শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফাইনালের টেকনিক্যাল শো

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

ফাইনালের টেকনিক্যাল শো

নাটক মঞ্চায়নের আগে এবং রিহার্সেলের পর টেকনিক্যাল শো (কারিগরি মঞ্চায়ন) হয়! চূড়ান্ত মঞ্চায়নের পূর্বে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভুলগুলোও শুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ! আজকের বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচও ফাইনালের আগে টেকনিক্যাল শো!

খালি চোখে সিরিজে নিছক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া এই ম্যাচের তেমন একটা গুরুত্ব নেই। তবে ফাইনালের আগে পাওয়া এই টেকনিক্যাল শোতে কিছুতেই কোনো রকম ভুল করতে চায় না বাংলাদেশ।

ঠিক এই কারণেই ম্যাচটি সাকিবদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিরোপা লড়াইয়ের আগে কে না চায় নিজেদের শক্তিমত্তা দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘাবড়ে দিতে?

তবে এই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য মর্যাদার লড়াইও বটে! কারণ টি-২০ তে এর আগে আফগানদের বিপক্ষে আগের ৫ ম্যাচের চারটিতেই হেরেছে টাইগাররা। শেষ চারটি টানা হার। এটা তাই স্বাগতিকদের এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২০১৪ এর পর দ্বিতীয় জয় তুলে নেওয়াও।

সাকিবরা টি-২০ তে ততটা ভালো দল নয়! গেল বছর তবু ভারতের বিপক্ষে কলম্বোতে প্রথম কোনো ফাইনালে খেলেছিল। জিততে পারেনি নিদাহাস ট্রফি। তবে এই ফরম্যাটে আত্মবিশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান সেই দলটিকেই তার পরই দেরাদুনে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে আফগানিস্তান, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট মর্যাদায় আঘাত হয়ে এসেছিল।

ঠিক পরের সিরিজেই টাইগাররা যখন ক্যারিবীয় দ্বীপে গিয়ে টি-২০র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারায়, তখন বোঝা যায়, আসলে সামর্থ্যে ঘাটতি নেই বাংলাদেশের। সমস্যা অন্যখানে। আফগানরা এখন যতটা প্রবল প্রতিপক্ষ, তার চেয়েও বড় নিজেদের মানসিক বাধা। আর এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারণে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাও দেখাতে পারে না টাইগাররা। 

যদিও টি-২০ বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে আফগানরা ঢের এগিয়ে। তারা ৭ নম্বরে, বাংলাদেশ ১০। কিন্তু টি-২০ এমন একটি ফরম্যাট যেখানে র‌্যাঙ্কিং কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সেখানে এক ওভার কিংবা এক বলেও ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেতে পারে।

হয়তো রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমানের মতো বিশ্বমানের স্পিনার আছে বলে আফগানদের এগিয়ে রাখা হয়। কিন্তু এটা তো ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশ দলে আছে সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্ব কাঁপানো অলরাউন্ডার। তার ওপর খেলাও ঘরের মাঠে। বাংলাদেশের মাটিতে যেখানে টাইগার স্পিনারদের খেলতে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরাও কাঁপে তা তো কারও অজানা নয়!

কিন্তু আফগান ব্যাটসম্যান কি জাদু জানে নাকি? হ্যাঁ, আফগান ব্যাটসম্যানদের কখনো কখনো ম্যাজিশিয়ান লাগে। তা না হলে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪০ রানে টপ অর্ডারের ৪ উইকেট হারানো দল কীভাবে শেষে ১৬৪ রানের বড় স্কোর গড়ে?

স্লগ ওভারে রান তোলায় যেন মাস্টার আফগান ব্যাটসম্যানরা। ঠিক এখানেই বড় দুর্বলতা টাইগারদের। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের কথা ভাবুন। একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের স্কোর দুইশ হতে পারে। কিন্তু স্লগ ওভারে পর্যাপ্ত ছক্কা-চার না মারতে পারায় ১৭৫ এ গিয়ে থামে স্বাগতিকরা।

তবে ওই ম্যাচে বোলিংয়ে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন অভিষিক্ত লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। দলও জয় পেয়েছে ৩৯ রানের বড় ব্যবধানে। তবে হাতে সেলাই লাগায় এই ম্যাচে লেগির খেলা অনিশ্চিত। ওই ম্যাচের আরেকটি প্রাপ্তি ছিল শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরা।

জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ওই জয় একদিকে যেমন বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে গেছে, তেমনি হারানো আত্মবিশ্বাসের অনেকটা ফিরিয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত দলটাই আজ আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, জিম্বাবুয়ে আগেই বিদায় নেওয়ায় এটি সিরিজের আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে রূপ নিলেও দুই দলের কেউ তা মনে করছে না।

দুই দলই চাচ্ছে জিতে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে নামতে। এই সিরিজে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচই জিতেছে। প্রথম ম্যাচে লড়াই হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে আফ্রিকান দেশটিকে কোনো সুযোগই দেননি সাকিবরা। তবে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। না ব্যাটিং ভালো হয়েছে, না ফিল্ডিং! দারুণভাবে শুরু করেও বোলিংয়ের শেষটা ছিল হ-য-ব-র-ল। কোনো বিভাগেই ভালো হয়নি। সংগীতের ভাষায় যাকে বলে সুর, তাল, লয়, ছন্দ হারিয়ে এলোমেলো-বাজে ফিউশন!

তবে সাগরিকায় মাঠে নামছে অন্য বাংলাদেশ! নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া এক দল। জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত টিম-টাইগার্স।

গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অনুশীলনে দলের প্রত্যয়ী ছবিই বলে দিচ্ছিল আর এলোমেলো-ফিউশন নয়,  আজ সুরের মূর্ছনা নিয়েই সাগরিকায় হাজির হচ্ছে টাইগাররা! ফাইনালের আগে আফগানদের হারিয়ে টেকনিক্যাল শোটাকে নিখুঁত করতে নিজেদের জান লড়িয়ে দিতে পিছপা হওয়ার নয় তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর