বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দলে নেই ‘পাওয়ার হিটার’!

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও একই কথা জানালেন, ‘এখানে আমাদের ঘাটতি আছে। এখনো আমরা পাওয়ার হিটার পাইনি। কিন্তু কি করা যাবে। যারা আছে তাদেরকে নিয়েই তো চেষ্টা করতে হবে।’

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

দলে নেই ‘পাওয়ার হিটার’!

সমস্যাটা নতুন নয়! বেশ পুরনো। বাংলাদেশ দলে নেই  কোনো পাওয়ার হিটার! অথচ টি-২০ ক্রিকেটে এমন ব্যাটসম্যানই সবার আগে দরকার যারা খুব কম সময়ে কম বল ফেস করে দ্রুত রান তুলবেন।

ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে বলে বলে রান করার ব্যাটসম্যান অনেকেই আছেন। কিন্তু টি-২০তে তো আর  কেবল মাত্র বলে রান করলেই চলে না। দেড় কিংবা দুইশ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করতে পারেন এমন ব্যাটসম্যান দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এমন পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান কোথায়?

সাব্বির রহমানকে দলে নেওয়া হয় টি-২০ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু সেই সাব্বির কিনা প্রথম দুই ম্যাচে নিজেকে ‘পাওয়ার হিটার’ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে তিনি করেছে ১৫ বলে ১৫ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে ২৪ রান করতেই খেলেছেন ২৭ বল।

দুইশ স্টাইকরেট তো দূরের কথা, সাব্বির যে স্টাইলে ব্যাটিং করেন আজকাল স্লোক ওভারে ওয়ানডেতেও এরচেয়ে বেশি স্টাইকরেটে ব্যাট করতে দেখা যায় অনেককে। প্রথম ম্যাচে সাব্বিরের স্টাইকরেট ১০০ হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তা ৮৮.৮৮!

এই সাব্বিরই যদি হয় বাংলাদেশের পাওয়ার হিটার, তাহলে অন্যদের কথা তো না বললেও চলে!

আগের ম্যাচে বাংলাদেশ আফগানদের কাছে হেরে যায় ২৫ রানে। ম্যাচের ‘ব্যবচ্ছেদ’ করলে ব্যাটিং, বোলিংয়ের অনেক সমস্যাই সামনে চলে আসবে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি তা হলে পাওয়ার হিটারের অভাব।

আফগানরা শুরুতে ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে পড়েও দ্রুত ছক্কা-চার হাঁকিয়ে ম্যাচে বড় সংগ্রহ করে। ইনিংসে তারা সবমিলে ছক্কা হাঁকিয়েছিল মোট ১০টি। অথচ বাংলাদেশের ইনিংস ছক্কা ছিল মাত্র একটি। এখানেই একটা লম্বা গ্যাপ।

এর আগে অনেকবার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পাওয়ার হিটারের ঘাটতির কথা জানিয়েছেন। গতকাল বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা  মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও একই কথা জানালেন, ‘এখানে আমাদের ঘাটতি আছে। এখনো আমরা পাওয়ার হিটার পাইনি। কিন্তু কি করা যাবে। যারা আছে তাদেরকে নিয়েই তো চেষ্টা করতে হবে।’

সামনের বছর টি-২০ বিশ্বকাপ। বড় বড় দলগুলো এখন  থেকেই টি-২০ সবচেয়ে বড় আসরকে সামনে রেখে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমে পড়েছে। বাংলাদেশের দৃষ্টিও এখন সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু পাওয়ার হিটারের ঘাটতি পূরণ হবে কীভাবে?

তবে এটাও ঠিক, কেবলমাত্র পাওয়ার হিটারের অভাবই হারের একমাত্র কারণ নয়! বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরে যাচ্ছে। তাই আজ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আরও ক্যালকুলেটিভ হয়ে  খেলার কথা জানালেন মোসাদ্দেক, ‘দেখা যাচ্ছে যে আমরা বার বার ১৫-২০ রানের জন্য হেরে যাচ্ছি। আমাদের আরও ক্যালকুলেটিভ হয়ে খেলতে হবে। যতটা সম্ভব কম ভুল করতে হবে।’

বাংলাদেশ দলে এখন হাজারো সমস্যা! একে তো নতুন  কোচের সঙ্গে দলের বোঝাপড়াটা পুরোপুরি হয়ে ওঠেনি। তার ওপর একের পর এক হারে বাড়ছে চাপের বোঝা। দল নির্বাচনেও অস্থিরতা। ত্রিদেশীয় সিরিজে ইতিমধ্যেই ডাকা হয়েছে ১৯ ক্রিকেটারকে। প্রতি ম্যাচের পরই কোনো না কোনো রদবদল হচ্ছে। যেমন দ্বিতীয় টি-২০র জন্য ডাকা হয়েছিল পেসার আবু হায়দার রনিকে। কিন্তু তাকে মাঠে নামিয়েই বাদ দেওয়া হয়েছে পরের দুই টি-২০র দল  থেকে। মেহেদী হাসান ও ইয়াসিনকেও না খেলিয়েই বাদ  দেওয়া হয়েছে।

 কোনো ক্রিকেটারকে কি দেখে দলে ডাকা হয়, আর তাকে না খেলিয়ে কি দেখেই বা বাদ দেওয়া হয়? দল নির্বাচনে  যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্বয়ং ক্রিকেট  বোর্ডই যেখানে অস্থিরতায় ভুগছে সেখানে ক্রিকেটাররাই বা নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস পাবেন কীভাবে? এই অস্থিরতা বিরাজমান থাকলে হারের জন্য পাওয়ার হিটারের অভাব বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ লাগবে না। এমন পরিস্থিতি জিম্বাবুয়ের মতো ভঙ্গুর দলগুলোও সামনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়!

তাই আজ জিম্বাবুয়েই কঠিন প্রতিপক্ষ! 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর