শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন চ্যাম্পিয়ন তেরেঙ্গানু

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

নতুন চ্যাম্পিয়ন তেরেঙ্গানু

দুই দলই পরস্পরকে যাচাই করে নেওয়ার নীতিতে খেলল প্রথমদিকে। আস্তিনে লুকিয়ে রাখা গোপন অস্ত্র কেউই বের করতে রাজি নয়। এ যেন শেষমুহূর্তে ম্যাজিক দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর কৌশল! প্রতিপক্ষকে পরখ করে নেওয়ার এই খেলায় জিতে গেল মালয়েশিয়ার ৬৩ বছরের পুরনো ক্লাব তেরেঙ্গানু। দ্রুত ম্যাচ বিশ্লেষণ করে নিল তারা। এরপর চট্টগ্রাম আবাহনীকে কোনো সুযোগই দিল না। পাঁচ মিনিটের ছোট্ট একটা ঝড়ে সবকিছু তছনছ করে দিল। দুই দুটি গোল করে মূলত ম্যাচটার উত্তেজনা অঙ্কুরেই শেষ করে দিল। এরপর চট্টগ্রাম আবাহনীর বিক্ষিপ্ত আক্রমণ আর লুকা রটকোভিচের গোল মিসের মহড়ায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি থেকে দর্শকদের আফসোসের শব্দই কেবল শোনা গেল। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতল তেরেঙ্গানু।

মানিক-এমিলি জুটি চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২০১৫ সালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা উপহার দিয়েছিল। এবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল মারুফ-জামাল জুটি। তবে তা আর পূরণ হলো না। মালয়েশিয়ান ক্লাব তেরেঙ্গানুর প্রবল আগ্রাসনের মুখে পিছিয়ে যেতে হলো তাদের। চট্টগ্রাম আবাহনীর এই ব্যথার দিনে দারুণ এক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে তেরেঙ্গানু। নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে এসেই চ্যাম্পিয়ন হলো দলটা। আর লি টাক কথা রাখলেন। তিনি টুর্নামেন্টের শুরুতেই বলেছিলেন, বাংলাদেশে আগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন (আবাহনীর জার্সিতে লিগে)। এবারও চ্যাম্পিয়ন হতে চান। লি টাক সত্যি চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাংলাদেশ ছাড়ছেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬ গোল) ও সেরা ফুটবলারের পুরস্কার।

চট্টগ্রাম আবাহনীকে পাঁচ মিনিটের এক ঝড়েই কুপোকাত করেছে তেরেঙ্গানু। ম্যাচের ১৪ মিনিটে লি টাকের কর্নার কিক থেকে অনেকটা লাফিয়ে নেওয়া হেডে গোল করেন হাকিম বিন মামাত। গোলরক্ষক নেহাল কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে বলটা জালে জড়াতে দেখেছেন। এরপর ১৯ মিনিটে জুয়াসিরাফের কোনাকুনি পাসে বল পেয়ে আজালিনুল্লাহ ডি বক্সের ভিতর ইকবল জনকে ‘বডি ডসে’ ফাঁকি দিয়ে গোলরক্ষক ও আরও একজন ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে মাটি গড়ানো শটে গোল করেন। এই গোলের পরই মূলত ম্যাচটা শেষ হয়ে যায়। তেরেঙ্গানু শিবিরে কোচ নাফুজিকে ঘিরে উল্লাসে মেতে ওঠে সাইড বেঞ্চে বসে থাকা ফুটবলার ও অফিশিয়ালরা।

মারুফ ঠিকই বুঝেছিলেন। তেরেঙ্গানু মাঝমাঠে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী। মাঝমাঠ থেকেই ওরা আগ্রাসী ফুটবল খেলে। খেলাটা নিজেদের অংশে কখনই হতে দেয় না। এর ওষুধ আছে বলেই দাবি করেছিলেন মারুফ। কিন্তু খেলার মাঠে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। তেরেঙ্গানুর আগ্রাসী ফুটবলের বিপরীতে কোনো জবাবই ছিল না চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে, অন্তত প্রথমার্ধে তো নয়ই।

দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে দুই মিনিটের মধ্যেই একটা গোল শোধ করে স্বাগতিকরা। ৪৭ মিনিটে চিনেদু ম্যাথুর কাটব্যাকে বল পেয়ে জোরালো শটে গোল করেন লুকা। মুহূর্তেই গর্জে ওঠে স্টেডিয়াম। লুকার অতীত অপরাধ ভুলে যান দর্শকরা। নতুন আশা বুক বাঁধে। কিন্তু সে আশার গুড়ে কেবল বালিই নিক্ষেপ করল তেরেঙ্গানু। ‘হতাশ্বাসের ধুলো’ নিয়েই বাড়ি ফিরলেন মাঠের ভিতরে-বাইরে থাকা অসংখ্য দর্শক। আর অতিথি হিসেবে আগত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ অন্যরা মিলে বিজয়ী দল তেরেঙ্গানুর হাতে তুলে দিলেন ট্রফি। আর সান্ত্বনার ফেয়ার প্লে ট্রফি পেল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী।

সর্বশেষ খবর