রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টাইগারদের ভয় ‘লোকাল বয়’

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের ভয় ‘লোকাল বয়’

রাজকোটে ভীষণ টেনশনে ছিলেন রোহিত শর্মা! এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে-! হারলেই সিরিজ শেষ। আর হারলেই যে ‘মহাভারত’ অশুদ্ধ হয়ে যাবে তা নয়। এই সিরিজটি যে তার জন্য হয়ে গেছে অনেকটা প্রেস্টিজ ইস্যু!

বিরাট কোহলির ভারত ওয়ানডেতে যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে দিল সেখানে রোহিত শর্মা যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পছন্দের ফরমেট টি-২০-তে সিরিজ হেরে যাবে-তা কী করে হয়!

আরেকটি কারণ হচ্ছে- রাজকোটে বাংলাদেশ জিতে গেলে নাগপুরের আজকের ম্যাচটি হয়ে যেত নিছক আনুষ্ঠানিকতার। যে নাগপুরে জন্ম সেখানেই দুয়ো ধ্বনি শুনতে হতো রোহিত শর্মাকে। আপাতত এখন অনেকটা স্বস্তি। রাজকোটের ম্যাচে রোহিতই রাজার ভূমিকায় ছিলেন। ৪৩ বলে ৮৫ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে দিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন। এখন দারুণ ফুরফুরে মেজাজে আছেন ভারতীয় দলপতি। বাংলাদেশের তরুণ ব্রিগেডও সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। প্রথম ম্যাচে তারা ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি সঞ্চয় করেছে। কীভাবে জিততে হয় তা জেনে গেছে। যদিও রাজকোটের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। তবে আজ দিল্লির জয়ের স্মৃতি মাথায় রেখেই খেলতে নামবে বাংলাদেশ।

টাইগারদের ভয় একটা জায়গাতেই- ‘লোকাল বয়’ রোহিত শর্মা! টি-২০-এর সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান। চারটি সেঞ্চুরি আছে। ১৮ অর্ধশতক। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও তিনি (২৫৩৭ রান)। তা ছাড়া আজ একটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে রোহিত। আর মাত্র দুটি ছক্কা হাঁকালেই প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলে (টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০) ৪০০ ছক্কা মারার রেকর্ড স্পর্শ করবেন। রোহিতের ছক্কা এখন ৩৯৮টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র দুজন ব্যাটসম্যানের চারশোর বেশি ছয় মারার রেকর্ড আছে। তাদের একজন হচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (৫৩৪ ছক্কা), আরেকজন পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি (৪৭৬ ছক্কা)। রোহিত হতে চলেছেন তালিকায় তৃতীয়। আজ জিততে হলে রোহিতকে শুরুতে আউট করার বিকল্প নেই!

নাগপুরে এর আগে খেলার কোনো অভিজ্ঞতা নেই বাংলাদেশের। অবশ্য বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিশন স্টেডিয়ামে ভারতীয় দলও খুব বেশি টি-২০ ম্যাচ খেলেনি। এ পর্যন্ত এই মাঠে মোট ১১টি টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছে ভারত। তাদের রেকর্ডও খুব ভালো নয়। দুই ম্যাচেই তারা হেরেছে। তবে সব শেষ ম্যাচে তারা জিতেছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেটিও ২০১৭ সালের ঘটনা।

নাগপুরের উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ নয়! এখানে অধিকাংশ ম্যাচই লো-স্কোরিং। ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই মাঠে মাত্র ৭৯ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। আবার এই মাঠে ২১৫ রানের স্কোরও আছে। তবে সেটা ২০০৯ সালে।

নাগপুরে বরাবরই আধিপত্য থাকে স্পিনারদের। এই স্টেডিয়ামে সেরা বোলিং ফিগারের তালিকায় থাকা ৫ বোলারের মধ্যে একজনও পেসার নেই। তারপরও আজ পেস আক্রমণে ভরসা করেই খেলতে নামছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

কারণ, সব শেষ অনুষ্ঠিত ম্যাচে ভারত ও ইংল্যান্ডের পেসাররাই দাপট দেখিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের পেসার ক্রিস জর্দার মাত্র ২২ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। ভারতের হয়ে জাসপ্রিত বুমরা ২০ রানে দুটি এবং নেহেরা ২৮ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

ভারতের এই দলে নেহেরা তো নেই-ই, বুমরাহও বিশ্রামে! তরুণ পেসাররাই রোহিতের ভরসা। আর মাহমুদুল্লাহর ভরসা মুস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন ও অভিজ্ঞ শফিউল ইসলাম। যদিও রাজকোটে তারা সুবিধা করতে পারেননি। তবে দিল্লির কথা স্মরণ করেই আজ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন। তবে বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্রো এখন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। দুই ম্যাচেই দারুণ বোলিং করেছেন। আজকের অঘোষিত ফাইনালেও মাহমুদুল্লাহর ‘ট্রাম কার্ড’ তিনি।

আক্ষরিক অর্থে লড়াইটা হবে ‘ভারতের ব্যাটসম্যান’ বনাম ‘বাংলাদেশের বোলারদের’ মধ্যে! ভারতের দুই ওপেনার শেখর ধাওয়ান ও ‘লোকাল বয়’ রোহিত শর্মাকে পাওয়ার প্লে-তে আটকে দিতে পারলেই জয়ের রাস্তা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে টাইগারদের। অন্যথায়- সিরিজ জয়ের ‘স্বপ্ন’ স্বপ্নই থেকে যাবে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর