শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নায়ক যখন ডিফেন্ডার

ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল কাতার ও ভারত ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শেষ করা। সেই প্রস্তুতি কতটা হলো?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নায়ক যখন ডিফেন্ডার

গোল করার পর ডিফেন্ডার ইয়াসিন খানের উল্লাস

গুরুর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল শিষ্যরা। ভুটানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের কথা বলেছিলেন কোচ জেমি ডে। সে কথাই রইল। বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতল ২-০ গোলে। কিন্তু এর মধ্যেও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল। চোখে আঙ্গুল দিয়ে স্ট্রাইকারদের ছেলেমানুষি ভুলগুলো দেখিয়ে দিল ভুটানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটা। গোলবারের কয়েক গজ সামনে থেকেও গোল মিস হলো। দুর্দান্ত গতিতে ছুটে গিয়ে শেষটায় খেই হারিয়ে ফেললেন কেউ কেউ। নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়া ভালো থাকলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ছিল অভিজ্ঞতার অভাব। কিন্তু এসবের পাশাপাশি কিছু ভালো দিকও ছিল ম্যাচটায়। ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান গোল করেছেন। গোলরক্ষক শহিদুল আলম দারুণ কয়েকটা গোল সেভ করেছেন। যেগুলো গোল হতেও পারতো।

ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল, কাতার ও ভারত ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শেষ করা। সেই প্রস্তুতি কতটা হলো? ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কাতার ও ১৫ অক্টোবর কলকাতার সল্ট লেকে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সেই দুটি ম্যাচের জন্য কতোটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা এগিয়ে কাতার (৬২) ও ভারত (১০৪)। বাংলাদেশ ১৮৭ নম্বরে। গত কয়েক মাসে নিজেদের গোল করার যোগ্যতা যেমন দেখিয়েছে কাতার তেমনি দেখিয়েছে প্রতিপক্ষকে রুখে দেওয়ার শক্তিও। ল্যাটিন ফুটবলের অন্যতম শক্তি প্যারাগুয়ের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে কাতার। কলম্বিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারলেও নিজেদের ডিফেন্সের শক্তি দেখিয়েছে। আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে হারিয়ে আক্রমণভাগের ধারটাও প্রমাণ করেছে। অন্যদিকে এই কাতারকেই গোল শূন্য ড্রতে আটকে রেখেছিল ভারত। এমন দুই প্রতিপক্ষের জন্য কতোটা প্রস্তুত বাংলাদেশ। আগের ম্যাচটা খেলেছিল কাদায় মাখামাখি এক মাঠে। গতকাল মাঠ ছিল অনেকটাই শুকনো। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলারদের বল রিসিভিংয়ে যেমন সমস্যা ছিল তেমনি ড্রিবলিংয়েও। সতীর্থকে পাস দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছিল ইতস্তত ভাব।

ফুটবল গতির খেলা। শক্তিরও। কিন্তু এ দুটোর পর আরও কয়েকটা বিষয়ের দিকে খুব কড়া নজর দিতে হয়। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে। এসব যোগ্যতা অর্জনে এখনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে জামাল ভূঁইয়াদের। অবশ্য এতসব দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকার পরও বাংলাদেশের ফুটবলে পরিবর্তন লক্ষণীয়। এর মধ্যে গ্যালারিতে দর্শকদের সরব উপস্থিতির কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। কয়েক বছর আগেও দর্শক বলতে গ্রাউন্ড স্টাফ আর সাংবাদিকরাই উপস্থিত থাকত স্টেডিয়ামে। গতকাল কয়েক হাজার দর্শক প্রতি মুহূর্তে প্রিয় দলকে সমর্থন দিয়ে গেছে। ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকরা ‘স্ট্যান্ডিং ওভিশন’ দিয়ে সম্মান জানিয়েছে। গতকাল ভুটান দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে টক্কর দিয়েছে ভালোভাবেই। বাংলাদেশ অবশ্য ডিফেন্সের দিক দিয়ে সফল ছিল। ভুটানের আক্রমণগুলো ইয়াসিন খান, রায়হানরা ভালোভাবেই রুখে দিয়েছেন। এই ফাঁকফোঁকর গলে যে কয়টা শট গোলবারে গিয়েছে তা রুখে দিয়েছেন শহিদুল আলম। ম্যাচের শুরুতেই গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন বিপলু। কিন্তু তিনি ডি বক্সের ভিতর গোলরক্ষককে ফাঁকা পেয়েও গোল করতে পারেননি। অবশ্য গোল পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ম্যাচের ২২ মিনিটে রায়হানের থ্রো থেকে বল পেয়ে হেডে গোল করেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান। ৬৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইয়াসিনই। আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়রা সহজ সহজ সুযোগ নষ্ট করায় জয় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। সেখানে কিনা ডিফেন্ডার ইয়াসিন জোড়া গোল করে হয়ে গেলেন নায়ক। কিন্তু কাতারের বিপক্ষে এমন হলে চলবে কি?

২৮ মিনিটে ভুটানের ডাওয়া টেসরিংয়ের ডি বক্সের ভিতর থেকে নেওয়া শট লুফে নিয়ে গোলবার রক্ষা করেন শহিদুল আলম। ৫৫ মিনিটে থ্রো থেকে বল ডি বক্সে এলে জটলায় বল পেয়েও কয়েক গজ দূর থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন জীবন।

স্ট্রাইকারদের এসব ব্যর্থতার মধ্যে গতকাল সফল ছিলেন ইয়াসিন খান। তিনি ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটা করেন ৬৬ মিনিটে। এবারেও হেডে। এরপর মাহবুবুর রহমান সুফিল, জীবন আর বিপলুরা বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ হারান। তবে জয়ের ক্ষেত্রে ভুটান কোনো বাধা হয়ে উঠতে পারেনি আর।

ভুটানের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে বাড়িয়ে নেওয়া আত্মবিশ্বাস কতটা কাজে আসবে তা কেবল কাতার ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেই বুঝা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর