মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেদনাবহ!

শূন্যের বিপরীতে আফগানদের সাকিবের লেটার মার্কস

আসিফ ইকবাল, চট্টগ্রাম থেকে

বেদনাবহ!
আমাদের ব্যাটসম্যান ও আফগানিস্তানের বোলার খেলার ধরন দেখেই বোঝা যায় সমস্যা কোথায়! ভালো দল হতে হলে আমাদের আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। ২০ বছর টেস্ট খেলার পর আমরা তো আর বলতে পারি না যে নতুন করে কৌশল শিখতে হবে! তবে এটা ঠিক অনেক দিন পর টেস্ট খেলছি আমরা। এ জয়ের জন্য আফগানিস্তানকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। -সাকিব আল হাসান

মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। জয়ের উচ্ছ্বাসে এসেছেন কখনো। আবার কখনো পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে। কিন্তু এত হতাশ কিংবা ক্লেশে কখনো মনে হয়নি বিশ^সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। এতটা বেদনাহত ও হতাশায় মুহ্যমান দেখা যায়নি কখনোই। শুধু তাই নয়, এমন চাপে থাকতেও দেখা যায়নি তাকে। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নবাগত আফগানিস্তানের কাছে ২২৪ রানের পর্বতসমান ব্যবধানে হারের পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে স্বভাববিরোধী ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েছেন টাইগার অধিনায়ক। প্রায় দুই দশকের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ প্রিয় বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ কোনোভাবেই মেনে নেননি। নিজের এবং গোটা দলের পারফরম্যান্সে মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়েছেন যে, পারফরম্যান্সের বিচারে বাংলাদেশকে ‘শূন্য’ দিতে দ্বিধা করেননি। অসাধারণ ক্রিকেট  খেলে জয় তুলে নেওয়ায় আফগানিস্তানকে দিয়েছেন  লেটার মার্কস।

জিততে না পারায় যতটা হতাশ। তার চেয়েও বেশি হতাশ রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, কাইস আহমেদ, জহির খান, রহমত শাহ, আজগর আফগানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে না পারায়। রশিদ খানের লেগ স্পিনের বিপক্ষে সতীর্থদের অসহায় আত্মসমর্পণ  দেখে বলেছেন, ‘২০ বছর পর এখন আর বলা যাবে না আমরা শিখছি।’ তামিমবিহীন দলের কোনো ক্রিকেটারই সাবলীল ছিলেন না আফগানদের বিপক্ষে। শুরু থেকে চারদিন পর্যন্ত সব অসহায়ত্ব কর্ণফুলীর জলে ভেসে যেত, যদি শেষ বিকালের ৭০ মিনিটের লড়াইটা জিততে পারতো। সেটা হয়নি। রশিদের সাঁড়াশি আক্রমণে সুর, তাল ও লয় হারিয়ে  হেরেছে ২২৪ রানে। অথচ হারের লজ্জা থেকে বাঁচতে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটে খেলতে হতো ১৮.৩ ওভার। ৭০ মিনিটের কঠিন লড়াই জিততে নেমে প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেন টাইগার অধিনায়ক। ‘চায়নাম্যান’ স্পিনার জহিরের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলকে অহেতুক খেলতে যেয়ে গ্লাভসবন্দী হন ইব্রাহিমের। সেই ধাক্কা আর সামলাতে পারেননি  সৌম্য, মিরাজ, তাইজুল ও নাইমরা। যদিও লড়াই করতে চেষ্টা করেছেন সৌম্য। ৫৯ বল খেলেছেন। কিন্তু সেটা ম্যাচ বাঁচানোর মতো ছিল না। সৌম্যর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৩ রানে। অথচ আর মাত্র ২০টি বল  খেললেই চরম নাটকীয়তায় ভরা ও উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটি ড্র হতো। কিন্তু পারেনি। তাই ম্যাচ  শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার অধিনায়কের কন্ঠে ঝরে পড়েছে হতাশা, ‘এমন হার মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। তবে এমন হারকে কোনোভাবেই লজ্জাজনক বলবো না। আফগানিস্তান ভালো খেলেই জিতেছে। সব মিলিয়ে বলবো দলের এমন পারফরম্যান্সে আমি হতাশ।’

৫৬ টেস্ট ক্যারিয়ারে এমন চাপ সামলেছেন বহুবার। কিন্তু গতকাল হেরেছেন চাপের কাছেই।  শেষ বিকালে ম্যাচ বাঁচাতে যখন ব্যাটিংয়ে নামেন টাইগার অধিনায়ক, তখন ব্যাট করতে হতো ১৮.৩ ওভার। আকাশসম চাপ। সেই চাপ উতরে যেতে পারেননি। চায়নাম্যান স্পিনার জহিরের প্রথম বলেই কাট শট খেলে তালুবন্দী হন উইকেটরক্ষকের। এমন আউটের ব্যাখ্যায় টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘প্রথমবার ব্যাটিংয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়বার নার্ভাস ছিলাম।’ তার বিদায়ের পর সৌম্য, মিরাজ ও তাইজুল টিকেছিলেন মাত্র ৩৭ বল।

মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলছে আফগানিস্তান। ভারতের কাছে ইনিংস হারের পর আয়ারল্যান্ডকে হারায়। দুই  টেস্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে জহুর আহমেদে শুরু থেকে  শেষ পর্যন্ত দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে নবাগত দলটি। বিপরীতে ১১৫ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ বাংলাদেশ শুরু  থেকেই ছিল ব্যাকফুটে। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং-কোনো বিভাগেই লড়াই করতে পারেনি।

আফগানদের পক্ষে রহমত শাহ সেঞ্চুরি, হাফসেঞ্চুরি করেন আজগর আফগান, অধিনায়ক রশিদ ও ইব্রাহিম জাদরান হাফসেঞ্চুরি করেন। বিপরীতে টাইগারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন মুমিনুল হক। বোলিংয়ে রশিদ দুই ইনিংসে নেন ১১ উইকেট। টাইগারদের সেরা বোলার তাইজুল নেন ৬ উইকেট। দুই দলের বিপরীত ধারার পারফরম্যান্সের বিচারে নিজের দলকে দেন ‘শূন্য’ মার্কস। আফগানিস্তানকে দেন ‘লেটার’ মার্কস, ‘এমন যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর দলকে শূন্য দিলাম। আফগানিস্তান পাবে লেটার মার্কস।’

২০০০ সাল থেকে টেস্ট খেলছে। হারিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে। তারপরও সাকিব মনে করেন ক্রিকেটারদের এখনো শিখতে হবে, ‘টেস্টে সাফল্য পেতে আমাদের কোয়ালিটি ক্রিকেটার থাকতে হবে। ক্রিকেটারদের অবশ্যই এমন পরিস্থিতি সামাল  দেওয়া শিখতে হবে।

সর্বশেষ খবর