শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তবুও জয়ের স্বপ্ন সাকিবের

‘‘ ম্যাচ জেতা অবশ্যই সম্ভব। ক্রিকেটে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে পিছিয়ে থেকেও কামব্যাক করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড রয়েছে। আমরাও করব।

আসিফ ইকবাল, চট্টগ্রাম থেকে

তবুও জয়ের স্বপ্ন সাকিবের

সত্তর ও আশির দশকে সফরকারী দলগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে ঘূর্ণি উইকেট বানাত ভারত। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পরাক্রমশালী দলগুলোর নাভিশ্বাস উঠত ভারতীয় স্পিনারদের সামলাতে। প্রতিবেশী দেশ এখন সেই পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের দেখানো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ দেশগুলোর চোখের পানি, নাকের পানি এক করে জয়োৎসবে মেতে উঠতে মিরপুর, সিলেট, চট্টগ্রামে বানাচ্ছে একের পর এক স্পিন উইকেট। সাফল্যও পাচ্ছে তাতে। কিন্তু এবার বুমেরাং হয়ে ফিরেছে নিজেদের বানানো ফাঁদ! যে স্পিন উইকেটে আফগানিস্তানকে বেঁধে ফেলতে চেয়েছিলেন, সেই উইকেটেই এখন হাঁসফাঁস করছেন সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা। নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়ে এখন হারের শঙ্কায় ভুগছে। যদিও ম্যাচের বাঁকি আরও তিনদিন। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, কাইস আহমেদদের মায়াবী স্পিনে ১৯৪ রান তুলতে ৮ উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে আছে ১৪৮ রানে। তার পরও জয়ের দিবাস্বপ্ন দেখছেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব, ‘ম্যাচ জেতা অবশ্যই সম্ভব। ক্রিকেটে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে পিছিয়ে থেকেও কামব্যাক করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড রয়েছে। আমরাও করব।’

রহমত শাহ, আজগর আফগানদের হারাতে জহুর আহমেদে স্পিনিং উইকেট বানান পিচ কিউরেটর হিমাঙ্গিনি। তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে এতটাই সাবলীল ছিলেন যে সাকিব, তাইজুল, নাইম ও মিরাজের ঘূর্ণির বিপক্ষে কখনোই চাপে পড়তে দেখা যায়নি। সাকিবদের স্পিনকে সাধারণ মানে নামিয়ে রহমতের সেঞ্চুরি এবং আজগর আফগান ও রশিদের হাফসেঞ্চুরিতে ৩৪২ রান করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় টাইগারদের। ব্যাটিংয়ে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পারেননি সাদমান, সৌম্য, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা। নবির অফ স্পিন, রশিদের লেগ স্পিন, গুগলি ও আর্ম বল এবং কাইসের লেগ স্পিনের খেই হারিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে রশিদের স্পিনে আনকোরা ব্যাটিং করেছেন লিটন, সাকিব, মুশফিক মাহমুদুল্লাহ। তিনে খেলতে নেমে লিটন ৩৩ রান করলেও মিস টাইমিংয়ে বোল্ড হন রশিদের আর্মারে। বোকা বনেছেন ৫৬ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ সাকিব। বুঝতেই পারেননি রশিদের গুগলি। ২৭ মিনিট ক্রিকেজ থেকে ২০ বলের মুখোমুখিতে ১১ রান করেন এক চারে। অধিনায়কের বিদায়ী ওভারেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন মুশফিক। মাহমুদুল্লাহ প্রথম বলে নবিকে ডাউন দ্য উইকেটে বাউন্ডারি মারলেও অস্থির ছিলেন উইকেটে। রশিদের টার্নে পরাস্ত হয়ে ব্যক্তিগত ৭ রানে ফেরেন সাজঘরে। দলের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১৮ রান। অভিজ্ঞ তিনজনের দ্রুতলয়ে ফিরে আসায় চাপে পড়েন অপরাপর ব্যাটসম্যানরা। তবে দারুণ ব্যাটিং করে ৫২ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস খেলেন মুমিনুল। ৪৪ রানে অপরাজিত থেকে অধিনায়ককে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মোসাদ্দেক সৈকত।

 

তাই জয়ের স্বপ্ন দেখা অধিনায়ক সাকিব বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা এই ২ উইকেটে অন্তত একটি সেশন ব্যাট করা। তাহলে ৭০-৮০ রান যোগ হলে ব্যবধানটা কমে যাবে।

যে উইকেটে আফগানিস্তান ৩৪২ রান করেছে। রহমত শাহ সেঞ্চুরি, আজগর আফগান ও রশিদ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। সেখানে বাংলাদেশ ১৯৪ রান তুলতেই হারিয়েছে ৮ উইকেট এবং বড় ইনিংস বলতে মুমিনুলের ৫২ রান। ব্যাটসম্যানদের এমন যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পরও উইকেটকে আনপ্লেয়েবল বলেননি সাকিব, ‘উইকেট আনপ্লেয়েবল ছিল না। হয়তো আমরা ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারিনি। মোসাদ্দেক, তাইজুল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তাতে পরিষ্কার প্ল্যান করার পাশাপাশি থাকাও সম্ভব।’

আফগানিস্তানকে স্পিনে ধসিয়ে দিতে যেয়ে নিজেরাই আটকে পড়েছে ফাঁদে। রশিদের বলগুলোকে মনে হচ্ছিল এক একটি স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র। দুর্দান্ত বোলিং করে রশিদ ১৮ ওভারের স্পেলে ৪৭ রানের খরচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তার পরও আফগান অধিনায়কের বোলিংকে আহামরি বলেননি, ‘আমার মনে হয় উইকেটের কারণে সে একটু বেশি কার্যকর ছিল। একটু জোরে বোলিং করে বলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা লাইন মিস করেছেন। যেমন রিয়াদ ভাই ও লিটন বলের লাইন মিস বোল্ড হয়েছেন।’

জয়ের কথা ভাবাটা হয়তো দিবা স্বপ্ন। কিন্তু এখানে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার রেকর্ডও রয়েছে বাংলাদেশের। তাই স্বপ্ন দেখতেই পারেন সাকিব।

স্কোর কার্ড

আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস : ১১৭ ওভারে ৩৪২/১০

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৬৭ ওভারে ১৯৪/৮ (মুমিনুল ৫২, মোসাদ্দেক ৪৪*, লিটন ৩৩, রশিদ ৪/৪৭, নবি ২/৫৩,

ইয়ামিন ১/২১, কাইস ১/২২)।

*বাংলাদেশ ১৪৮ রানে পিছিয়ে।

সর্বশেষ খবর