শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিপ্লবের বৈপ্লবিক কান্ড

‘সাকিব ও রিয়াদ ভাইয়ের মতো বড় খেলোয়াড় যখন এগুলো বলেন তখন এমনিই আত্মবিশ্বাস চলে আসে। আমি শুধু ওটাকে কন্টিনিউ করার চেষ্টা করেছি।’

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

বিপ্লবের বৈপ্লবিক কান্ড

টাইগারদের নতুন বোলিং সেনসেশন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব

এ যে হঠাৎ আলোর ঝলকানি! আমিনুল ইসলাম বিপ্লব একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। দলে সুযোগও পেলেন তার ব্যাটিং ক্যারিশমার জন্য। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে জিম্বাবুয়ে বিরুদ্ধে ১৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে ঘটালেন এক বৈপ্লবিক কান্ড ! বিপ্লবকে ঘিরেই এখন লেগ-স্পিনে আশার আলো  দেখছে বাংলাদেশ।

ব্যাটসম্যান থেকে রাতারাতি হয়ে গেলেন বোলার! হয়তো পরিসংখ্যান দেখে বিপ্লবের সম্পর্কে বিচার করা কঠিন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে তিনি যে আত্মপ্রত্যয়ী  বোলিং করেছেন নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে টাইগারদের। এবার বুঝি লেগ-স্পিনের হতাশাটা কাটল!

বিপ্লবের কাছে জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা ছিল স্বপ্নের মতো। দ্বিতীয় টি-২০তে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হারের পর সাব্বির রহমানের জায়গায় তাকে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যাট হাতে বাইশগজে নামলেও বল ফেস করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু বল হাতেই নিজের যথার্থতা প্রমাণ করলেন।

তবে ব্যাটসম্যান বিপ্লবের গল্পটা একটু ভিন্ন। প্রথম দিকে তিনি বোলিং করতেন। সাদামাটা বোলিং! তারপর কাঁধের ইনজুরির কারণে শুধু ব্যাটিংয়েই মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর হাইপরফরম্যান্স দলের কোচ সাইমন হেলমট ও  কোচ ওয়াহেদুল গনির সঙ্গে বেশ কিছুদিন বোলিং নিয়ে কাজ করেন। এরপর সরাসরি জাতীয় দলে।

তবে বিপ্লবের দলে সুযোগ পাওয়াটা আকর্ষিক হলেও তার প্রচেষ্টা ছিল সুদূরপ্রসারী। তিনি শেন ওয়ার্নের মতো কিংবদন্তি লেগ স্পিনারের কথা জানেন। এখন খুব কাছে থেকে দেখছেন রশিদ খানকে। ‘পুঁচকে’ এক দলের সদস্য হয়েও কিভাবে  লেগ-স্পিনে বিশ্বমাত করে দেওয়া যায়।

বিপ্লব, খুব ভালো করেই জানেন জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া যতটা কঠিন তার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ টিকে থাকা। মুদ্রার উল্টোপীঠ সম্পর্কেও চমৎকার ধারণা আছে তারা। তিনি দেখেছেন জুবায়ের হোসেন লিখন, তানভীর হায়দারের মতো  লেগ-স্পিনাররা অমিত সম্ভাবনা নিয়ে দলে প্রবেশ করেও আবার দ্রুতই ছিটকে গেছেন। প্রদ্বীপের পাদদেশেই যে অন্ধকারও বিরাজ করে তা মাথাতেই আছে বিপ্লবের!

তাই তো প্রথম ম্যাচের পর তাকে নিয়ে যে হাইপ উঠেছে তাতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছেন না। বরং নিজের প্রতি আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছেন। ‘আমি ফিল করি সেল্ফ কন্ট্রোল অনেক বড় জিনিস। নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি  দেখেছি আগে কারা কে কি করেছে। চেষ্টা থাকবে নিজেকে কন্ট্রোল করে ডে-বাই-ডে উন্নতি করার  চেষ্টা করব। ম্যাচ-বাই-ম্যাচ ভালো করার চেষ্টা করব।’

তবে শুধু কথায় নয়, কাজেও যে বিপ্লবী তা তো প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বিরুদ্ধে বল করে বল থ্রুতে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ডান হাতে  চোট পেলেন। তারপরই সেই মাসাকাদজাকে তিনিই বিদায় করে দিলেন। প্রথমে মনে হচ্ছিল, হাতে  তেমন কিছু হয়নি, পরে দেখা গেল তার হাতে তিনটা সেলাই করতে হয়েছে! আগামীকালের ম্যাচ খেলতে পারবেন কিনা শঙ্কা! তবে মনের জোর ব্যাপক। বিপ্লব জানালেন, ‘ব্যথা অনেকটাই কমেছে। খেলতে পারব কিনা, সেটা ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যাবে। টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখন আমার কাছে হাত ভালোই মনে হচ্ছে।’

বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীও আশার বাণী শুনিয়েছেন, ‘তিনটি সেলাই নিয়ে আমি অনেককেই  খেলতে দেখেছি। ওর ইনজুরি স্পিনিং হাতেও নয়। তবে পরের ম্যাচ যেহেতু ২ দিন পরই, কিছু বলাও কঠিন। সবকিছু নির্ভর করছে আসলে ফিজিও ও টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর। তারাই ম্যাচের আগে অবস্থা দেখে বুঝতে পারবেন যে পরের ম্যাচে ওকে  খেলানো যাবে কিনা।’ অভিষেক ম্যাচে প্রথম দিকে কিছুটা নার্ভাস ছিলেন বিপ্লব। তাকে সাহস দিয়েছেন দলে তিন সিনিয়র সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তারপর সাহসী হয়ে ওঠেন তিনি। বিপ্লব বলেন, ‘সাকিব ও রিয়াদ ভাইয়ের মতো বড়  খেলোয়াড় যখন এগুলো বলেন তখন এমনিই আত্মবিশ্বাস চলে আসে। আমি শুধু ওটাকে কন্টিনিউ করার  চেষ্টা করেছি।’

বিপ্লব আরও সাহসী হয়ে উঠুক। পাশাপাশি চলুক তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা। পরের ম্যাচে, পরের সিরিজে এমনকি পরের যুগটাই বিপ্লব শাসন করুক! তার হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ-স্পিনে ঘটে যাক মহাবিপ্লব!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর