রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পারবে কি বাংলাদেশ

আসিফ ইকবাল, চট্টগ্রাম থেকে

পারবে কি বাংলাদেশ

আজ সকালে ফের মাঠে নামবেন সাকিবরা। বোলিং করবেন আফগান ব্যাটসম্যানদের। সাদা চোখে চট্টগ্রাম টেস্টের চিত্র এমনই। মাঠে নামার আগের রাতে অবশ্য একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারেন টাইগার ক্রিকেটাররা। হেডিংলিতে চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডকে জয়ী করতে অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি করেন বেন স্টোকস। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এমন হিমালয়সম মানসিক দৃঢ়তার ইনিংস খুব কমই আছে। ইংলিশ অলরাউন্ডারের ইনিংসটিই বা দেখতে হবে কেন? দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ফুটেজও দেখতে পারেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সাদমান, লিটন, সৌম্যরা। বিপরীত পরিবেশে রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে যে শক্তিশালী মানসিকতা ও পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাটিং করতে হয়, তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ দলীয় অধিনায়ক সাকিব। খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ জেতার ভূরি ভূরি নজির রয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু অসম্ভব নয়। যদিও ইতিহাস টাইগারদের পক্ষে কথা বলছে না। সমর্থন দিচ্ছে না পরিসংখ্যানও। তবুও ক্রিকেট ‘মোস্ট গ্লোরিয়াস আনসার্টেন গেম’ বলেই জয়ের স্বপ্ন দেখছে ক্রিকেটাররা।

আফগানিস্তানকে হারের লজ্জায় ফেলতে ঘূর্ণি উইকেট বানায় টিম ম্যানেজমেন্ট। উল্টো তিন টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ আফগান স্পিনারদের মায়াবী জালে দিশেহারা হয়ে পড়েন সাকিবরা। সফরকারীদের ৩৪২ রানের জবাবে স্বাগতিকদের প্র্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ২০৫। টাইগারদের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে রশিদ  নেন ৫ উইকেট এবং মোহাম্মদ নবি ৩ উইকেট। ১৪৮ রানে পিছিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণে প্রথম ওভারেই ২ উইকেট তুলে নেন সাকিব। ২৮ রানে উপরের সারির ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত রাখেন সাকিবরা। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের রশি আরও শক্ত করে নিজেদের হাতে বেঁধে নেন রশিদরা।  প্রথম ইনিংসে ৯২ রান করা আজগর আফগান ফের ৫০ রান করেন। ওপেনার ইব্রাহিম জারদান সাজঘরে ফিরেন ৮৭ রানে। জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ২৩৭ রান তুলে দিন পার করে সফরকারীরা। আজ চতুর্থ দিন শেষ ২ উইকেটে আরও ব্যাটিং করবে। এরপর ছুড়ে দিবে টার্গেট। তবে টার্গেট যতই দিক না কেন, চতুর্থ ইনিংসে এত রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। তার উপর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা কঠিন স্বীকার করেছেন মেহেদী মিরাজ, ‘টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। আমাদের ব্যাটসম্যানদের এখানে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে।’

১৯ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছে ১২টি। ৯টি আগে ব্যাট করে এবং ৩টি রান তাড়া করে। সর্বোচ্চ ২১৭ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড রয়েছে সাকিবের নেতৃত্বের অভিষেক ম্যাচে। ২০০৯ সালে জর্জ টাউনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট টপকাতে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছিলেন সাকিব। প্রথমে রকিবুল হাসান ৬৫ রান এবং পরে সাকিব ৯৭ বলে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ৪ উইকেটের জয়ী করেন। ২০১৪ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের ছুড়ে দেওয়া ১০১ রান টপকে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিততে নাভিশ্বাস উঠেছিল টাইগারদের। জয়ের নায়ক ছিলেন দুই স্পিনার সাকিব ও তাইজুল। ২০১৭ সালে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয়ের নায়ক ছিলেন সাকিব ও তামিম। নিজেদের শততম টেস্টে জয়ের প্রথম ইনিংসে সাকিব ১১৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম করেছিলেন ৮২ রান। তিন জয়ই আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে টাইগাদের।

রশিদ বাহিনী এগিয়ে ৩৭৪ রানে। এত বড় টার্গেট তাড়া করেও ম্যাচ জেতার রেকর্ড নেই। তবুও স্বপ্ন দেখছেন মেহেদী মিরাজ, ‘আমাদের জন্য এই রান তাড়া করাটা সত্যিই কঠিন। তারপরও আমাদের চেষ্টা করতে বাধা নেই। আমাদের সুযোগ নিতে হবে। দুদিন সময় আছে। চেষ্টাটা আমরা করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করা। এজন্য অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এমন বড় স্কোর তাড়া করতে অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে হবে।’

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে তিনশোর্ধ্ব ইনিংস রয়েছে মাত্র ৩টি। ২০০৮ সালে মিরপুরে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪১৩। যা চতুর্র্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামেই দুটি তিনশোর্ধ্ব স্কোর। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩১ এবং একই সালে ভারতের বিপক্ষে ৩০১ রান। এই স্কোরগুলো থেকেই আত্মবিশ্বাস নিতে পারেন সাকিব বাহিনী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর