেশ দলে স্পিন-ত্রয়ী আছেন। তবে নেই দলের সেরা পেসার ফিজ।

আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্টের পরপরই শুরু হচ্ছে, ত্রিদেশীয় সিরিজ। ওই সিরিজের কথা চিন্তা করেই মুস্তাফিজকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া ফিটনেস সমস্যাও একটা কারণ ছিল।

মুস্তাফিজকে বিশ্রাম দেওয়ায় তাসকিন আহমেদকে নতুন করে দেখে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে গতির বোলার অনেকদিন থেকেই জাতীয় দলে ফেরার আভাস দিচ্ছেন। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিলেন না। পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই তাসকিনকে পরখ করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অনুশীলনে নতুন কোচের মনও জয় করে নিয়েছেন তাসকিন, এখন কেবল আসল লড়াইয়ে জ্বলে ওঠার অপেক্ষা!

সত্যিই যদি তাসকিন পুরনো ছন্দ নিয়ে দলে ফিরতে পারেন, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় পাওয়া। পেস আক্রমণে তখন মুস্তাফিজের সঙ্গে তার জুটিটাও দারুণ গড়ে উঠবে। সে যাই হোক, ঘরের মাঠে টাইগারদের ভরসা কিন্তু স্পিনেই। আফগান স্পিন বিষের কথা মাথায় থাকলেও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কিন্তু স্পিন উইকেটই চেয়েছেন। স্পিনে আফগানরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন ব্যাটিংয়ের কথা চিন্তা করলে অনেক এগিয়ে থাকবে স্বাগতিকরা। কারণ স্পিন বোলিংয়ে আফগানরা যতটা শক্তিশালী, স্পিন বল মোকাবিলায় কিন্তু ততটাই দুর্বল তাদের ব্যাটসম্যানরা!

নিজেদের প্রথম টেস্টে ভারতের স্পিনের বিরুদ্ধে তারা বাইশগজে গিয়ে একদমই সুবিধা করতে পারেনি। দুই ইনিংসেই টেনে টুনে দলীয়ভাবে সেঞ্চুরি করতে পেরেছে। ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রানেই অলআউট হয়েছিল। বিশ্লেষকদের মত, ভারতের মতো ‘কৌশল’ নিয়ে বাংলাদেশ মাঠে নামলেই তো কাজ অর্ধেক কমে যায়!

হয়তো আফগানদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা টেস্ট ম্যাচটি ‘ব্যবচ্ছেদ’ করবেন নতুন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। ওই টেস্টে কিন্তু দুই স্পিনার অশ্বিন ও জাদেজার পাশাপাশি ভারতীয় দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদব দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। যে কাজটি করতে হবে তাসকিন-রাহীদের। অধিকাংশ সময় মানসিকভাবে বেশি চাপ নিয়ে ছোট দলগুলোর বিরুদ্ধে ভালো করতে পারে না বাংলাদেশ। সামর্থ্য থাকার পরও ‘মনের বাঘ’ পিছিয়ে দেয় লাল-সবুজদের। আফগানিস্তানের মতো ‘ছোট’ দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার আগে এই ‘মনস্তাত্বিক বাধা’ দূর করাই এখন কোচ ডমিঙ্গোর বড় চ্যালেঞ্জ!

ইতিমধ্যেই কৌশলে দারুণ একটা চমক দেখিয়েছেন নতুন কোচ তথা টিম ম্যানেজমেন্ট, প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানদের বিরুদ্ধে ‘আনকোরা’ এক দলকে নামিয়ে দিয়ে! এই প্রস্তুতি ম্যাচে ক-িশন সম্পর্কে একটুখানি ধারণা পেলেও মূল দলের প্রতিপক্ষের কোনো ক্রিকেটার সম্পর্কে কোনো আন্দাজই পাননি রশিদ খানরা।

এদিকে ‘ছোট’ দলকে (আফগানিস্তানকে) বড় প্রতিপক্ষ ভেবেই শিষ্যদের প্রস্তুত করছেন ডমিঙ্গো। ম্যাচটিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তিনি। এখন দেখার বিষয়, নতুন কোচের এই কৌশল কতটা কার্যকরী হয়!

সর্বশেষ খবর