সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হতাশার ব্যাটিং

আসিফ ইকবাল, চট্টগ্রাম থেকে

হতাশার ব্যাটিং

মুশফিকুর রহিমের বিরুদ্ধে আফগানদের লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন। শেষ পর্যন্ত আফগানদের আবেদন সফলও হয়। মুশফিক সাজঘরে ফিরে যান। বাংলাদেশের দর্শকদের মনে শঙ্কার কালো মেঘ আরও ঘন হয়ে ওঠে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিপদে পড়লে খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে মানুষ! আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সাকিব বাহিনীর অবস্থা এখন লেজেগোবরে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে মান বাঁচাতে ও হার এড়াতে জানবাজি  রেখে লড়ছেন ক্রিকেটাররা। রশিদ খানের লেগ স্পিন, জহির খানের চায়না ম্যান ও নবির অফ স্পিনের সাঁড়াশি আক্রমণকে সামাল দিতে টাইগার অধিনায়ক সাকিব দাবা খেলার মতো বারবার পরিবর্তন এনেছেন পরিকল্পনায়। কিন্তু সাফল্য পাননি। উল্টো বুমেরাং হয়ে পরিকল্পনাগুলো নিজেদের কফিনেই পেরেক ঠুকেছে। শুরুতে স্পিন উইকেট বানিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে চেয়েছিল সফরকারীদের। সেই ফাঁদে আটকা পড়ে এখন নিজেরাই হাঁসফাঁস করছে। জয়ের জন্য রেকর্ড ৩৯৮ রান তারা করতে হবে বলেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন টাইগার অধিনায়ক। কিন্তু লাভের বদলে ব্যর্থ হয়েছেন পুরোপুরি। আফগান স্পিনারদের চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফিরেছেন দ্রুতলয়ে। হঠাৎ বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে স্কোর বোর্ডে জমা করেছে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান। ম্যাচ বাঁচাতে কিংবা জিততে এখনো ২৬২ রান দরকার টাইগারদের।

চতুর্থ ইনিংসে তিনশোর্ধ্ব রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড নেই টাইগারদের।। সর্বোচ্চ ২১৭ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতেছে। বাকি দুটি ১৯১ ও ১০১ রান। সেখানে ৩৯৮ রান! অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া হিমালয় ডিঙ্গানোর শামিল। সেই দুরূহ কাজটি করতে অধিনায়ক সাকিব ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। প্রথম ইনিংসে ওপেন করেছিলেন সাদমান ও সৌম্য সরকার। দুই ওপেনারের জুটি ছিল ০ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে সৌম্যকে ৮ নম্বরে পাঠিয়ে সাদমানের সঙ্গী করা হয় লিটনকে। কিন্তু লাভ হয়নি আহামরি। যদিও দুজনে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৩০ রান। সাদমান নিয়মিত ওপেনার। কিন্তু লিটনের জায়গা এখনো নিশ্চিত নয়। কখনো ওপেনার, কখনো ৫, ৬, ৭ ৮ নম্বর ব্যাট করেছেন। তার চার হাফসেঞ্চুরির সবগুলোই মিডল অর্ডার ও লেট মিডল অর্ডারে। সর্বোচ্চ ৯৪ রান করেন ৫ নম্বর পজিশনে। ৭০ রান ৬ নম্বর পজিশনে, ৫০ রান ৭ নম্বরে এবং ৫৪ রান ৮ নম্বর পজিশনে। ওপেন করে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৩৩।

শুধু লিটন নন, অধিনায়ক সাকিব চমকে দিয়েছেন মোসাদ্দেক সৈকতকে ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে পাঠিয়ে। তাকে দলে নেওয়া হয়েছিল লেট মিডল অর্ডার শক্তিশালী করতে। বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয়ে ৮ নম্বর পজিশনে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সৈকত। এই টেস্টের তিনি প্রথম ইনিংসে ৮ নম্বর পজিশনে খেলেছিলেন ৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৩ টেস্টের তিনবার ব্যাট করেন ৭ নম্বরে। এমন একটি চাপের মুখে মোসাদ্দেককে পাঠানো কতটা যৌক্তিক, সেটা জন্ম দিয়েছে প্রশ্নের। চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে মোসদ্দেক সাজঘরে ফিরেছেন ১২ রানে। তাকে তিনে ব্যাট করানোর ব্যাখ্যায় সাকিব বলেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেট তার ৩/৪টি ডাবল সেঞ্চুরি আছে। এছাড়া প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে সাবলীল ব্যাটিং করেছে সে। তাই আগের রাতেই পরিকল্পনা করেছিলাম তাকে ওপেন করাব। শেষ পর্যন্ত তিনেই ব্যাটিং করিয়েছি।’ ৩ নম্বর পজিশনে দলের সফল ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ব্যাটিং করেছেন ৫ নম্বরে।

 

৩৬ টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম ৫ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন মুমিনুল। যে ব্যাটসম্যান ওয়ান ডাউনে রান করেছেন ১৬৩১, সেঞ্চুরি ৫টি এবং হাফসেঞ্চুরি ৭টি, তাকে না পাঠিয়ে সৈকতকে পাঠানোর কারণ ৪০০ রানের টার্গেট, জানান অধিনায়ক। তিনি প্রথম ইনিংসে ৪ নম্বরে ব্যাট করে রান করেছিলেন ৫২। সেখানেও তাকে পাঠায়নি অধিনায়ক। প্রথমবারের মতো ৫ নম্বরে ব্যাট করে দেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেন ৩ রানে। মুশফিক দেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক ১০ ইনিংস পর ৪ নম্বরে ব্যাট করেন। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৬ নম্বরে। অথচ ৫ নম্বরে গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৯ রানের একটি ইনিংসও রয়েছে। তাকে পাঁচে না পাঠিয়ে সাকিব নিজে ব্যাটিং করেছেন।

আকাশসম চাপকে সামাল দিতে যে সলিড পরিকল্পনা দরকার, তার ধারে কাছে হাঁটতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব। যদিও অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়তে ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন। ক্রিকেটাররা রশিদের মায়াবি লেগ স্পিন, জহিরের চায়না ম্যান এবং নবির অফ স্পিনের ছোবলে নীল হয়ে ধীরে ধীরে নির্জীব হয়ে পড়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর