শিরোনাম
বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজকোট ম্যাচে বৃষ্টির আশঙ্কা

পরীক্ষা এবার রান উৎসবের মাঠে

দিল্লিতে ম্যাচে হুমকি ছিল ‘ভয়াবহ’ বায়ুদূষণ। আর রাজকোটে ভয় সাইক্লোন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল সারা দিনই বৃষ্টি হওয়ার কথা রাজকোটে

মেজবাহ্-উল-হক

পরীক্ষা এবার রান উৎসবের মাঠে

মুশফিকুর রহিম

এক একটি জয় যেমন আনন্দের উপলক্ষ এনে দেয়, তেমনি হারেও কম যন্ত্রণা নয়! হয়তো সমর্থকের কাছে এই আনন্দ বা যন্ত্রণা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের কাছে এর রেশটা থাকে অনেক দিন! তবে জয়ে তারা যতটা আনন্দ পান, হারের বেদনা তার চেয়ে অনেক বেশি।

২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ‘বেদনাদায়ক’ সেই হারের পর নাকি তিন মাস ঠিকমতো ঘুমাতেই পারেননি মুশফিকুর রহিম। সম্প্রতি মিডিয়াকে একথা জানিয়েছেন, মুশফিকের বাবা মাহবুব হামিদ নিজেই। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীর সেই ম্যাচে মিস্টার ডিপেন্ডেবল ম্যাচটি খুবই ক্লোজ করেও শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি। মুশফিকের মতো ক্রিকেটার থাকার পরও শেষ ৩ বলে ২ রান নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

তবে এই কষ্ট এখন অতীত! দুদিন আগে দিল্লিতে মুশফিক যে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তার তুলনা হয় না। তার অনবদ্য ৬০ রানের হার না মানা ইনিংসেই দুর্দান্ত এক জয় পায় বাংলাদেশ। হয়তো এই জয়ের পর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছেন ব্যাটিং জিনিয়াস!

মুশফিকুর রহিমের সাহসী ব্যাটিং দেখে ভারতের গ্রেট ক্রিকেটাররাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভিভিএস লক্ষ্মণ তো মুশফিকের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন ভারতীয় তরুণ ক্রিকেটারদের।

শুধু এক মুশফিক নন, বাংলাদেশ দলের সব ক্রিকেটারদের মনবলই হয়তো এখন তুঙ্গে! সাকিব নেই, তামিম নেই, সাইফউদ্দিন নেই বলে দলে যে হাহাকার চলছিল তা আপাতত বন্ধ! ‘ক্রিকেট আন্দোলন’ নিয়ে বিসিবির সঙ্গে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের কারণে যে মনস্তাত্বিক বাধা তৈরি হয়েছিল এক জয়েই যেন সব সমস্যার সমাধান।

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের ‘প্রতীভা’ কিংবা ‘কৌশল’ নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও ‘সাহসিকতা’ নিয়ে সমস্যা ছিলÑএটা সত্য! সাকিব-তামিমের মতো নামকরা ক্রিকেটার একাদশে না থাকলে ক্রিকেটাররা যেন মাঠে নামার আগেই একবার হেরে যান! আর প্রতিপক্ষ দল যদি হয় ভারত; তাহলে তো কথাই নেই। মানসিক চাপেই ভেঙে পড়ে টাইগাররা। কিন্তু এ ম্যাচে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংÑসব বিভাগেই কী নিখুঁত পারফরম্যান্স! ক্রিকেটারদের শরীরীভাষায় ছিল আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি। মুশফিককে নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও মাঠে টাইগারদের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল দেখার মতো! সে কারণেই জয়টাও এসেছে দারুণভাবে।

আর দিল্লির জয় যেন বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এবার টাইগারদের সামনে হাজির আরেক চ্যালেঞ্জ। আগামীকাল রাজকোটে দ্বিতীয় ম্যাচ। খেলা হবে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামকে বলা হয় রান উৎসবের মাঠ। এ পর্যন্ত এই মাঠে দুটি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটিতে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে, আরেকটিতে তারা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে গেছে। তবে দুই ম্যাচেই যেন রান উৎসব হয়েছে।

২০১৩ সালের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ২০১ রান করেছিল, তারপর ২০২ রানের টার্গেট তাড়া করে জিতে যায় ভারত। ২০১৭ সালে আরেক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ১৯৬ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। তারপর স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ৪০ রানে জিতে যায় তারা। রাজকোটের উইকেট বরাবরই ব্যাটিং  স্বর্গ!

নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জন্যও ব্যাটিং প্যারাডাইসই বানিয়ে রেখেছে ভারত! তা ছাড়া সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে এমনিতেই চাপের মধ্যে আছে স্বাগতিকরা। আইপিএলে খেলা ‘টি-২০ স্পেশালিস্ট’ দলটি কিনা খর্ব শক্তির বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি! রাজকোটের এই ম্যাচে তাই ভারতীয়রা যে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দিল্লিতে ম্যাচে হুমকি ছিল ‘ভয়াবহ’ বায়ুদূষণ। আর রাজকোটে ভয় সাইক্লোন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল সারা দিনই বৃষ্টি হওয়ার কথা রাজকোটে। খেলা মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর এই ম্যাচ বৃষ্টিতে পন্ড হয়ে গেলে সিরিজ হারের শঙ্কা থাকবে না বাংলাদেশের। তখন শেষ ম্যাচে নাগপুরে হারলেও সমতায় শেষ হবে সিরিজ। আর টাইগাররা জিতলে তো সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস।

সর্বশেষ খবর