শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঝুঁকিতে দেশের হকি

সেক্রেটারি যখন গডফাদার!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সেক্রেটারি যখন গডফাদার!

সচেতন ক্রীড়ামহল যখন চাচ্ছিল হকির নিবেদিতপ্রাণ আবদুস সাদেকই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হোন; সেখানে কিনা লোকমান প্রকাশ্যে সাইদকে সমর্থন জুগিয়েছেন। ক্রীড়ামোদীরা এখন আঁচ করতে পারছেন হকির কী সর্বনাশটা হয়ে গেল

চার বছর মেয়াদে নির্বাচনের মাধ্যমে হকি ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। অথচ চার মাস যেতে না যেতেই ঝুঁকিতে পড়ে গেছে হকি। জনপ্রিয় এ খেলা আগেও নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তা শুধু হকি নয় ক্রীড়াঙ্গনের জন্য আতঙ্কের সংবাদ। ক্রীড়া ফেডারেশন নিয়ে কম বেশি বিতর্কের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে কখনো অনৈতিক কাজের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। হকির অজানা লোক হয়েও মুমিনুল হক সাইদ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হবেন তা ছিল ধারণার বাইরে। তবে তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে এই পদে বসেছেন। এ নিয়ে কারও আপত্তি ওঠার কথা নয়। কিন্তু তার কর্মকান্ড নিয়েই যত প্রশ্ন।

কোনো জনপ্রিয় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক যখন ক্যাসিনো, জুয়া ও চাঁদাবাজির মতো ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যান তখন শুধু সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন নয় ক্রীড়াঙ্গনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক ও নারী ব্যবসা নিয়ে পুরো দেশই তোলপাড়। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোয় এসব ঘৃণিত কর্মকান্ড চলতো তা কেউ জানতেনই না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি চালানোর পর থেকে থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে। বেরিয়ে আসছে এ সবের সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের নাম।

অভিযুক্ত গডফাদারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মুমিনুল হক সাইদ। তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর, যুবলীগ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে তার পরিচয় হকির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭২ সাল থেকেই  তো বিভিন্ন ফেডারেশন গঠন হয়। কখনো অ্যাডহক বা নির্বাচিত কমিটির কোনো সাধারণ সম্পাদক এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়াননি। তাই হকি ফেডারেশনের সেক্রেটারি সাইদের নামটি চমকই বলা যায়। এ তো আর ষড়যন্ত্র নয়, র‌্যাব ও পুলিশের তথ্য থেকেই সাইদের নাম বের হয়ে এসেছে। গ্রেফতারে জন্য খোঁজা হচ্ছে তা মিডিয়াতেও প্রকাশ হচ্ছে।

মতিঝিলপাড়ায় ক্যাসিনো খোলার পেছনে বড় ইন্ধনদাতা হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকই। অধিকাংশ ক্লাবে ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাই মহল্লাবাসীরা সাইদকে ‘ক্যাসিনো’ সাইদ বলেই ডাকেন। এমনকি এলাকায় তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ সম্পাদকই যদি অনৈতিক কাজের গডফাদার হন তাহলে হকি ফেডারেশনের ইমেজ কি থাকে।

কমিটির ওপর ক্রীড়ামোদীরা আস্থায় বা রাখবে কী ভাবে। ক্যাসিনোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি মোল্লা কাওসার ও মোহামেডানের সদস্যসচিব লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এরা ক্যাসিনো থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। অথচ তাদের ক্লাব অন্ধকারে হাঁটছে। লোকমান বলেছেন, রাজনৈতিক চাপে তিনি ক্যাসিনোর জন্য রুম ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ যিনি ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোর অন্যতম উদ্যোক্তা সেই বিতর্কিত সাইদকে হকির নির্বাচনে কাউন্সিলরশিপ দেন। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় ক্লাবের ত্যাগী সংগঠক সাজেদ এ এ আদেলকে। যিনি ১০/১২ বছর ধরে নিজ অর্থে মোহামেডান হকি দল গঠন করতেন। শুধু তাই নয়, সচেতন ক্রীড়ামহল যখন চাচ্ছিল হকির নিবেদিতপ্রাণ আবদুস সাদেকই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হোন; সেখানে কিনা লোকমান প্রকাশ্যে সাইদকে সমর্থন জুগিয়েছেন। ক্রীড়ামোদীরা  এখন আঁচ করতে পারছেন হকির কী সর্বনাশটা হয়ে গেল। সাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে র‌্যাব, পুলিশ থেকে। অথচ হকি ফেডারেশনের প্যাডে সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ শিকদার স্বাক্ষর করে সাইদকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এমনকি তিনি এসব অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে হকি ফেডারেশন তো আর বেসরকারি বা কারও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়। এটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। একে তো সরকার পরিচালিত তারপর আবার র‌্যাব ও পুলিশ সংবাদপত্রে সাইদকে অভিযুক্ত করেছে। সেখানে তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে সাইদকে নির্দোষ দাবি করলেন কীভাবে? হকি ফেডারেশনের সভাপতি আবার সরকার মনোনীত বিমান বাহিনীর প্রধান।

রশিদ শিকদারের এমন  কাজে বিব্রত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের আরেক সহ-সভাপতি সাজেদ এ এ আদেল বলেন, ‘এমনিতে আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি, সেখানে হকি ফেডারেশনের প্যাড ব্যবহার করে রশিদ কীভাবে একজন অভিযুক্তকারীকে নির্দোষ দাবি করেন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর