রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অবশেষে ভাঙল ঘুম!

আফগানদের বিরুদ্ধে স্পিন কৌশল যে ভুল ছিল তা কাল প্রমাণ করে দিলেন পেসাররা! দুই পেসার সাইফউদ্দিন ও শফিউলের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত।

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

অবশেষে ভাঙল ঘুম!

অবশেষে ঘুম ভাঙল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের! স্পিন আক্রমণ দিয়ে ‘স্পিন-শক্তিধর’ আফগানিস্তানকে  মোকাবিলা করার ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। গতকাল সাগরিকায় তিন পেসার নিয়ে  খেলতে নামে বাংলাদেশ (জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ছিল তিন পেসার)। মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সঙ্গে একাদশে তৃতীয় পেসার হিসেবে ছিলেন শফিউল ইসলাম। রণ কৌশল এই পরিবর্তনেই  যেন পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। আফগানিস্তানকে মাত্র ১৩৮ রানেই আটকে দেয় বাংলাদেশ।

আফগানিস্তান দল যে এই মুহূর্তে স্পিনে বিশ্বসেরা সেটা ক্রিকেট বিশ্বের কে না জানে! সব কিছু জানার পরও একমাত্র টেস্টে এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ‘স্পিন-স্বর্গ’ বানিয়ে স্পিনারদের নিয়ে খেলতে  নেমেছিল টাইগাররা।

অত্যন্ত সহজ বিষয়টি বুঝতে না পারার মাশুল গুণতে হয়েছে সাদা পোশাকে ‘নবীনতম’ দলটির বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়ে। লাল বলে আফগানদের বিরুদ্ধে ২২৪ রানের লজ্জার হারটিও যেন টিম ম্যানেজমেন্টের ঘুম ভাঙাতে পারেনি। তাই তো টি-২০তেও একই ভুল করে বসে। আবারও সেই স্পিন-আক্রমণ নিয়ে রণ কৌশল সাজায় স্বাগতিকরা।

যথারীতি ফল সেই একই-আবারও হার! পর দুই ম্যাচে আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্ট ও টি-২০তে হেরে সঙ্গী হয়ে যায় ‘মানসিক যন্ত্রণা’! পুরো দলটাই যেন এলোমেলো হয়ে যায়। ঘরের মাঠে যেখানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলও কাঁপে সেখানে আফগানরা উল্টো টাইগারদের ওপর ছড়ি ঘোড়াতে থাকেন।

আফগানদের বিরুদ্ধে স্পিন কৌশল যে ভুল ছিল তা কাল প্রমাণ করে দিলেন পেসাররা! দুই পেসার সাইফউদ্দিন ও শফিউলের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। প্রথম দুই ওভারে আফগানরা মাত্র ২ রান পায়। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে ফাইন লেগে শফিউলের বলে ক্যাচ মিস করে আফগানদের উজ্জীবিত করার কাজ যেন দায়িত্ব হিসেবে দেন সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ! ক্রিকেটে প্রচলিত প্রবাদ আছে,  ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ‘রসগোল্লা’র মতো সহজ ক্যাচ মিস যেন রীতিমতো অপরাধ!

এমনই টি-২০তে সুযোগ আসে খুব কম। আর সেই সুযোগ  হেলায় নষ্ট করা মানে বিপদকে আমন্ত্রণ জানানো। মাহমুদুল্লাহর উপহারে নতুন জীবন পাওয়া সেই গারবেজ পরে চড়াও হন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর। ১ রানে যার ড্রেসিংরুমে ফেরার কথা, শেষ পর্যন্ত তিনি দলীয় খাতায় যোগ করেন বাড়তি আরও ২৮টি রান।

তবে নিজের প্রথম ওভারে উইকেট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দ্বিতীয় ওভারে ছন্দ হারিয়ে ১৩ রান দেন শফিউল। যেখানে দলীয় ২ রানেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙার কথা, সেখানে হয়ে যায় ৭৫!

দুই ওপেনার যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, মনে হচ্ছিল সাগরিকায় রানের পাহাড় গড়তে যাচ্ছে আফগানরা। কিন্তু  কোনো বোলারকেই পাত্তা দিচ্ছিলেন না। মাত্র ৬.৪ বলেই তারা দলীয় হাফ সেঞ্চুরি করে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে  বোলিং করতে এসে আফগান ঝড়ের মুখে পড়ে যান মাহমুদুল্লাহও। তার করা ওই ওভারেই দিয়েছেন ১৬ রান।

টি-২০তে এমনিতেই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়  বোলারদের। সেখানে ব্যাটসম্যানকে উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগ দিলে কথাই নেই। দুই আফগান ওপেনার এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন যে সাকিব ও মুস্তাফিজকে অনায়াসে ছক্কা হাঁকান।

কোনো উপায়ন্তর না দেখে ইনিংসের দশম ওভারে সাকিব বল তুলে দেন পারটাইম বোলার আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতে। আরই বাজিমাত! তৃতীয় বলেই ভয়ঙ্কর আফগান ওপেনার হযরতুল্লাহ জাজাইকে ক্যাচ তুলে দিতে বাধ্য করেন। শট ফাইন লেগে মোটেও ভুল করেননি ফিল্ডার মুস্তাফিজ। পঞ্চম বলেই আফগান দূর্গে দ্বিতীয় আঘাত হানেন আফিফ। রানের খাতা খোলার আগেই আজগর আফগানকে ফিরিয়ে দেন।

বাইশগজে গিয়েই টাইগার বোলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন সাবেক এই আফগান অধিনায়ক। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে নাজমুল হোসেনের হাতে ধরা পড়েন।

শুরুতেই ক্যাচ মিসে মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ আবার ছন্দে ফেরান আফিফ।

তারপর ১১তম ওভারে মুস্তাফিজ গারবেজকে সাজঘরে পাঠিয়ে ম্যাচের লাগামই  টেনে ধরেন। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি আফগানরা।

তবে গতকাল টাইগাররা তিন পেসার নেওয়ার  বড় সুবিধাটা পেয়েছে স্লগ ওভারে। আগের ম্যাচে যেখানে  শেষের ৫ ওভারে বিনা উইকেটে আফগানিস্তান তুলে ছিল বিনা উইকেটে ৬৭ রান। সেখানে গতকাল শেষের ৫ ওভারে ৩১ রানের বেশি করতে পারেনি তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আফগানিস্তান : ২০ ওভারে ১৩৮/৭ (হজরতুল্লাহ ৪৭, আফিফ ২/৯, সাইফুদ্দিন ১/২৩, সাকিব ১/২৪, শফিউল ১/২৪)

বাংলাদেশ : ১৯ ওভারে ১৩৯/৬ (সাকিব ৭০*, মুশফিক ২৬, নাভিন উল হক ২/২০, রশিদ খান ২/২৭, মুজিব ১/১৯, করিম ১/৩১)

ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর