বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্রিকেটে সাকিব ফুটবলে জামাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রিকেটে সাকিব ফুটবলে জামাল

সাকিব আল হাসান শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেও আলোচিত নাম। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সত্যি বলতে কি ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয় নির্ভর করে অনেকটা সাকিবের পারফরম্যান্সের ওপর। জামাল ভূঁইয়া এখনো এত বড় তারকা হয়ে উঠেননি। তবে বাংলাদেশের ফুটবলে নির্ভরতার নাম জামালই। সত্তর ও আশি দশকে তো দেশে তারকা ফুটবলারের ঘাটতি ছিল না। এমনকি ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তারকা ফুটবলারের কমতি ছিল না। এরপর হঠাৎ করে শূন্যতা নেমে আসে। নির্ভর করার মতো ফুটবলারই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘরোয়া আসরে আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক থাকলেও জাতীয় দলের ছিল করুণ হাল। ১৬ বছর ধরে ফুটবলে জাতীয় দল কোনো শিরোপাই জিততে পারছে না। তারকা তো দূরের কথা দেশের হয়ে যারা খেলতেন তাদের অনেকের নামই ছিল অজানা।

এক সময় জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের নাম ছিল মুখস্ত। গত ১৫ বছর ধরে এতটা বেহাল দশা যে প্লেয়ার লিষ্টে জার্সি নম্বর ছাড়া ফুটবলারই চেনা যেত না। হারের বৃত্তেই বন্দী ছিল বাংলাদেশের ফুটবল। লাগাতার ব্যর্থতায় ক্রীড়াপ্রেমীরা ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলতেন ফুটবলে মৃত্যু ঘটেছে। আর কখনো জাগবে না। বড় কোনো টুর্নামেন্ট নয়, সামান্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মালদ্বীপের কাছে গোলের বন্যায় ভাসতো। এমনকি ভুটানও বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছিল। সবারই কথা এসব খেলোয়াড়দের দিয়ে হা-ডু-ডু খেলা যায়। ফুটবল চলে না।

কত ক্ষোভ, কত ধিক্কার। সেই ফুটবল বদলে যেতে শুরু করেছে। ফুটবলে প্রয়োজন ছিল যোগ্য নেতৃত্বের। যিনি মাঠে নিজেও খেলবেন সতীর্থদের খেলাতে পারবেন। সেই অধিনায়ক অনেক দিন পর খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সংশয় ছিল। সেই জামালই এখন ফুটবল নির্ভরতার প্রতীক। তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশের ফুটবল পাল্টাতে শুরু করেছে। সাকিব মাঠে থাকা মানে বাড়তি অনুপ্রেরণা পাওয়া। ফুটবলে এখন জামাল। শুধু জামাল নয়, গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, রায়হান, ইয়াসিন, রহমত, সুফিল, জীবন, বিপলু, সাদ, রবিউলরা যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করছে তাতে ফুটবল ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবল যে বদলে যাচ্ছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হতে পারে চলতি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। গ্রুপে বাংলাদেশ তিন ম্যাচে একটাও জয় পায়নি। তবুও মন জয় করেছে দর্শকদের। ঢাকায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের বিপক্ষে অনেকে ভেবেছিলেন দাঁড়াতেই পারবেন না জামালরা। ২-০ গোলে হারলেও পুরো সময় ধরে যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। যে ভারত ফুটবল উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে তাদেরকেও হতাশায় ভাসিয়েছে। সল্টলেক স্টেডিয়ামে সবকিছু মিলিয়ে ভারত ফেবারিট থাকলেও বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারত জয়ই করে নিয়েছিল। সাদ উদ্দিনের গোলে এগিয়ে থাকলেও ম্যাচ শেষের ২ মিনিট আগে গোল খেয়ে জেতা ম্যাচ ড্র করে। এ ড্রও গৌরব করার মতো। বাইচুং ভুটিয়াতো বাংলাদেশকে পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। তার কথা, বাংলাদেশ পাত্তাই পাবে না। ভুটিয়া বুঝল মুখে যা বলা যায় বাস্তবে তা কতটা কঠিন। ভারতীয় কোচ ইগরস্টিমাচ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের ফুটবলারদের।

সর্বশেষ খবর