রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বোর্ডে বঙ্গবন্ধুর খুনির শ্যালক

মেজবাহ্-উল-হক

বোর্ডে বঙ্গবন্ধুর খুনির শ্যালক

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রভাবশালী পরিচালকের মধ্যে একজন হানিফ ভূঁইয়া, আরেকজন সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম। দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে আছে গুরুতর অভিযোগ। হানিফ ভূঁইয়া হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর (বরখাস্ত) বজলুল হুদার আপন শ্যালক।

বিসিবি সহ-সভাপতি ও পরিচালক মাহবুব আনাম হচ্ছেন কক্সবাজারের কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা ফরিদ আহমেদের জামাতা এবং কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত বিএনপি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামান ও ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামানের ভগ্নিপতি।

বিসিবির আরেক পরিচালক ক্যাসিনো রাজা লোকমান হোসেন ভূঁইয়া এখন জেলহাজতে। বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ও মোহামেডান ক্লাবের প্রধান কর্তা লোকমান রিমান্ডে তার অপকর্মের কথা স্বীকারও করেছেন। এদিকে মাহবুব আনামকে দুদক থেকে তলব করা হয়েছিল। ২৪ জন পরিচালকের মধ্যে অন্তত আরও ৩-৪ বিএনপি-জামায়াতপন্থি পরিচালক রয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডে। বিতর্কিত এই পরিচালকরাই এখন বিসিবির হর্তাকর্তা। ঢাকা মোহামেডান ক্লাব থেকে কাউন্সিলর হয়ে বিসিবিতে নির্বাচন করেছেন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও মাহবুব আনাম। আর হানিফ ভূঁইয়া প্রথম বিভাগের ক্লাব র‌্যাপিড ফাউন্ডেশনের কর্ণধার। এই ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে তিনি বিসিবি নির্বাচন করেন। সেই সঙ্গে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান লিমিটেডের পরিচালকও আছেন তিনি। জানা গেছে, এরশাদ সরকার-পরবর্তী বিএনপির শাসনামলে সক্রিয় ফ্রীডম পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল হানিফ ভূঁইয়ার। হানিফ ভূঁইয়ার বড় বোন নাফিজা মরিয়ম হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের খুনি বজলুল হুদার স্ত্রী। তিনি হানিফ ভূঁইয়ার সঙ্গে একই সঙ্গে বসবাস করেন ধানমন্ডির রোড ৭/এ, বাসা ৬১ এই ঠিকানায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া বিপথগামী সেনা সদস্যদের অন্যতম বজলুল হুদা নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তৎকালীন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণপুরুষ, জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালকে। হুদার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন শেখ আবু নাসের। প্রশ্ন উঠেছে, সেই হানিফ ভূঁইয়া কীভাবে বিসিবির ক্ষমতায়?

সহ-সভাপতি মাহবুব আনামের শ্বশুর মাওলানা ফরিদ আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আমলে শ্রমমন্ত্রী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। মাওলানা ফরিদের নির্দেশনা অনুযায়ী পাক-হানাদার বাহিনী কক্সবাজারে নির্যাতন চালায়। কথিত আছে, সেই ক্ষোভেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে জনতা তাকে পিটুনি দেয় এবং তাতে তার মৃত্যু ঘটে।

পরবর্তীতে মাওলানা ফরিদের ছেলে অ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামান ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালে জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রীড়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

এরপর কক্সবাজারের ওই আসনে তার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান নির্বাচিত হন।

এই রাজাকার পরিবারের আত্মীয় হয়েও কীভাবে মাহবুব আনাম বহাল তবিয়তে আছেন, এটা এক রহস্য! এ বিষয়ে জানতে গতকাল মাহবুব আনামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি। কথা বলতে পারব না।’ বিএনপি আমলের বোর্ড সভাপতি আলী আসগর লবির আমল থেকেই এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আসছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি এই মাহবুব আনাম। এখনো তিনি বিসিবির গ্রাউন্স কমিটির চেয়ারম্যান। লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বিসিবির ফ্যাসিলিটিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আম্পায়ার্স বিভাগেরও ভাইস চেয়ারম্যান।

তবে হানিফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার কারণে তাকে বিসিবির কমিটি থেকে দূরে রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিচালক হিসেবে সব রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন হানিফ ভূঁইয়া। বিসিবির টাকায় বিদেশ ভ্রমণও করছেন। অনেকেরই কৌতূহল, ক্রিকেটপ্রেমী বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় থাকতে কীভাবে একজন বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয় ক্রিকেট বোর্ডে বহাল তবিয়তে থাকেন! গতকাল হানিফ ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার সেলফোন বন্ধ ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংগঠক বলেন, ‘কিছু পরিচালক আছেন, যারা সব সময় ক্ষমতায় থাকেন। সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের ক্ষমতা থেকেই যায়। তারা ক্ষমতায় থেকে একের পর এক বিতর্কিত কাজ করেন। এদের কারণেই ক্রিকেট কলঙ্কিত হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর