শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব

ভালো খেলেও আশাহত

রাশেদুর রহমান

ভালো খেলেও আশাহত

ছবি : রোহেত রাজীব

বাংলাদেশ

আশরাফুল ইসলাম রানা, রহমত মিয়া, ইয়াসিন খান, জামাল ভূঁইয়া, বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ নাবীব নেওয়াজ জীবন, সোহেল রানা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রিয়াদুল হাসান, রায়হান হাসান ও সাদ উদ্দিন।

কাতার

সাদ আলশিব, আবদেল করিম, আবদেল আজিজ হাতিম, আল হেইদোস, করিম বোদিয়াফ, মুসাব খিদির, আল হাজরি, বাসসাম হুসাম আল রাবি, বোয়ালেম খোখি, ইউসুফ ও আলি আবদুল্লাহ।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উত্তাল সমুদ্রের গর্জন। বাংলাদেশের ফুটবলাররা কাতারের গোলপোস্টমুখী আক্রমণে গেলেই গোলের দাবিতে গর্জে উঠছে দর্শকরা। আর কী দুরন্ত সব আক্রমণ। কাতারের আটোসাঁটো ডিফেন্স লাইনে অসংখ্য ফাঁকফোকর তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সেসব গলে একের পর এক গোলার মতো বল ছুটে যাচ্ছে গোলপোস্টের দিকে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। দর্শকদের মন জয় করলেও ম্যাচটা জিততে পারলেন না জামাল ভূঁইয়ারা। হেরে গেলেন ২-০ গোলে।

উফ্! গোলটা হলো না। ম্যাচের ৪৩ মিনিট। বাংলাদেশ সেরা সুযোগটা মিস করল। দুই দুইটা গোললাইন সেভ করে কাতার। ভাগ্য গুণে বেঁচে যায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। অবশ্য তারও আগে, বাংলাদেশের জালে গোল দিয়ে কাতার জয়ের পথ অনেকটাই পরিষ্কার করে নিয়েছিল। কিন্তু কাতারের জালে গোল দেওয়ার সুখস্মৃতিটা অর্জন করতে পারলেন না জীবন-ইব্রাহিমরা।

প্রতিপক্ষ এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতার। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ওপরে। কিন্তু তাতে কী! বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ খেলল মনের আনন্দে। কাতারের বিপক্ষে ড্র করলেও অনেক বড় অর্জন হবে। জিতলে তো কথাই নেই। আর হারলেও কিছু আসে যায় না। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাব্য ফলাফলের বাস্তব তত্ত¡টা জানা ছিল দর্শকদের। এ কারণেই ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও দর্শকদের উচ্ছ¡াস মোটেও কমেনি। এ কারণেই পিছিয়ে পড়েও নিজেদের খেলাটা খুব একটা পরিবর্তন করেনি কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা। প্রথমার্ধে হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে দ্বিতীয়ার্ধে অলআউট আক্রমণেই যান জামালরা।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল

সবার দৃষ্টি ছিল গত এশিয়ান কাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা আলমোয়েজের দিকে। বাংলাদেশও তাকে নিয়ে শুরুর দিকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা দেখিয়েছে। কিন্তু ১৮ নম্বর জার্সিধারী তরুণ ইউসুফ ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটে গোলটাও করেন তিনিই। ডি বক্সের ভিতরে জটলার মধ্য থেকে বল পেয়ে যান ইউসুফ। গোলরক্ষক রানা বাম দিকে লাফিয়েও বল রুখতে পারেননি। কিন্তু গতকালের ম্যাচে এই গোলের বিবরণ কেবল ছোট্ট একটা ঘটনা মাত্র। প্রথমার্ধে ৬টা দারুণ সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। অস্টম ও নবম মিনিটে বাংলাদেশ দুটি দুর্দান্ত আক্রমণ করে। প্রথমটি সাদ ডি বক্সের ডান প্রান্ত থেকে ক্রস দিলে জীবন বল পাওয়ার আগেই কাতারি ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে সেভ করেন। পরেরটা থ্রোতে বল পেয়ে হেডের সুযোগ পান ইয়াসিন। তিনি ব্যর্থ হলে বল পান জামাল ভূঁইয়া। তিনি দ্রুত গতির শট নিলেও তা গোলবারের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপরও প্রথমার্ধে সুযোগ পেয়েছিলেন ইব্রাহিম। আর ৪৩ মিনিটের সুযোগ হারানো তো রীতিমতো অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে! দ্বিতীয়ার্ধেও বাংলাদেশ অসাধারণ খেলেছে। অন্তত চারটা সুযোগ হারিয়েছেন জামালরা। বিশেষ করে ৭৪ মিনিটে জামাল ভূঁইয়া গোলপোস্ট অনেকটাই ফাঁকা পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। ৭১ মিনিটে ইয়াসিন, ৭৫ মিনিটে সুফিল এবং ৭৯ মিনিটে ইব্রাহিমও সুযোগ পেয়েছিলেন। দর্শকরা অবশ্য আশায় বুক বেঁধেছিলেন শেষ পর্যন্ত। ম্যাচের ইনজুরি মিনিটে করিম বোদিয়াফ গোল করলে বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে দর্শকরা ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ঠিকই হাততালি দিয়ে জামাল ভূঁইয়াদের অভিনন্দন জানান দুর্দান্ত একটা ম্যাচ উপহার দেওয়ার জন্য।

এ জয়ে এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে শীর্ষেই রইল ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার।

গতকালের ম্যাচে বাংলাদেশকে সমর্থন জোগাতে গ্যালারি ভরপুর ছিল দর্শকে। অনেকেই অতিরিক্ত দাম দিয়ে টিকিট কিনেছেন। আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন। টিকিট না পেয়ে আফসোস করেছেন স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে। ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্তেই দর্শকদের প্রবল উৎসাহ ছিল জামাল ভূঁইয়াদের অন্যতম সম্বল। কাতারের বিপক্ষে জয় না পেলেও দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ একটা বার্তা পেয়ে গেলেন জামালরা। ‘তোমরা ভালো খেল, আমরা কেবল মাঠেই আসব না জোর গলায় সমর্থনও দিব’। ভুটানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে জয়ের ফলে জামালদের ভালো ফুটবল খেলার ব্যাপারে এখন দারুণ আশাবাদী ফুটবল সমর্থকরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর