শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আফিফের আলো ঝলকানো ব্যাটিং

মেজবাহ্-উল-হক

আফিফের আলো ঝলকানো ব্যাটিং

বাংলাদেশের জয়ের নায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব। - ছবি : রোহেত রাজীব

সাকিব আল হাসানের জন্য ম্যাচটি ছিল ‘অন্যরকম’ এক পরীক্ষা! হতাশাগ্রস্ত একটি দলকে বের করে আনতে হবে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে। কিন্তু এমন এক ম্যাচে কিনা ‘অলরাউন্ডার’ সাকিব ব্যর্থ! ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই তাকে আটকে দিল জিম্বাবুইয়ান! তবে বড় সাকিব ব্যর্থ হলেও ‘ছোট সাকিব’ ঠিকই বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছেন!

হ্যাঁ, আফিফ হোসেন ধ্রুবকে তো সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবেই দেখেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা! মাত্র ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে বাইশ গজে যান, তারপর চাপকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শুরু করেন তার সৌরভ ছড়ানো ব্যাটিং। মাত্র ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন ধ্রুব। যদিও ম্যাচটি শেষ করে দিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। তবে আফিফ যখন আউট হয়েছেন তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল আর মাত্র ৩ রান। মোসাদ্দেকের দায়িত্বশীলতায় দুই বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। অনেকদিন পর জয়ে   ফিরল টাইগাররা। ত্রিদেশীয় সিরিজটি দারুণভাবে শুরু করল বাংলাদেশ।

অন্য কোনো সময় হলে এই জিম্বাবুয়েকে পাত্তাই দিত না বাংলাদেশ! কিন্তু সময়টা ভালো ছিল না। টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৪ নম্বরে থাকা দলটি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে বোলিং ও ব্যাটিংয়ে যেভাবে আটকে দিয়েছিল, মনে হচ্ছিল সামনে আবারও ‘অশনি সংকেত’! সাকিব ৪ ওভার বোলিং করে ৪৯ রান দিয়েছেন। নিজের শেষের ওভারটির কথা কখনোই ভুলতে পারবেন না! ওই ওভারে দিয়েছেন ৩০ রান। টি-২০র ক্যারিয়ারেই এটি ছিল তার সবচেয়ে বাজে ওভার। ব্যাট হাতে দুই অঙ্কের কোঠাতেও পৌঁছতে পারেননি। শুধু সাকিব একা নয়, অন্য দুই সিনিয়র মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থ দুই ওপেনারও। এমন দিনে জিম্বাবুয়ের করা ১৪৫ রানের টার্গেটটাকেও পাহাড় মনে হচ্ছিল। অবশ্য লক্ষ্য খুব সহজ ছিল এমনও নয়।  কেন না বৃষ্টির কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য যে ২ ওভার কমিয়ে ১৮ ওভারে নিয়ে আসা হয়েছিল।

তবে জিম্বাবুয়ের ইনিংসটা আরও ছোট হতে পারত, যদি না রায়ান বার্লে মাত্র ৩২ বলে ৫৭ রানের একটি তা বে ইনিংস খেলতেন। শেষ ৫ ওভারেই আফ্রিকান দলটি করেছিল ৬৮ রান। ৬৩ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ষষ্ঠ উইকেট জুটির ৮১ রান তাদের এনে দিয়েছিল বড় সংগ্রহ। তবে জিম্বাবুয়ের শেষের ৫ ওভার যতটা ভালো ছিল তার চেয়ে হাজার গুণ বাজে ছিল বাংলাদেশের প্রথম ৫ ওভার! পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু আফিফের মতো একজন মারকুটে ছিলেন বলেই এ যাত্রায় রক্ষা পায় টাইগাররা। সপ্তম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৮২ রানের জুটি গড়েন আফিফ।

বৃষ্টির কারণে গতকাল শেরে বাংলায় খেলা শুরু হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর। তাই দুই ইনিংস থেকেই কাটা হয় দুই ওভার করে। রাত ৮টায়  খেলা শুরু হলেও আশঙ্কা ছিল বৃষ্টির! সে কারণেই কিনা টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে পরে ব্যাট করার বাড়তি সুবিধা আছে। প্রতিপক্ষের স্কোর দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি গতিতে রান তুলতে হবে!

টি-২০ নাকি তরুণদের খেলা! সেখানে গতকাল ২৮ বছর বয়সে অভিষেক হলো ‘বুড়ো’ তাইজুল ইসলামের। আর প্রথম বলেই বাজিমাত করে দিলেন। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়ের মারকুটে ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলরকে। এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ওয়ানডের অভিষেক ম্যাচেও হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিয়ে  রেকর্ডবুকে নতুন অধ্যায় খুলেছিলেন। কিছুদিন পর যদিও তাইজুলের সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। তবে কালকের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের করে নিতে পারেননি তাইজুল। তিন ওভারে দিয়েছেন ২৬ রান।

বোলিং শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। পাওয়ার  প্লের প্রথম পাঁচ ওভারে উইকেট মাত্র একটি নিতে পারলেও রানে আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছিল প্রতিপক্ষকে। তাই তো পরে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে মাত্র ১২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। একটা সময় তাদের স্কোর ছিল ৫১/১। সেখান থেকে হঠাৎ হয়ে যায় ৬৩/৫! এমন বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে জিম্বাবুয়েকে আলোর পথ দেখান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রায়ান বার্লে। মাত্র ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন এই জিম্বাবুইয়ান। টি-২০তে এটি তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।

গতকাল দুর্দান্ত একটি ক্যাচও নিয়েছে বার্লে। তবু দলকে জেতাতে পারেননি। কারণ কালকের দিনটি যে ছিল বাংলাদেশের। এ ম্যাচ দিয়েই পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙল টাইগাররা।

সর্বশেষ খবর