বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আরেক ব্যর্থ মিশন!

মেজবাহ্-উল-হক

আরেক ব্যর্থ মিশন!

বিশ্বকাপ থেকেই যেন হতাশা পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ দলের। শ্রীলঙ্কা সফরে হোয়াইটওয়াশ। তারপর ঘরের মাঠে ‘নবীনতম’ টেস্ট দল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র ম্যাচে বাজেভাবে হার। অবশেষে জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানকে নিয়ে গড়া ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজেও ব্যর্থতা দিয়েই মিশন শেষ হলো।

যদিও বৃষ্টির কারণে ফাইনাল ম্যাচ প- হওয়ায় সিরিজে বাংলাদেশ যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, কিন্তু খেলা মাঠে গড়ালেই যে টাইগার বাহিনী জিতত তা কেউ হলফ করে বলতে পারে না। বরং ফাইনালে ফেবারিট ছিল আফগানরাই।

তিন জাতির এই টুর্নামেন্টের ‘পোস্টমর্টেম’ করলে দেখা যায় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বিচারেও আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের তুলনায় পিছিয়ে টাইগাররা। ঘরের মাঠ, চেনা উইকেট, কন্ডিশনও মনের মতো তার পরও নিজেদের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিবরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- কোনো বিভাগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নজর কাড়তে পারেননি।

সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকায় বাংলাদেশের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের নাম থাকলেও সেরা-৩-এ নেই বাংলাদেশের আর কেউ। শীর্ষে রয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিদায়ী অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তিনি চার ম্যাচে ৩৩.২৫ গড়ে করেছেন ১৩৩ রান। আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজও ১৩৩ রান করেছেন। আরেক আফগান তারকা মোহাম্মদ নবীও ১৩০ রান করে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে।

বোলিংয়েও হতাশার চিত্র! সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে রয়েছেন কেবল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। চার ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। শীর্ষে থাকা আফগানিস্তানের তরুণ স্পিনার মুজিব উর রহমানের উইকেট সংখ্যাও ৭। এ ছাড়া উইকেট শিকারের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে জিম্বাবুয়ের পেসার এমপোফু। তিনি মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই নিয়েছেন ৬ উইকেট। আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানও ৬ উইকেট শিকার করেছেন। এ ছাড়া ৫ উইকেট নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছেন জিম্বাবুয়ের পেসার কাইল জার্ভিস।

যদিও ত্রিদেশীয় সিরিজে গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিই জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে টাইগারদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন কোচ। ক্রিকেটাররা নিজেরাও নিজেদের পারফরম্যান্সে হতাশ। ফাইনাল ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহর ভাষ্য, ‘সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে হতাশার জায়গাই বেশি ছিল। অনেক বেশি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারিনি। টেস্ট ম্যাচটি অবশ্যই হতাশাজনক ছিল। আমাদের আরও ভালো কিছু করার সামর্থ্য ছিল।’

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যেন হারতে হারতে জিতে যায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে লজ্জার হার। তবে চট্টগ্রামে গিয়ে পরের দুই ম্যাচেই জিতেছিল টাইগাররা। কিন্তু আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্ট ও প্রথম টি-২০-তে হারটা বাংলাদেশকে মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছিল। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার পর যখন নিজেদের মধ্যে কথা হলো, কোচও বললেন যে আমাদের শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পরে টি-২০-তেও আফগানদের কাছে হারার পর আমরা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলাম। তার পরও সবার ভিতরে স্পৃহা ছিল, যেটা পরে কাজে দিয়েছে। পরবর্তীতে এ ব্যাপারগুলো যেন আগে থেকেই কাজ করে, ভুল যাতে না করি, সেসব মাথায় রাখতে হবে।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি বোলারদের ব্যর্থতার জন্য। ব্যাটসম্যানরা রানের মধ্যেই ছিলেন। কিন্তু এরপর বোলারদের মতো ব্যাটসম্যানরাও যেন রান খরায় ভুগতে থাকেন। হতাশার কারণে তো আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্ট ও ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। অন্য যারা ছিলেন তারাও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন। এই সিরিজে ব্যাটসম্যানরা এমন কিছু বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন যা ছিল রীতিমতো দৃষ্টিকটু। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘অনেক সময় কোনো ব্যাটসম্যান রান খরায় থাকলে সেখান থেকে রান পেতে এত মরিয়া থাকে যে কোথায় ভুল হচ্ছে, সেদিকে মনোযোগ থাকে না।’ ঘরের মাঠে এ বছর আর কোনো সিরিজ না থাকলেও আগামী নভেম্বরে ভারতে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ওই সফরে দুই টেস্টের পাশাপাশি তিনটি টি-২০ ম্যাচ রয়েছে। শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে খেলার আগে নিজেদের আরও শানিত করার কথা বললেন মাহমুদুল্লাহ, ‘ভারতের বিপক্ষে আমাদের পরের সিরিজ। সেখানে সর্বোচ্চটা খেলতে হবে। অন্যথায় ওদের হারানো কঠিন হবে। এই সিরিজে আত্মবিশ্বাস কিছুটা ফিরে এসেছে। আশা করি পরের সিরিজে এটা ধরে রাখা যাবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর