মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বারবার পরিবর্তন, সমস্যা কোথায়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বারবার পরিবর্তন, সমস্যা কোথায়

ক্যারিয়ারে ৬৭ টেস্ট, ২১৬ ওয়ানডে ও ৭৯টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। এক যুগের ক্যারিয়ারে ওপেন করেছেন মাত্র একবার। সেটা আবার ১০ বছর আগে, ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ে ম্যাচে। পরের এক দশকে তিনি অধিকাংশ সময়েই ব্যাটিং করেছেন ৪ কিংবা ৫ নম্বর পজিশনে। পরশু আফগানিস্তান ম্যাচে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে মুশফিক চমকে দেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ক্রিকেটপ্রেমীদের। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫ রানের হারে যতটা সমালোচিত সাকিব বাহিনী, তারচেয়েও কম নিন্দার ঝড় বইছে না মুশফিককে ওপেন করানোয়। ওপেনার সৌম্য সরকারের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ১০ বছর পর ফের ওপেনার বানান সাবেক অধিনায়ককে। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের ওপেন করতে নামা অন্যায় কিছু নয়, কিন্তু দল যে সংকটে রয়েছে, ব্যাটসম্যানরা যে আস্থাহীনতায় ভুগছেন, ক্রিকেটটা ঠিক উপভোগ করছেন না এবং শরীরি ভাষায় লড়াকু মেজাজ নেই- সৌম্যর জায়গায় মুশফিকের ওপেন করতে নামা স্পষ্ট করে দিয়েছে আলোর মতো। প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতর দ্বন্দ্ব বা অন্য সমস্যা রয়েছে কিনা।

চট্টগ্রামে টেস্ট হারের পর নানা কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন সাকিব। জানিয়েছিলেন, অধিনায়ক হিসেবে খেলতে না নামলে চাপমুক্ত ক্রিকেট খেলা যায়। গোটা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যার দেখা মেলেনি, তা বারবার করেছেন চট্টগ্রামে। টেস্টের পাঁচ দিনে তিনবার মুখোমুখি হয়েছেন মিডিয়ার। রশিদের লেগ স্পিন, গুগলী ও আর্মারে বারবার বোকা বনেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে বৃষ্টিস্নাত শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচাতে ৭০ মিনিট ব্যাটিং করতে না পারায় পরিষ্কার হয়েছে, চাপের মুখে টাইগার ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস থাকে তলানিতে। রশিদের মায়াবী ঘূর্ণিতে বোকা হয়েছেন সাকিব, সৌম্যরা। তিনদিন মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার অধিনায়ক বলেছেন, দলের জুনিয়র ক্রিকেটারদের চাপ থেকে বাঁচাতেই তিনি এসেছেন। সাকিবের ওই বক্তব্য পরিষ্কার করে দেয়, ভালোমানের স্পিনারদের বিপক্ষে টেকনিক্যালি বরাবরই দুর্বল টাইগার ব্যাটসম্যানরা।

শুধু টেস্ট ক্রিকেট কেন? আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচেও আস্থাহীনতায় ভুগেছেন ব্যাটসম্যানরা। মুশফিক ব্যাটিং করতে নেমে যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে সমালোচনার ঝড় বইছে চারিদিকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে বাঁ হাতি পেসার ফারিদ আহমেদকে স্কুপ খেলতে যেয়ে বোল্ড হন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। নতুন বলে এমন আউটের সমালোচনায় ক্রিকেট বোর্ডের একজন পরিচালক বলেছেন, ‘মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানের এমন শিশুসুলভ ব্যাট চালানো উচিত হয়নি। আউট হওয়ার ধরনে মনে হয়েছে মেয়েরা ক্রিকেট খেলছেন।’ শুধু তিনি নন, লিটন, সাকিব, সাব্বির, মাহমুদুল্লাহদের ব্যাটিংও ছিল শিশুসুলভ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কোনো রকমে জয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ। ব্যাটসম্যানদের টানা ব্যর্থতায় পরিষ্কার, ব্যাটসম্যানরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। পারফরম্যান্স করতে পারছেন না বলে স্কোয়াডে পরিবর্তন আসছে বারবার। এই পরিবর্তন শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, বোলিংয়েও। পরশু নবভরি মেজাজী বোলিংয়ের মুখে একমাত্র সাকিব ছিল ছন্দে। ৪ ওভারের স্পেলে ডট নেন ১৬টি। ১৮ রানের খরচে নেন ২ উইকেট। সাইফুদ্দিন ৪ উইকেট নিলেও ৪ ওভার রান দেন ৩৩। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৬ রানের খরচে ছিলেন উইকেটশূন্য। আগের ম্যাচে প্রথম বলে উইকেট নেওয়া তাইজুল রান দিয়েছেন ৩২। ব্যাটিংলাইন শক্তিশালী করতে একজন বোলার কম নিয়ে খেলার খেসারত গুনেছে দল ৪ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে।

ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন না। ছন্দে নেই বোলাররা। তাই তিন জাতির টি-২০ টুর্নামেন্টের বাকি দুই ম্যাচের জন্য নতুন স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি। দলে চমক লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। টি-২০ ক্রিকেটে অপাক্ততেয় হওয়ার পরও ডাক পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এক সময় নির্বাচকরা যার ভিতরে ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিলেন না। সেই নাজমুল শান্ত সবাইকে চমকে দিয়ে সুযোগ পান স্কোয়াডে। নাটকীয় স্কোয়াড ঘোষণায় বাদ পড়েছেন সৌম্য সরকার, আবু হায়দার রনি, ইয়াসিন আরাফাত মিশু ও মেহেদি হাসান। তাদের জায়গায় ফিরেছেন দুই অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর