মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজকোট জয়ের অপেক্ষা

আসিফ ইকবাল

রাজকোট জয়ের অপেক্ষা

দিল্লিতে মুশফিকের ব্যাটই জবাব দিয়েছিল ভারতীয় বোলিং লাইনের বিপক্ষে। রাজকোটেও কি জ্বলে উঠবে তার ব্যাট! -এএফপি

রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলে দিল্লি জয় করেছেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা। দিল্লি ফোর্টে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে টাইগাররা এখন রাজকোটে। ভারতের ২৬তম বৃহত্তম শহরটি আবার বিশ্বের অন্যতম উন্নয়নশীল শহরও। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতায় ভারতের নবম শহরটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ঘাঁটি গেড়েছেন তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজের দ্বিতীয়টি খেলতে। ২৮ হাজার আসনের রাজকোটে জয় তুলে সিরিজ জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে চান মাহমুদুল্লাহরা। দিল্লি থেকে হাজার কিলোমিটার দূরের রাজকোটে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে ভারতের বিপক্ষে জয়ের কঠিন কাজটি করার প্রত্যাশা করেছেন তরুণ লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম। অবশ্য টাইগার ক্রিকেটারদের প্রত্যাশায় শেষ মুহূর্তে জল ঢেলে দিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মাহা’। আরব সাগরে উৎপত্তি ঘূর্ণিঝড়টি ৬ নভেম্বর গুজরাট উপকূলে আঘাত হানবে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস মেটোরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি)।

দিল্লিতে ভারতের পাশাপশি টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল বায়ুদূষণ। দমবন্ধ করা বায়ুদূষণকে জয় করে বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতকে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে হারায় বাংলাদেশ। টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের ‘নায়ক’ সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় দেশের ক্রিকেট যখন আকাশসম চাপে, তখন মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্বে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের ধীরলয়ে উইকেটে চোখধাঁধানো ব্যাটিং করে ভারতের বিপক্ষে টি-২০ ক্রিকেটে প্রথম জয় উপহার দেন মুশফিক। তিন বছর আগে বেঙ্গালুরুতে জয়ের মঞ্চ তৈরি করেও জিততে না পারার বেদনা এতদিন কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহকে। বেঙ্গালুরুর ওই ব্যর্থতাকে রবিবার দিল্লিতে কবর দিয়েছেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। তিন বছর আগে যে ভুল করেছিলেন দুই সিনিয়র ক্রিকেটার। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এবার সেই ভুল করেননি তারা। ৪২ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে রোহিত বাহিনীর চাপ সামলে দুজনেই ঠান্ডা মাথায় বাংলাদেশকে জয়োৎসবে ভাসিয়েছেন। বেঙ্গালুরুতে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করতে যেয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিলেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ। দিল্লিতে ছক্কা মেরে বাঘের গর্জনে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ। ম্যাচটিতে টাইগার অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে। অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলা মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৬০ রানে। ৪৩ বলের ঝড়ো ইনিংসে শুধু ১০টি চারই ছিল না, ছিল দেশের ক্রিকেটের বুক থেকে হাজারমনী পাহাড় নামিয়ে দেওয়ার বাস্তবতাও।

জুয়াড়ির ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব গোপন করার অভিযোগে সব ধরনের ক্রিকেটে এক বছর নিষিদ্ধ হন সাকিব। তার নিষেধাজ্ঞায় টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের ক্রিকেট। পরিবারকে সময় দিতে সফর থেকে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান তামিম ইকবাল। দুই সিনিয়রের পাশাপাশি তরুণ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের অনুপস্থিতিতে দলের শক্তি হ্রাস পায়। কিন্তু নাঈম শেখ, আমিনুল, আফিফ হোসেন ধ্রুব, শফিউল ইসলাম, আল আমিনরা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে দুরন্ত ক্রিকেট খেলে স্বাগতিক ভারতকে দুমড়ে-মুচড়ে দেন ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং-তিন বিভাগে। বিশেষ করে দুই স্পিনার আমিনুল ও আফিফ ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে আমিনুল লেগ স্পিনে মায়াজালে লোকেশ রাহুল ও আইয়াশ শ্রেয়ারকে সাজঘরে ফেরান। ৩ ওভারের স্পেলে রান দেন ২২। তবে মিতব্যয়ী ছিলেন আফিফ। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনের বিপক্ষে ৩ ওভারে রান দেন মাত্র ১১! দুই পেসার শফিউল ও আল আমিনও ছিলেন দুর্দান্ত। সাড়ে তিন বছর পর খেলতে নেমে আল-আমিন ৪ ওভারে ২৭ রান দিলেও সমীহ আদায় করে নেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। প্রথম ৩ ওভারে তিনি রান দিয়েছিলেন মাত্র ১৩। শফিউল নেন ৪ উইকেট।

মাহমুদুল্লাহ বাহিনী রবিবার খেলেছে ‘টিম বাংলাদেশ’ হয়ে। দুরন্ত বোলিং করা আমিনুল তাই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের টার্গেট ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা। রাজকোটের

ম্যাচ ভালো খেলতে পারলে আশা করি সিরিজ জিতব।’ ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার তাই স্বপ্ন দেখতেই পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর