সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আঁধারে আলো জ্বালালেন জীবনরা

রাশেদুর রহমান

আঁধারে আলো জ্বালালেন জীবনরা

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ানে ভুটানকে হেসেখেলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সহজ জয়ের ম্যাচে প্রথম গোলের নায়ক জীবনকে ঘিরে জামালদের উচ্ছ্বাস। ছবি- রোহেত রাজীব

অন্ধকার আকাশ। অন্ধকারে ঢাকা দেশের ক্রীড়াঙ্গনও। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনার ঝড় চারদিকে। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যেও তো প্রদীপ জ্বলে। আশার আলো দেখা যায়। সেই আশার আলো দেখা গেল গতকাল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ হারিয়ে দিল ভুটানকে। ৪-১ গোলের জয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য প্রস্তুতিটা ভালোই হলো বাংলাদেশের। আশির দশকে বাংলাদেশের কাছে ভুটান পাত্তাই পেত না। গোল বন্যায় ভাসিয়ে দিত। সেই ভুটানই কিনা এখন বাংলাদেশকে হারায়। গতকাল জামাল ও জীবনরা যে ম্যাজিক প্রদর্শন করেছে তাতে অতীতে সুখস্মৃতি চোখে ভেসে উঠছিল।

প্রবল বৃষ্টি। জোরালো হাওয়া। ম্যাচটা হবে তো? বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচ শুরুর বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় এসব আলোচনা চলছিল। তবে সন্ধ্যা নামার আগেই বৃষ্টির প্রকোপ কমে গেলে মাঠের পানি কমে ঝকঝকে সবুজ ঘাস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। অবশ্য ম্যাচ শুরু হওয়ার পর ছোপ ছোপ কাদায় মাখামাখি হয় পুরো মাঠ। সঙ্গে ফুটবলাররাও। বৃষ্টির দিনে ফুটবল যে সত্যিই মজার, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন বাংলাদেশ ও ভুটানের ফুটবলাররা। এর মধ্যেও অনেক আফসোস আছে। বল ঠিকমতো ড্রিবল করা যায় না। প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে বল নিয়ে ছুটে চলাও কঠিন কাজ। কিন্তু সেই কঠিন কাজটাই করলেন জামাল ভূঁইয়ারা। গতকাল ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের চেয়ে এগিয়ে থাকা ভুটানের রক্ষণভাগে ত্রাস তৈরি করলো বাংলাদেশ। জয় তুলে নিল ৪-১ ব্যবধানে।

ম্যাচটা কেবল শুরু হলো। দর্শকরা আড়মোড়া ভেঙে বসেছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও হাজারখানেক দর্শক এসেছিলেন গতকাল। ম্যাচ শুরুর পর খুব বেশি সময় লাগেনি দর্শকদের উৎসবে মেতে উঠতে। ম্যাচের নবম মিনিটেই দারুণ একটা সুযোগ আসে। সাদ উদ্দিনের ক্রসে ডি বক্সের ভিতরে বল পেয়েও গোল করতে পারেননি ইব্রাহিম। উফ! গোলটা হলো না! তবে দর্শকদের এই হতাশা কেটে যায় দ্রুতই। ১২ মিনিটে কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে দারুণ এক হেডে গোল করেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। উল্লাসে মেতে ওঠে দর্শকরা। এখানেই শেষ নয়। নাবিব নেওয়াজ জীবন ম্যাচের ৩৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করেন সাইড ভলিতে। এবারে এসিস্ট করেন ইব্রাহিম। প্রথমার্ধের খেলা শেষ ২-০ ব্যবধানেই।

দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে শুরুতে কিছুটা ছন্দ পতন হয় বাংলাদেশের। ভুটানের ১৮ নম্বর জার্সিধারী দরজি গোল করে ব্যবধান কমান ৫১ মিনিটে। কিছুটা হতাশ হলেও দর্শকদের মধ্যে দ্রুতই উৎসব ফিরিয়ে আনেন জামাল ভূঁইয়ারা। একের পর এক আক্রমণে ভুটানের রক্ষণভাগ পুরোপুরিই ভেঙে দেন জীবন-বিপলুরা। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে বিপলু আহমেদের গোলে ব্যবধান বাড়ায় বাংলাদেশ। সোহেল রানার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুটানের ডিফেন্ডার বল তুলে দেন বিপলুর পায়ে। এবার গোল করতে কোনো ভুল করেননি তিনি। ডান প্রান্ত থেকে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন বিপলু। ম্যাচের ৮১ মিনিটে রবিউল আরও একটি গোল করলে বড় জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। অবশ্য এরপরও বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন সাদ, জামাল, বিপলু, রবিউলরা।

বাংলাদেশ কেবল গোল হজম করেই অভ্যস্ত। জিতলেও এক দুই গোলের ব্যবধানে জয় পেয়েছে। ২০১৬ সালে শেষবার শ্রীলঙ্কার জালে ৪ গোল দিয়েছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। আরও একবার সেই সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনল তারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়টা ছিল ৪-২ গোলে। এবার ৪-১ গোলে। তাছাড়া ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব সামনে রেখে দারুণ এই জয়টা ভালোই কাজে দিবে জীবনদের। অবশ্য বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে আরও একবার নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারবে কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা। ভুটানের বিপক্ষেই আবার ৩ অক্টোবর খেলতে নামছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ জাতীয় দল ভুটানকে হারিয়ে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলার প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছে। তবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যুব দল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের শেষদিকে গোল হজম করে পরাজিত হয়েছে। আশা যেমন আছে, তেমনি ভয়ও আছে।

দিন কয়েক পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কাতার ও ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে বিপরীতমুখী দুই ফলাফল বাংলাদেশকে আরও সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিতই যেন দিয়ে গেল।

সর্বশেষ খবর